স্বাধীনতা থেকে ১৯৫৯-এর খাদ্য আন্দোলন তিনি দেখেছেন। ১৯৭৭ সালে বামেদের বাংলার মসনদে বসার ঐতিহাসিক মুহূর্তেরও সাক্ষী থেকেছেন তিনি। সাক্ষী থেকেছেন ৩৪ বছরের বমেদের রাজত্বের। চোখের সামনে দেখেছেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামও। তারপর বাংলার মাটিতে পরিবর্তনের ১১ বছরের স্বাদও তিনি নিয়েছেন। একইসঙ্গে দেশের রাজনীতিতে ইউপিএ, এনডিএ সরকারকারের একাধিক কার্যক্রম, গুজরাট দাঙ্গা, মোদী-অমিত শাহ সরকারের দ্বিতীয় দফা সব কিছুই চোখের সামনে দেখেছেন। বর্তমানে তিনি করোনা যোদ্ধা। জীবন যুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্রি চট্টোপাধ্যায়। তবে তিনি এখনও ভরসা রাখছেন বামপন্থাতেই। এখনও বিশ্বাস করেন এই পরিস্থিতিতে বিকল্প বমাপন্থাই।
অসুস্থ হওয়ার আগে সিপিএমের প্রধান মুখপত্রের শারদ সংখ্যার হয়ে কলম ধরেছিলেন তিনি। মোদী-অমিত শাহদের কাঠগড়ায় তুলে স্পষ্টবার্তায় সৌসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন,'এখনও বিশ্বাস করি, বামপন্থাই বিকল্প'। মহামারীতে এত মানুষের মৃত্যু তারপরও রাম মন্দিরের শিলান্যাসে মানুষের উৎসাহ দেখে স্তম্ভিদ বর্ষীয়ান অভিনেতা লিখেছেন,‘ভাবলে অবাক লাগে, যাঁর আমলে ২০০২ সালে গুজরাতে ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হল, সেই তিনিই আজ ভারতবর্ষের মসনদে! ভারতবর্ষের মানুষ এঁদের সহ্য করছেন, তাঁদেরই ভোট দিয়ে আবার জেতাচ্ছেন। তার একটা বড় কারণ আমার মনে হয়, মানুষ শক্তিশালী কোনও বিকল্প পাচ্ছেন না বা বুঝে উঠতেই পারছেন না’। সৌমিত্রবাবুর মতে, ‘আমার বিশ্বাস, বিকল্প কেউ হতে পারলে বামপন্থীরাই হতে পারেন’। ধর্নের নামে রাজনীতি ও বিভাজনের রাজনীতি এ সবকিছু নিয়ে যে তিনি ব্যাথিত সেই কথাও পরিষ্কার জানিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়। তবে বামপন্থীদের দৃঢ়তার সঙ্গে মানুষের কাছে যাওয়ার ও তাদের মনে বিশ্বাস তৈরির বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠে তার। তবে তারপর ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। করোনা মুক্ত হলেও এখনও বিপদমুক্ত নন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। কিন্তু আবার নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। মাঝেমধ্যে শরীরে অক্সিজেনের তারতম্য ঘটছে। ওঠানামা করছে রক্তচাপ। প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। তবে এরই মধ্যে সিপিএমের প্রধান বাংলা মুখপত্রের শারদ-সংখ্যায় যে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।