পরিবহ, ঊষসীকে ধন্যবাদ, জীবন, সম্মান বিপন্ন করেও প্রশাসনের ঘুম ভাঙালেন তাঁরা

  • এনআরএস হাসপাতালে রোগীর পরিবারের হাতে নিগৃহীত হন পরিবহ মুখোপাধ্যায়
  • কলকাতার রাস্তায় হেনস্থার শিকার মডেল ঊষসী সেনগুপ্ত
  • দু'টি ঘটনাতেই প্রশ্নে পুলিশ- প্রশাসনের প্রাথমিক ভূমিকা
  • জোড়া ঘটনাতেও কি শিক্ষা নেবে প্রশাসন, উঠছে প্রশ্ন

debamoy ghosh | Published : Jun 20, 2019 4:24 AM IST / Updated: Jun 20 2019, 10:36 AM IST

যেটা হওয়া উচিত, সেটাই হচ্ছে। কিন্তু অনেক দেরিতে। আর প্রতিবারই যেন ঘুরিয়ে নাক ধরছে পুলিশ, প্রশাসন। গত দেড় সপ্তাহে শহরের বুকে দুটি ঘটনা সেই সত্যিটাই আরো একবার প্রতিষ্ঠিত করলো। এক কথায় বলা যায় ধাক্কা না খেলে যেন প্রশাসনের ঘুম ভাঙছে না!

আর তাই হাসপাতালে কাজ করার সময় চিকিৎসকদের নিরাপত্তার অভাব প্রমাণ করতে তরুণ চিকিৎসক  পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের প্রাণ সংশয় হতে হয়। মাঝ রাতে কলকাতার বুকে বিপদে পড়ে নামী মডেল ঊষসী সেনগুপ্ত এক থানা থেকে অন্য থানায় দৌড়ে বেড়ালে টনক নড়ে পুলিশ কর্তাদের!

আরও পড়ুন- বাচ্চা ছেলেরা ভুল করেছে, ঊষশীর কাছে কাতর আবেদন অভিযুক্তদের পরিবারের

কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা? হাসপাতালে চিকিৎসক মার খাওয়ার ভয় না পেয়ে নিশ্চিন্তে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন, বিপদের মুহূর্তে এলাকা না মেপে পুলিশ অফিসার বিপদে মানুষকে সাহায্য করবেন, স্বাভাবিক নিয়মে এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসনের কাজ করার পদ্ধতি দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিকটাই যেন ব্যতিক্রম। 

সরকারি কর্মপদ্ধতিতে স্থবিরতা, হচ্ছে- হবে মনোভাব হয়তো শুধু এরাজ্যের নয়, গোটা দেশেরই অসুখ। তা না হলে হয়তো উত্তর প্রদেশেও এভাবে এনচাফালিটিস আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যু মিছিল দেখতে হতো না। 

কিন্তু সেই স্থবিরতা এ রাজ্যে অন্তত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে এনআরএস কাণ্ডে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেও ঘুম ভাঙেনি এক শ্রেণির পুলিশ কর্মীর। অর্থাৎ অরাজকতা, অনিয়ম না হলে নিজেদের আসল দায়িত্বটুকুই বোধহয় এঁরা ভুলতে বসেন। 

ঊষসী সেনগুপ্তের অভিযোগ অনুযায়ী, একটি নয়, ঘটনার রাতে দু'টি থানার দুই পুলিশ অফিসার দায় ঝেড়ে ফেলতে তাঁকে অন্য থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার মানে সাধারণ মানুষের অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে দায় এড়ানোর এই রোগ সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগের যে সারবত্তা রয়েছে, ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে লালবাজারের কড়া পদক্ষেপেই তা প্রমাণিত। 

পরিবহ সাধারণ পরিবারের সন্তান, কিন্তু তার জন্য গোটা চিকিৎসক সমাজ একজোট হয়ে বেনজির প্রতিবাদে সরকারকে পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে। আবার ঊষসী বিখ্যাত মডেল, প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া। তাঁর ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হতেই লালবাজারের বড় কর্তারা ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমি, আপনি এমন বিপদে পড়লে কি সেই সুযোগ পাবে? 

পুলিশ, প্রশাসনের এই গয়ংগচ্ছ মনোভাব যে সরকারের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়, বিচক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর তা বুঝতে পেরেছেন। সেই কারণেই লাইভ সম্প্রচারের মধ্যে চিকিৎসকদের মুখে পুলিশ, প্রশাসনের কর্মপদ্ধতির সমালোচনা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন, প্রয়োজনে সবার সামনেই সরকারি কর্তাদের কড়া নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, মুখ্যমন্ত্রীর এমন কড়া মনোভাব দেখানোর পর চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ঊষসী সেনগুপ্তকে থানায় গিয়ে হয়রান হতে হল। হতেই পারে ওই সময়ের মধ্যেই রাজ্য আরও অসংখ্য থানা অগুণতি মানুষ একই ভাবে নাজেহাল হয়েছেন। 

দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে দু' বার পুলিশ- প্রশাসনকে ধাক্কা দিলেন পরিবহ এবং ঊষসী। একজনের জীবন, ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে বসেছিল, দ্বিতীয়জনের সম্মান। তাঁরা হয়তো এ রাজ্যের নাগরিকদেরই নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানির একটা প্রতিচ্ছবি প্রশাসনের সামনে তুলে ধরলেন। জোড়া ধাক্কাতেও ঘুম ভাঙে কিনা, সেটাই এখন দেখার। 
 

Share this article
click me!