২০০-এ পা, ফ্লোরন্স আজও স্বপ্ন দেখান সায়ন্তনীদের

সারা পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি এই শুভ্রা মণ্ডল, সায়ন্তনী সরকারদের অনুপ্রেরণা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। আজ তাঁর জন্মদিন।

arka deb | Published : May 11, 2019 12:33 PM IST / Updated: May 12 2019, 09:42 AM IST

সকাল ১০.০৫-এর ব্যারাকপুর লোকাল আসছে। অপেক্ষমান তিনি, ছটফট করছে। দেরি হলেই ১৩ নম্বর  বেডের অ্যান্টিবায়োটিক মিস হয়ে যাবে। ২১ নম্বরের পায়ের হাড়ে আলসার। অদ্ভুত রোগ। রোজ পরিষ্কার না করলে উঠে দাঁড়াতে পারবে না রোগী। এইসব সাতপাঁচ ভাবনা নিয়েই দাঁড়িয়ে শুভ্রা মণ্ডল, পিজি হাসপাতালের নার্স, ১৬ বছর চাকরি করছেন। ছুটিছাটা প্রায় নেই বললেই চলে। দিনের ডিউটি থাকলে ছয় ঘণ্টা আর রাতের ডিউটি ১২ ঘণ্টার, রোটেশানাল শিফট। হাসিমুখে করে যাচ্ছেন এই কাজ ক্লান্তি ছাড়া। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি এই শুভ্রা মণ্ডলদের অনুপ্রেরণা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। আজ তাঁর জন্মদিন।

কে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

১৮২০ সালের ১২ মে ফ্লোরেন্সর এক অভিজাত পরিবারে জন্ম নেয় একরত্তি মেয়ে। ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করায় সঙ্গে বাবার নাইটিঙ্গেল নামটি জুড়ে তার নাম হয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

অল্প বয়েসে বাবার সান্নিধ্যের কারণেই নানা বিদ্যা অর্জন করতে পেরেছিলেন ফ্লোরেন্স। সেই সময়ে গোটা ইউরোপেই নারীশিক্ষার তেমন চল ছিল না। সংখ্যাতত্ত্বে তার দখল ছিল।

ডার্বিশায়ার থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। সেই সময়ে লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না। কারণ সামাজিক ভাবেও মর্য়াদা দেওয়া হত না এই পেশাকে।  তবে নাইটিঙ্গেল জানতেন পৃথিবীতে তিনি এসেছেন সেবিকা হওয়ার জন্যই। বাবা মা বিরূপ হয়েছেন সময়ে সময়ে।  আশা ছাড়েননি ফ্লোরেন্স। অবশেষে বাবা-মায়ের অনুমতি মিললে তিনি ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে উড়াল দেন। নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। প্রায় ভিক্ষে করে জোগাড় করেছিলেন ৪৫ হাজার পাউন্ড।  লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং’। ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’।

১৮৫৩ সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বহু সৈনিক আহত হয়। সে সময় যুদ্ধাহতদের সেবায় ফ্লোরেন্স আত্মনিবেদন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

আহত সৈন্যদের সেবার মাধ্যমে নার্সিংকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। হ্যারিকেন নিয়ে রাতের আঁধারে তিনি ছুটে গেছেন আহতদের দ্বারে দ্বারে। এরপর থেকেই বিশ্ব তাকে ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ ডাকতে শুরু করে। যুদ্ধের পর ফ্লোরেন্স বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে লন্ডনে নিজের বাড়িতেই মারা যান ফ্লোরেন্স। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। 

আজকে তাঁর জন্মদিন, জন্মদিন রোজ

সারা পৃথিবীর সেবাধর্মে বিশ্বাসী মানুষেরা রোজ জন্মান। রোজ জীবনকে সেলিব্রেট করেন। আজও বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মদিন। লন্ডনের নাইটিঙ্গেল মিউডজিয়ামটিও সাজানো হয়েছে ঝকমারি ভাবে। হাসপাতালে হাসপাতালে চলছে সেলিব্রেশান। 

নাইটিঙ্গেল মিউজিয়ামে চলছে প্রদর্শনী

আজও জন্মায় ফ্লোরেন্সরা

সায়ন্তনী সররকার। ২৮ বছর বয়েস। নীলরতন সরকার হাসপাতালের সিসিইউ-এ নার্স। সাপ্তাহিক ছুটি পান, কিন্তু আর পাঁচটা সরকারী অফিসে যেমন পুজোপার্বনের ছুটি সেসবের বালাই নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট। অনায়াসে অন্য বিষয়ে অনেক দূর যেতে পারতেন। তবুও কেন এই পেশায় আসা? সায়ন্তনী হেসে সহজেই বলে দিলেন, সকলেই অন্য পেশায় গেলে এত হাজার হাজার অসুস্থ মানুষ, সেবা করবে কে?  কী পান এই পেশা থেকে?




সায়ন্তনীর মুখে আবার সেই সরল হাসি। বললেন এমনও হয়েছে, ডাক্তার নেই, একা কাজ করতে হচ্ছে। হার্ট অ্যাটাকের পেশেন্ট এসেছে। তড়িঘড়ি সিপিআর দিয়েছি, মনিটরে হার্টবিট ফিরে এসেছে। আর কী চাই! অনাথ শিশু যখন কোলে উঠে হেসে ফেলে পৃথিবীর আলো দেখে, তখন মনে হয় এই পেশায় আসা সার্থক।
 

Share this article
click me!