কখনও খাবার চুরি করে খাওয়া, কখন খাবারের মধ্যেই রক্তমাখা ব্যান্ডেজ। বারবার নানা কীর্তি করে মুখ পুড়িয়েছে জোমাটোর কর্মচারীরা। কিন্তু 'রোলকাকু'র কাহিনিটা অন্যরকম। সেটা জানতে গেলে চার বছর পিছিয়ে যেতে হবে।
'রোলকাকু' নামেরমানুষটি চারেক আগে মুখোমুখি হন এক রাস্তার বাচ্চার, যে ৪ বছর বয়সেই শিখে নিয়েছে নেশা করা। আর লোকের কাছে হাত পেতে ভিক্ষে করা। নেশা করার জন্য বাচ্চাটিকে ধমক দিলেও আসলে সেদিন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রুঢ় বাস্তব। বুঝতে পেরেছিলেন, কলকাতা শহরে খিদের জ্বালা ভুলে থাকতে বাবা মায়েরাই ছেলে মেয়েকে নেশা আর ভিক্ষের পথে নামিয়ে দিতে বাধ্য হন। সরকারি কর্মচারী এই ভদ্রলোক সেদিন ঠিক করে নেন, পথে নেমে কাজ করতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন কলকাতা কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি ছাড়া।
জমানো টাকায় শুরু হলো ছোট বাচ্চাদের জন্যে কাজ। তাঁদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা, জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু নিজের সংসারটা চলবে কী করে! তাই অনেক ভেবেচিন্তে জোম্যাটোর ডেলিভারি বয়ের চাকরি নেন এই ভদ্রলোক। এরপর চলতে থাকে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর কাজ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খাবার অর্ডার করে বাতিলও করে দেন। সেই অতিরিক্ত খাওয়ার দোকানদারদের ফেলে দিতেই হয়। এই বাতিল খাবারই 'টার্গেট' করেছিলেন রোল কাকু।
তারপর থেকে জোম্যাটোর গাড়ির হর্ন শুনলেই হাসি ফুটে উঠছে দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ছোট শিশুদের মুখে। তারা বুঝে যায়, এবার খাবার নিয়ে আসছে রোল কাকু। শুধু রোল চাউমিন নয়, প্রতি সপ্তাহে ছোটদের ভাত ডাল মাছেরও ব্যবস্থা হয়ে যায় বন্ধুবান্ধবের হাত ধরে। হয় পিকনিকও।
কী করে জোগাড় করেন এতজনের খাবার? প্রশ্ন শুনেই একগাল হাসি রোলকাকুর মুখে। বললেন, "জোটাতেই হয়, এই শহরের কাছে আমি ডেলিভারি বয়, ওদের কাছে দাদা।"
নিজের নাম বলতে চান না রোলকাকু। নতুন করে বাঁচতে শেখা ছোটরা বলেছে, রোলকাকুর ভাল নাম পথিকৃৎ সাহা।