
এক জোড়া ডেনিম প্যান্ট থাকলেই সাজে অন্য মাত্রা। সাদা শার্ট, রঙিন টপ কিংবা কুর্তি—সব কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে যায় এই পোশাক। তাই শতাধিক বছর পেরিয়েও ফ্যাশনের মঞ্চে ডেনিমের দাপট অটুট। ডেনিমের গল্প শুরু উনিশ শতকের আমেরিকায়। সোনার খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল, তুলোর প্যান্ট অতি দ্রুত ছিঁড়ে যায়। সেই সময় জার্মান বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী লিভাই স্ট্রস তৈরি করেন এক শক্তপোক্ত কাপড়ের প্যান্ট—যা পরতে আরামদায়ক, আবার দীর্ঘদিন টিকেও যায়। সেই থেকেই জন্ম নেয় বিখ্যাত Levi Strauss & Co।
প্রথমে খনিশ্রমিকদের পোশাক হলেও সময়ের সঙ্গে জিন্স প্রবেশ করে সাধারণ মানুষের জীবনে। পরবর্তীতে হলিউডের সিনেমায় কাউবয় চরিত্রের মাধ্যমে জিন্স নতুন পরিচয় পায়—স্বাধীনতা আর দুঃসাহসিকতার প্রতীক হিসেবে। বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে জিন্স আর কেবল শ্রমিকের পোশাক নয়; বরং তারুণ্যের প্রতীক। হলিউড তারকা জেমস ডিন কিংবা মার্লন ব্র্যান্ডোর স্টাইলে মুগ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্ম জিন্সকে নিজেদের ফ্যাশনের অংশ করে তোলে। এরপর ষাট–সত্তরের দশকে হিপ্পি আন্দোলন, আশি–নব্বইয়ে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের হাত ধরে জিন্স হয়ে ওঠে বৈশ্বিক ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আজকের দিনে ডেনিম সর্বজনীন। নারী–পুরুষ নির্বিশেষে, এমনকি কিশোর থেকে প্রবীণ পর্যন্ত—সবার পোশাকের সংগ্রহে আছে ডেনিম। শুধু জিন্স নয়, ডেনিম শার্ট, জ্যাকেট, ব্যাগ, এমনকি জুতোর ক্ষেত্রেও রয়েছে এটির প্রভাব। রিপড, হাই–ওয়েস্ট, বুটকাট, ব্যাগি—ডেনিমের প্রতিটি ধরনই বাজারে দাপট দেখাচ্ছে। পুজোর আগে কলকাতার বাজারে ডেনিমের বিক্রি আক্ষরিক অর্থেই হুড়োহুড়ি ফেলে দেয়।
নিউ মার্কেট থেকে গড়িয়াহাট, শপিং মল থেকে অনলাইন স্টোর—সবখানেই জিন্স কেনার ভিড় চোখে পড়ার মতো। এক তরুণ ক্রেতা বললেন, “একজোড়া জিন্স কিনলেই অন্তত দু’দিনের পুজোর আউটফিট ঠিক হয়ে যায়।” আরেকজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে জানালেন, “ডেনিম মানেই কমফোর্ট। যতই নতুন ট্রেন্ড আসুক, জিন্স ছাড়া পুজোর শপিং পূর্ণ হয় না।”
দোকানদাররাও মানছেন, পুজোর আগে ডেনিমের চাহিদা অন্য পোশাকের তুলনায় অনেক বেশি। গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী জানালেন, “প্রতিদিন ২০০–২৫০ জোড়া জিন্স বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চলছে স্কিনি ফিট আর রিপড স্টাইল।” অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও জিন্সের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। একশ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও ডেনিম আজও সমান জনপ্রিয়। যুগ পাল্টেছে, প্রজন্ম বদলেছে, কিন্তু ডেনিম জিন্সের রাজত্ব আজও অটুট—যেন ফ্যাশনের এক চিরকালীন সম্রাট।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।