ভারতে রামকে নিয়ে যে আবেগ রয়েছে সেখানে অক্ষয়ের রামসেতু নিয়ে চর্চা হবে না এমনটা আবার হয় নাকি। অক্ষয় কুমারের রামসেতুও তেমনই একটি ছবি। পুরো সিনেমাটিই রামচন্দ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়া নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ছবির নাম : রামসেতু
পরিচালক: অভিষেক শর্মা
অভিনেতা-অভিনেত্রী: অক্ষয় কুমার, নুসরত ভরুচা, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, সত্যদেব, জেনিফার পিচিনাটো,
রেটিং: ৩/৫
গল্প: অভিষেক শর্মা পরিচালিত ছবি রাম সেতু ছবিটি কমেডির মোড়কে ইতিহাসের গল্পকে তুলে ধরেছে। এই ছবির মধ্য দিয়েই সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক-রাজনৈতিক বিশ্বাসের উপর ভর করে বক্সঅফিসে লক্ষ্মীলভ করতে চেয়েছে। তবে তাতে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। মহাকাব্য রামায়ণ অক্ষয়ের এ ছবির ভিত।
অভিনয়: রামসেতু ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার,জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ,নুসরত ভরুচা। অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, কমেডির মোড়কে এই সিনেমা ইতিহাস ও পুরাণের মিলনের গল্পই বলেছে।
চিত্রনাট্য: ভারতে রামকে নিয়ে যে আবেগ রয়েছে সেখানে অক্ষয়ের রামসেতু নিয়ে চর্চা হবে না এমনটা আবার হয় নাকি। অক্ষয় কুমারের রামসেতুও তেমনই একটি ছবি। রামায়ণের কাহিনি অনুযায়ী স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে বানরসেনা নিয়ে লঙ্কায় গিয়েছিলেন রামচন্দ্র। সমুদ্র দিয়ে ঘেরা ছিল রাবণের সাম্রাজ্য। সেই সমুদ্র পার করতে নল ও নীলকে সেতু নির্মাণের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু রামসেতু-তে আদৌ সেই অস্তিত্ব রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব পায় প্রত্নতত্ত্ববিদ আরিয়ান কুলশ্রেষ্ঠ ওরফে অক্ষয় কুমার। তার বিশ্বাস রামায়ণ শুধুই কল্পকাহিনি। তবে গবেষণা করতে গিয়েই বিশ্বাস ভাঙে তার। এবং শুধু তাই নয়,রামের অস্তিত্বের প্রমাণ পায় সে। আর তাতেই বাড়ে বিপত্তি। কারণ দুষ্টুলোকেরা এই সত্যিটা প্রকাশ্যে আনতে চান না। তারপরই শুরু হয় মন্দের বিরুদ্ধে ভালর লড়াই। নিজের বক্তব্য প্রমাণ করতে দুঃসাহসিক অভিযানে বেরিয়ে পড়েন আরিয়ান। তার এই সফরে সঙ্গী হন সহকর্মী স্যান্ড্রা রেবেলো (জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ) এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গ দেন গাইড এপি (সত্যদেব)। যাকে আবার পরে হনুমান হিসেবে দেখানো হয়েছে। পুরো সিনেমাটিই রামচন্দ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়া নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
সিনেমাটোগ্রাফি: রামসেতু ছবিতে অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। যেমন অভিনেতাকে সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখা দিয়েছে, অবশ্য তাতে যুক্তি দিয়ে রামসেতুর অস্তিত্ব দেখিয়েছেন পরিচালক। যার ফলে খানিকটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। গোটা সিনেমাতেই অক্ষয় যেন নিজের চরিত্রের মাধ্যেম কোনও রাজনৈতিক দলের পোস্টারবয় হিসেবে কাজ করেছেন। অক্ষয়ই যেন ছবিতে রামচন্দ্র। পুরোপুরি ছকভাঙা লুকে ধরা দিয়েছেন অক্ষয় কুমার। একের পর এক ছবিতে অক্ষয়ের লুক একঘেয়ে লাগলেও এই ছবিটা অনেকটাই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেবে। অক্ষয়ের স্ত্রী ভূমিকায় দেখা গেছে নুসরত ভরুচাকে। বিশেষ কোন অভিনয়ের সুযোগ পান নি নুসরত। তবে জ্যাকলিন ছবিতে যথাযথ। তিনি না থাকলে ছবির গল্প তেমন পরিবর্তন হতো না। দক্ষিণী তারকা সত্যদেব নজর কেড়েছে। তবে অনেকটা তথ্যচিত্রের মতো মনে হলেও গ্রাফিক্সের কাজ নজর কেড়েছে দর্শকদের। এককথায় বলতে গেলে ছবিতে ম্যাজিকের গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে।
পরিচালনা: ছবির সবথেকে ইতিবাচক দিক হল ছবির সঙ্গেই রামের নাম জড়িয়ে রয়েছে। আর নেতিবাচক দিক হল ছবির গল্প। পরিচালক অভিষেক শর্মার ছবি নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। তবে ততটাই আশা পূরণ হয়নি। ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করা উচিত ছিল। ছবির মধ্যে অনেক বেশি তথ্য থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় সেই তথ্য ঠিকঠাক ব্যবহার হয়নি। যার ফলে গতি হারিয়েছে এই ছবি। তবে পরিবারের সকলের সঙ্গে এছবি দেখতে পারেন। ইতিহাসের মোড়কে মোড়া এই ছবি অনেকেরই ভাল লাগতে পারে।