সিনেমার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা! এই দুই সতর্কতা সত্ত্বেও যাঁরা হলমুখী হবেন, তাঁরা একেবারেই হতাশ হবেন না, তা হলফ করে বলতে পারি।
কাস্ট: রণবীর সিং, আর মাধবন, অক্ষয় খান্না, সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল, সারা অর্জুন, রাকেশ বেদী
গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা: আদিত্য ধর
রেটিং: ৪/৫
রিভিউ লেখার শুরুতেই একটা সতর্কীকরণ, যাঁরা মারামারি রক্তারক্তি দেখে অস্বস্তিতে পড়েন,তাঁরা সিনেমাটি দেখলে নিজের দায়িত্বে দেখবেন। দ্বিতীয় সতর্কীকরণ, যাঁরা ২ ঘণ্টা সময় নিয়ে সিনেমাটি দেখতে যাবেন তাঁরা বপদে পড়বেন। কারণ সিনেমার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা! এই দুই সতর্কতা সত্ত্বেও যাঁরা হলমুখী হবেন, তাঁরা একেবারেই হতাশ হবেন না, তা হলফ করে বলতে পারি।
প্রেক্ষাপট
একটা বিরাট প্রেক্ষাপটের উপর লেখা গল্প, তার বিন্যাস এবং তার বিস্তৃতি দেখাতে গেলে যে সময় লাগা দরকার তা নিয়ে কোনও কার্পণ্য করেননি কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক আদিত্য ধর। তাঁর আগের ছবি 'উরি' যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানবেন, আদিত্য ডিটেলিংয়ের উপর যথেষ্ট জোর দেন। এই সিনেমায় ডিটেলিং একটু বেশি। কারণ সিনেমার সময়কাল প্রায় এক দশকের বেশি। সেখানে ২০০১-এর বিমান হাইজ্যাক, সংসদ ভবন হামলা, ২৬/১১-এর মতো ঘৃণ্য সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার প্রভাব রয়েছে। তাই ডিটেলিং না থাকলে অনেকেই এ সমস্ত ঘটমার সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন না।
গল্প
এবার আসা যাক ছবির গল্পে। ছবির শুরুতে রণবীর সিংকে (হামজা) আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে যেতে দেখা যায়। করাচির কাছে ল্যায়রি শহরকে কেন্দ্র করেই ছবি এগোয়। সেখানে বাবু ডাকাত এবং রহমান ডাকাত বা রহমান বালোচ (অক্ষয় খান্না) দুটি মাফিয়া দলের প্রধান। এই দুই দলের মধ্যে নিত্য দিনের খুনখারাপি। এর মধ্যেই রহমানের বড় ছেলেকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে খুন করে বাবু-র দলের শুটাররা। হামজা আগে থেকেই এ ঘটনা ঘটবে তা জানত। ছেলেকে বাঁচানোর অছিলায় রহমানের দলের নিজেকে যুক্ত করতে পারবে সে। পাকিস্তানে ভারতের ডিপ অ্যাসেট হিসাবে বেঁচে থাকতে তা অত্যন্ত জরুরি। বড় ছেলেকে বাঁচাতে না পারলেও ছোটটিকে বাঁচিয়ে দলে ঢোকার রাস্তা পরিষ্কার করে সে।
দলের ঢোকা এবং সেখানে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করা, প্রভাবশালী বিধায়কের মেয়েকে (বিয়ে করা, সবই গল্পকে বুননকে আরও জমাট করেছে। কারণ গল্পের পরতে পরতে রোমাঞ্চ এবং সাসপেন্স ভরে আছে। এখানে সবটা প্রকাশ করা সম্ভাব্য দর্শকদের প্রতি অবিচার। শুধু এটুকু বলে রাখা প্রয়োজন, নকল নোটের উৎস, জঙ্গি কার্যকলাপে আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদত, এবং সেই মদতে স্থানীয় মাফিয়াদের ভূমিকা - সবই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এখানে আইএসআই-এর মেজর ইকবাল রূপে অর্জুন রামপাল বেশ ভালো। রাকেশ বেদী দুর্নীতিগ্রস্ত বিধায়কের ভূমিকায় যথাযথ। তাঁর এই চরিত্রটি দেখে একটা ভাবনা দর্শকদের মনে নিশ্চয়ই আসবে, রীজনীতিবিদ যেমনই হোক, স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে প্রায় সবাই এক গোত্রের। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যা যা করতে হয় করবে। তাতে মানুষের, আইনের, সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হলে তাদের কিস্যু যায় আসে না। এ সবের মধ্যে হামজা কীভাবে উপরে ওঠার সিড়ি তৈরি করে, আর সেই সিড়ির পাদানি হিসাবে কত লাশের উপর উঠে বসে তা দেখতে দেখতে সাড়ে তিন ঘণ্টা কখন কেটে যাবে টের পাবেন না।
অভিনয়
এবার আসা যাক অভিনয়ের কথায়। রণবীর চোখ দিয়ে অভিনয় করেছেন। তাঁর হিমশীতল দৃষ্টি, অবিচল দৃঢ় উপস্থিতি গোটা ছবি জুড়ে দর্শকদের মোহিত করবে। লম্বা চুলে তাঁকে যে বেশ মানায় তা তিনি এর আগে আলাউদ্দিন খিলজির ভূমিকায় অভিনয় করার সময় প্রমাণ করেছেন। প্রসঙ্গত, বলিউডে যে তিনজন অভিনেতাকে লম্বা চুলে বেশ মানায়, সেই তিন জনই (রণবীর সিং, সঞ্জয় দত্ত এবং অর্জুন রামপাল) এই ছবিতে রয়েছেন। তিন জনেরই অভিনয় বেশ ভালো। মাধবন অসাধারণ। খুব সামান্য সময়ের জন্য স্ক্রিনে থাকলেও তাঁকে ছাড়া সে সময় আর কাউকে চোখে পড়বে না। এরপর আসা যাক অক্ষয় খান্নার প্রসঙ্গে। আমার ব্যক্তিগত মত, বলিউডে যে ক'জন আন্ডার রেটেড অভিনেতা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অক্ষয় একেবারে উপরের সারিতে থাকবেন। মুখের প্রতিটি ভাঁজ, চোখ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ - সবই যেন কথা বলে। রহমান ডাকাতকে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছেন সিনেমায়।

ক্যামেরার কাজও সিনেমার একটি চরিত্র হিসাবে ধরতে পারেন। এত রক্তারক্তি এবং অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স এত ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন না যদি না ক্যামেরার কাজ দরের হয়। এ দিক থেকে দেখলে বিকাশ নওলাখা একেবারে ডিসটিঙ্কশন নিয়ে পাস করেছেন। তবে ছবির গান মনে রাখার মতো কিছু নয়। গানের তেমন প্রয়োজনও ছিল না।
পিকচার অভি বাকি হ্যায়
পিকচার অভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত... একেবারে শেষ দৃশ্যে ছবির সিক্যুয়েল ঘোষণা একপ্রকার করেই রেখেছেন আদিত্য। আর সে কারণেই দর্শক হিসাবে আপনার তর সইবে না। এ যেন, শেষ হয়ে হইল না শেষ। যাঁরা জটিল প্রেক্ষাপটের বাস্তবধর্মী ছবি দেখতে পছন্দ করেন এবং যাঁরা স্পাই থ্রিলারের ভক্ত, তাঁরা কোনও মতেই এই সিনেমা মিস করবেন না।


