ভালোবাসার কতরকম ভিত্তি হয়। কেউ বলবেন বিশুদ্ধ ভালোবাসা সেটাই যেখানে কাম-গন্ধ থাকে না। আবার অনেকে বলবেন প্রেমের পূর্ণতা শরীরে। এঁদের কাছে হৃদয়ের পরিপূর্ণ মিলন তখন-ই হয় যখন দুটি শরীর এক হয়ে যায়। ভালোবাসার এই তত্ত্বে কেউ প্ল্যাটোনিক মানে শরীরহীন ভালোবাসায় বিশ্বাসী। কেউ শরীরি মিলনে-রই জয়গান গান। ভালোবাসার এমনই এক কাহিনি নিয়ে হাজির হয়েছেন এক বৃদ্ধা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সেই কাহিনি সোচ্চারে প্রচারিতও হয়েছে। ৮০ পেরিয়ে নব্বই-এর ঘর লক্ষ্য করে ছুট মারা বয়সেও আজ সেই বৃদ্ধা স্মরণ করেন তাঁর সেই যৌনমিলনের দিনগুলিকে। এই বয়সেও তিনি অকপটে বলেন, 'হ্যাঁ, আমাদের সম্পর্কের পুরো ভিত্তিটাই ছিল শরীরকে ঘিরে। এই শরীরি ভালোবাসোর উদ্দামটা এতটাই ছিল যে ৮০-তে পৌঁছে আমরা যৌন মিলনে আবদ্ধ হয়েছি।'
এমন এক সাহসিনীর নাম-পরিচয় অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। তিনি নিজের আত্মকথা একটি ই-মেল করে ব্রিটেনের একটি সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন। যদিও, সেই সংবাদমাধ্যম বৃদ্ধার ই-মেল আইডিও প্রকাশ করেনি। এই কাহিনি তুলে ধরার একটাই কারণ, জীবন-এর মানেটা এখনও কারও-র কাছে অন্যকিছু। আমরা অধিকাংশ মানুষ-ই নিত্যজীবনের ব্যস্ততায় ভুলে যাই আমাদের সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তাকে। ভুলে যেতে চাই সেই ভালোবাসার মানুষগুলোকে যাদের সঙ্গে জুড়ে থাকে আমাদের আত্মা। এই বৃদ্ধার আত্মকথন একটি জিনিস পরিস্কার করে দিয়েছে যে তাঁর জীবনে ভালোবাসার মূল্য কতখানি।
বৃদ্ধা লিখেছেন এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, 'আমরা যখন একে অপরকে দেখেছিলাম তখন আমাদের মধ্যে একটা শরীরি ক্ষিদে জেগে উঠেছিল। একটা ভালোলাগার মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল। আমারা একে অপরের শরীরের সঙ্গে এক হতে চেয়েছিলাম। এমনটা নয় যে আমরা এর আগে কোনও সম্পর্কে জড়াইনি। বলতে গেলে আমাদের ভালোবাসার ভিত্তিটাই ছিল সেক্স। এই একটি জিনিসে আমরা একে অপরের কাছ থেকে কী পেয়েছিলাম জানি না, তবে দুজন দুজনের সঙ্গে মিলনের জন্য পাগল হয়ে যেতাম। শেষমেশ আমাদের ভালোবাসা এবং শরীরি ক্ষিদে আমাদের এক করে দেয়। ৩ বছর ধরে এই সম্পর্কে থাকার পর আমরা আমাদের পুরনো সঙ্গীদের ডিভোর্স দিয়ে দেই। এরপরে দু'জনে একসঙ্গে সংসার পাতি।'
এই অংশের পর এই বৃদ্ধা আরও এমন কিছু জানিয়েছেন, যা অনেকেই হাঁ- করে দিতে পারে। বৃদ্ধা লিখছেন, 'নতুন বিবাহিত জীবনে আমরা প্রতিটা মুহূর্তকে রাঙিয়ে তুলতাম উদ্দাম যৌনতা দিয়ে। আমরা একে অপরে পাগল করে তুলতাম যৌনতার আনন্দে। যেন একে অপরকে বোঝাতেই চাইতাম এছাড়া আমাদের জীবনে কিছু নেই। দিন থেকে রাত থামত না আমাদের এই যৌনক্ষিদে। উদ্দাম এক আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরতাম। একবার নয়, একটানা একাধিবার শারীরিক মিলনে-ও আমরা থামতাম না। এভাবেই আমরা আমাদের তরুণ বয়স থেকে মধ্যবয়স, সেখান থেকে প্রবীণ এবং আরও প্রবীণ হয়েছি। কিন্তু একটি দিনের জন্য থেমে থাকেনি আমাদের যৌন মিলন। আমার কখনই একে অপরকে ছেড়ে থাকতাম না। মনে হতে সময় নষ্ট হয়ে যাবে। ষাট বছরে পৌঁছে আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা নানা হাসি-ঠাঠ্ঠা করত। বলত আর ওইসব দিনের কথা ভেবে কী করবে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ওসবও চলে যায়। এসব কথা শুনে আমি এবং আমার স্বামী মুচকি মুচকি হাসতাম। তরুণ বয়সের ছিপছিপে শরীরে মেদ জমেছে, বয়সের ভারে শরীরের গতি মন্থর হয়েছে, তবুও আমরা থামিয়ে ফেলেনি আমাদের যৌনজীবন। ষাট পেরিয়ে পঁয়ষট্টি, সত্তর পেরিয়েছি, পঁচাত্তর পেরিয়ে আশি-তে পৌঁছেছি। তবু আমরা আমাদের বিছানার প্রতিটি মুহূর্তকে রঙিন করে গিয়েছি। শরীর যখন উদ্দামতার হাত ছেড়ে দিতে চেয়েছে তখন লুব্রিকেন্ট্রের সাহায্য নিয়েছি। এমনকী ব্লু-পিল নিয়ে আমরা সেক্স করেছি। এত ধরনের ওষুধ প্রয়োগে প্রথমেই যৌন আনন্দটা আসত না, কিন্তু একটু সময় পরে ওষুধ ম্যাজিক দেখাত। কিন্তু ৮০ বছরে পৌঁছে দেখলাম সত্যি আর শরীর চলছে না। কারণ, শরীর শুধু ভারী হওয়াই নয়, বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় শরীরের রেচন প্রক্রিয়াও ঠিক করে কাজ করছে না। সেক্সের জেরে এতে শরীরে বাড়তি চাপ পড়ছে। একদিন আমি এবং আমার স্বামী বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আপাতত এই খেলা থেকে অবসর নেওয়ার সময় এসেছে। এখন আমাদের জীবন কাটবে পুরনো দিনের সুখস্মৃতি দিয়ে। আমি এবং আমার স্বামী গ্রহণ করেছি এই জীবন। এখন অবসরে একে অপরের পাশে হাতে হাত ধরে বসে থাকি। পাশ দিয়ে কোনও তরুণ-তরুণী আমাদের উদ্দেশে টোন-টিটকিরি ছুঁড়ে দেয়, আমরা মনে মনে হাসি, আমরা যা বুড়ো বয়সেও চালিয়ে এসেছি, সেটা করে দেখিও-তবে বুঝব। আর কী! এটাই আমার কাহিনি।'