শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে দাঁ বাড়ি- রইল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কয়টি বনেদি বাড়ির পুজোর কথা

কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়িতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে শুরু করে রানি রাসমণির বাড়ি, প্রতিটি পুজোই ইতিহাসের সাক্ষী। এই বাড়িগুলির পুজোর রীতিনীতি, বিশেষত্ব ও ঐতিহ্য এখনও মানুষের মনে কৌতূহল জাগায়।

Sayanita Chakraborty | Published : Sep 26, 2024 2:12 PM IST / Updated: Sep 26 2024, 07:47 PM IST

আর কদিনের মধ্যেই মা আসছেন মর্ত্যে। আজ রইল কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর কথা। দেখে নিন এক ঝলকে। 

শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো

Latest Videos

ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা ভরপুর রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজদের জয় ঘোষিত হলে লর্ড ক্লাইভকে খুশি করতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই পুজোর প্রচলন করেন। এই বাড়ির প্রথম মালিক ছিলেন শোভারাম বসাক। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে বাড়ি কিনে নেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। তিনি নিজের মতো করে বাড়িটি সাজান। নাচঘর, দেওয়ানখানা, নৈশভোজখানা সাজান। ইংরেজরা শুধু নন। এই বাড়িতে আসতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী রামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, গান্ধীজীর মতো মানুষেরা। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের কোনও সন্তান ছিল না। তিনি তাঁর দাদার ছেলে গোপীমোহনকে দত্তক নেন। তারপর রাজার সপ্তম স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের জন্ম হয়। তিনি হলেন রাজকৃষ্ণ দেব। এরপর রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সম্পত্তি গোপীমোহন ও রাজকৃষ্ণ দেবের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।

চোরবাগান চ্যাটার্জি বাড়ি

কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম চোরবাগান চ্যাটার্জ্জী বাড়ি দুর্গাপুজো। চোরবাগান চ্যাটার্জ্জী বাড়িতে মা দুর্গাকে কন্যা রূপে পুজো করা হয়। তাই সপ্তমীতে দেবীর প্রতীকী নবপত্রিকাকে বাড়িতেই স্নান করানো হয়। ১৯৩৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত এই বনেদি বাড়ির সাবেক পুজোয় প্রচলন ছিল পাঁঠা বলির। এখন তার বদলে আখ বা চলকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। ১৮৬০ সালে রামচন্দ্র চ্যাটার্জ্জী শুরু করেছিলেন এই পুজো। এই বাড়ির পুজোর আরও এক বৈশিষ্ট্য হল এ বাড়িতে সমস্ত ভোগই পরিবারের পুরুষেরা রান্না করে থাকেন।

কৈলাস বোস স্ট্রীটের চ্যাটার্জি বাড়ি

আনুমানিক ৩০০ বছর ধরে মা দুর্গা পুজিত হচ্ছেন কৈলাস বোস স্ট্রীটের চ্যাটার্জ্জী বাড়িতে। এই বাড়ির বিশেষত্ব হল মাটির ঠাকুর দালান। বাড়ির প্রধান ঠাকুর দালানে মেঝে এখনও মাটির তৈরি। বৃহৎ নান্দীকেশ্বর মতে মা দুর্গা পুজিত হন এই বাড়িতে। সপ্তমীর ভোরে ঠাকুর দালানেই কলাবউ স্নানের রীতি প্রচলিত এখানে। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর সঙ্গে একজন সধবাকেও পুজো করার রীতি এখানে বর্তমান ।

রানি রাসমণির বাড়ির পুজো

যানবাজারে অবস্থিত রানি রাসমণির বাড়ি। সেখানে এখনও প্রতি বছর সাড়ম্বরে পুজিত হন মা দুর্গা। রানি রাসমণির শ্বশুরমশাইয়ের আমলে পাঁচ খিলানে দুই দালান বিশিষ্ট আভিজাত্যের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা এই বাড়ির পুজোয় রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দাস-র মৃত্যুর পর রানী রাসমণি এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে মায়ের গায়ের রঙ শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের। সুদূর বীরভূম থেকে শিল্পী এনে মূর্তি তৈরি করা হয় এখানে। এখানে দেবীর দেব অলংকৃত সোলার সাজ আসে বর্ধমান থেকে। সাজ ও পুরানরীতি মেনে ঠাকুরদালানে মহিলারা প্রতিমার বাঁদিকে এবং পুরুষের জান দিকে দাঁড়ান। রানি রাসমনির আমলে যাত্রা এবং কবিগান অনুষ্ঠিত হত। তখন সেই সময়ের বিখ্যাত কবিগান শিল্পী ভোলাময়রা এবং এন্টনি ফিরিঙ্গি এই আসরে আসতেন। বাড়ির প্রবীনদের কাছ থেকে জানা যায়, একবার এই বাড়িতে সখীবেশে চামড় দুলিয়ে একজন প্রতিমাকে বাতাস করছিলেন। রানীমার জামাতা মথুর মোহন তাঁকে চিনতে না পেরে তাঁর স্ত্রী জগদম্বাকে জিজ্ঞেস করে। জানতে পারেন তিনি আর কেউ নন, তিনি ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব। যিনি প্রায়শই এই পুজোতে থাকতেন। মধ্য কলকাতার জানবাজারে ১৩ নম্বর রানী রাসমনি রোডে এই বাড়িটি অবস্থিত।

মিত্র পরিবারের দুর্গাপুজো

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা আদিসুর কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাক্ষ্মণ ও পাঁচজন কায়স্থকে নিয়ে আসেন। সেই পাঁচ জনের মধ্যে একজন ছিলেন এই বংশের আদিপুরুষ। যাঁর নাম কালিদাস মিত্র। তাঁরই সপ্তদশ প্রজন্ম নরসিংহ মিত্র করগোবিন্দপুর থেকে এসে জঙ্গল কেটে ভবানীপুরে বসতি স্থাপন করেন। ১৮৯২ সালে এই পরিবারের এক সদস্য সুভাষচন্দ্র মিত্র ১৩ নম্বর পদ্মপুকুর রোডে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। তারপর তিনি এই দুর্গাপুজোর প্রথম প্রচলন করেন। শোনা যায়, মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু হয়েছিল। পারিবারিক রীতি অনুসারে এখানে কাঠামো বিসর্জন হয় না। প্রতিবছর একই কাঠামোতে দেবী প্রতিমা নির্মিত হয়। মায়ের বাহন সিংহের আকৃতি পৌরাণিক ঘোটকের মতো। কন্যারূপে দেবীকে পুজো করা হয় এখানে। তেমনই ঠাকুর দালানে নবপত্রিকা স্নান করানো হয় এখানে। এখানে মা সরস্বতী ও মা লক্ষ্মীর কোনও বাহন থাকে না। আগে প্রতিপদে দেবী বোধন হত এখানে। তবে, এখন পঞ্চমীতেই দেবীর বোধন হয়। এখানে কুমারী পুজোর সঙ্গে সধবা পুজো ও দশমীতে অপরাজিতা পুজোর রীতি প্রচলিত আছে।

দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজো

আরও এক অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হল দাঁ বাড়ির পুজো। ১৮৫৯ সালের নরসিংহচন্দ্র দাঁ এই বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। নিয়ম, নিষ্ঠার সঙ্গে আজও এখানে পুজিত হচ্ছেন মা দুর্গা। শোনা যায়, এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়ার হয় এই পুজোয়। দেবীক কনকাঞ্জলির প্রথা আজও বর্তমান আছে। এই বাড়িতে দেবী বৈষ্ণব মতে কন্যারূপে পুজিত হন।

 

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'আগামী ১৫ মাস ওনাকে ঘুমাতে দেবো না, যা পাপ করেছে ও ধ্বংস হবেই' আরও বড় হুঁশিয়ারি Suvendu Adhikari-র
বাড়ি থেকে বেরোতে হচ্ছে লাঠি নিয়ে! শিয়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা | North 24 Parganas News
Suvendu Adhikari | 'মাননীয়া আপনি পালাতে পারবেন না' ভরা সভায় মমতাকে হুঙ্কার দিলেন শুভেন্দু
আবারও থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সরব জুনিয়ার ডাক্তাররা, দেখুন কী বললেন তাঁরা | RG Kar Junior Doctors
গঙ্গাজল দিয়ে থানার শুদ্ধিকরণ! পুলিশের ব্যর্থতায় সরব বিজেপি নেত্রী রূপা গাঙ্গুলি | RG Kar Protest