স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের কলমে: আইপিএল ২০২৫ এর পয়েন্ট টেবিল প্রায় প্রতিদিনই বদলাচ্ছে। চূড়ান্ত চারটি দল কারা হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে নকআউট অর্থাৎ প্লেঅফে কারা শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নেবে সেই বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দুর্দান্ত ফর্মে আছে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছন্দ ফিরে পেয়েছে, গুজরাত টাইটান্স বরাবরের মতই শক্তিশালী এবং দিল্লী ক্যাপিটালস ও পাঞ্জাব কিংসও ভালো খেলছে।
যার ফলে প্লেঅফে জায়গা করে নেওয়ার জন্য নকআউট রাউন্ড পর্যন্ত বাকি ম্যাচগুলোয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাবে এই দলগুলোর মধ্যে।
Parimatch Sports Analyst Sir Vivian Richards বলছেন, এই আইপিএলের ৪৮ নম্বর ম্যাচের পর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, যারা এই মরশুমে সব বিভাগেই অসাধারণ খেলছে। তারা যখন আক্রমণ করছে তখন যেন মাঠে আগুন ঝরাচ্ছে, আবার কঠিন পরিস্থিতিতে অসাধারণ রক্ষণাত্মক খেলতে দেখা যাচ্ছে বেঙ্গালুরুকে। যা তাদের দলে প্রতিভার সঠিক সংমিশ্রণের সাক্ষ্যদান করে।
যে দলেই খেলুন না কেন ড্রেসিংরুমে বিরাট কোহলির উপস্থিতি এবং মিডিল ওর্ডারে তাঁর ব্যাটিং দলকে অতিরিক্ত সুবিধা করে দেয়। ফিল সল্ট এবং টিম ডেভিডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আরসিবি'কে ভালো জায়গায় রেখেছে। তাঁদের যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান দেবদত্ত পাডিক্কাল ও রজত পাতিদার।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলা কখনই সহজ নয়, তার উপর এবার পিচ ধীর গতির হওয়ায় আরসিবি'কে তাদের পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে। হঠাৎ পরিকল্পনা বদল করাটা সহজ ছিল না। কিন্তু বল হাতে জশ হ্যাজলউডের অসাধারণ পারফর্মেন্স দলের পক্ষে কাজটা সহজ করে দিয়েছে।
তাদের সঙ্গে এই লড়াইয়ে আছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। যারা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতে লিগ টেবিলের নয় নম্বর স্থান থেকে উঠে এসেছে, যেখানে মনে হচ্ছিল তাদের মরশুম বুঝি এবার আগেই শেষ হয়ে যাবে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ হল তাদের প্রাক্তন অধিনায়ক রোহিত শর্মার ফর্মে ফিরে আসা। চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পরপর সেঞ্চুরি করেছেন। সূর্যকুমার যাদব ও তিলক বর্মাও ভালো ফর্মে আছেন।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের টিম ব্যালেন্স দুর্দান্ত। দলে কোনও দুর্বলতা নেই। জসপ্রিত বুমরা, ট্রেন্ট বোল্ট, দীপক চাহারকে নিয়ে গড়ে ওঠা তাদের পেস বোলিং রীতিমত ভয়ঙ্কর। অন্যদিকে উইল জ্যাকস, করণ শর্মা ও মিচেল স্যান্টনাররা স্পিন বোলিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
হার্দিক পান্ডিয়া দায়িত্বের সঙ্গে অলরাউন্ডার ও অধিনায়কের ভূমিকা পালন করছেন। ফলে দল ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে।
গুজরাট টাইটান্স এই আইপিএলের একটি শক্তিশালী দল। এখানে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সঠিক মেলবন্ধন ঘটেছে, যা তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে।
২০২২ সালের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সে এবার টপ অর্ডারে দুই তরুণ ভারতীয় ব্যাটার বি সাই সুদর্শন ও শুভমন গিল ধারাবাহিকভাবে প্রচুর রান করছেন। পাশাপাশি মিডিল অর্ডারে অভিজ্ঞ জস বাটলারও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে চলেছেন।
বিশেষ করে কয়েকদিন আগে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচে ১৪ বছর বয়সী বিস্ময় কিশোর বৈভব সূর্যবংশী যেভাবে তাদের বোলিংকে তছনছ করে দিয়েছিলেন তাতে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তার আছে। জিটি'এর বোলিং আক্রমণ টেস্ট বোলার ইশান্ত শর্মা ছাড়াও মহম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণা, রশিদ খান, করিম জান্নাতদের নিয়ে সমৃদ্ধ হলেও বৈভব সূর্যবংশী দেখিয়ে দিয়েছেন, সঠিক অভিপ্রায় নিয়ে গুজরাটের বোলিংকে আক্রমণ করলে তাদের পরাজিত করা সম্ভব।
তবে সবমিলিয়ে, গুজরাট টাইটান্সকে নিয়ে বড়সড় চিন্তার কিছু নেই। ভারতীয় দলের সহ অধিনায়ক শুভমন গিল এবং প্রাক্তন ভারতীয় বোলার আশিস নেহেরার নেতৃত্বে গুজরাট একটি দল হিসাবে দুর্দান্ত খেলছে। তাদের একটা সহজ সরল খেলার দর্শন আছে যা সত্যিই দারুন কাজ করছে এবং প্লেঅফের দৌড়ে গুজরাট বাকিদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
দিল্লি ক্যাপিটালসও এই আইপিএলের অন্যতম শক্তিশালী দল। কিন্তু তারা ফর্ম হারিয়ে শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। না হলে দিল্লি ক্যাপিটালসে ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে একগুচ্ছ দুর্দান্ত ক্রিকেটার আছে। তবে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে অক্ষর প্যাটেলের নেতৃত্বে তাদের ফর্ম ফিরে পেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তারা নয় ম্যাচে পাঁচটি জয় পেয়েছে এবং প্লে-অফের অন্যতম দাবিদার।ভারতের ভরসা শ্রেয়াস আয়ার, প্রভসিমরন সিং, প্রিয়াংশ আর্যদের নিয়ে দুর্দান্ত বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপ পাঞ্জাব কিংসের। কিন্তু আইপিএল জিততে হলে তাদের অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডারদ্বয় গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মার্কাস স্টোইনিসকে ভালো খেলতে হবে, যা চলতি আইপিএলে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।
না হলে এমনিতে পাঞ্জাব কিংসের বোলিং বিভাগে তেমন বড় কোনও সমস্যা নেই।
পরিস্থিতির বিচারে আরসিবি, এমআই, জিটি, ডিসি ও পিবিকেএস- এই পাঁচটা দলের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত চারটি দল নির্ধারণ হওয়া উচিত। এর মধ্যে একটি দল লড়াই থেকে ছিটকে যাবে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।