ফিরে দেখা ক্রিকেটের ইতিহাসে আম্পায়ারদের ১০টি অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
শনিবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের চতুর্থ দিন শুবমান গিলের আউট নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় বিতর্ক চলছে। অনেকেরই দাবি, শুবমানকে অন্যায়ভাবে আউট দেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আম্পায়াররা।
বারবার মুথাইয়া মুরলীধরনের বিরুদ্ধে বল ছোঁড়ার অভিযোগ অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ারদের
অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে বারবার সমস্যায় পড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অফস্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরন। তিনি বল ছুঁড়ছেন বলে দাবি করেন আম্পায়াররা। ১৯৯৫ সালের পর ১৯৯৮ সালেও একই ঘটনা দেখা যায়। আম্পায়ার রস এমার্সনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে দলের সবাইকে নিয়ে মাঠ ছাড়েন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা।
১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২ বার হিট উইকেট করা সত্ত্বেও আউট দেওয়া হয়নি জেফ লসনকে
১৯৮৪ সালে ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ২ বার হিট উইকেট করেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার জেফ লসন। সারা মাঠ সেটা দেখতে পেলেও, চোখে পড়েনি শুধু দুই আম্পায়ার আর এ ফ্রেঞ্চ ও এম ডব্লু জনসনের। অথচ তাঁরা গিয়ে বেল তুলে উইকেট ঠিক করে দেন। কিন্তু কীভাবে বেল পড়ল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাননি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ারই ১৯৯৫ সালে মুথাইয়া মুরলীধরনের বিরুদ্ধে বল ছোড়ার অভিযোগ আনেন। ২০০৬ সালে আবার অন্য একটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিন চা পানের বিরতির একঘণ্টা আগে বল বদলের সিদ্ধান্ত নেন হেয়ার ও বিলি ডকট্রোভ। তাঁরা দাবি করেন, পাকিস্তানের ফিল্ডাররা বেআইনিভাবে বলের অবস্থা বদলে দিয়েছেন। চা পানের বিরতির পর পাকিস্তান দল মাঠে নামেনি। তখন আম্পায়াররা ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করেন।
কাঁধে বল লাগায় সচিন তেন্ডুলকরকে এলবিডব্লু দেন আম্পায়ার ড্যারিল হার্পার
১৯৯৯-২০০০ মরসুমে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে গ্লেন ম্যাকগ্র্যাথের একটি বল সচিন তেন্ডুলকরের কাঁধে লাগায় এলবিডব্লু দেন আম্পায়ার ড্যারিল হার্পার। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। কারণ, বলটি উইকেটের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল বলেই রিপ্লেতে দেখা যায়।
১৯৯৯ সালে ইডেন গার্ডেন্সে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চতুর্থ দিন ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে রান আউট হয়ে যান সচিন তেন্ডুলকর। তিনি যখন ক্রিজে ঢুকছিলেন, তখন বাধা দেন পাকিস্তানের পেসার শোয়েব আখতার। সারা মাঠ প্রতিবাদ জানালেও, আম্পায়াররা সচিনকে আউট দেন।
২০০৮ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনি টেস্টে হরভজন সিং-অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস লড়াই
২০০৮ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনি টেস্টে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান হরভজন সিং। এই ম্যাচেই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার ও মার্ক বেনসন বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রতিটি সিদ্ধান্তই ভারতের বিপক্ষে যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে ভুল আউট দেওয়া হয়, সাইমন্ডস, রিকি পন্টিং আউট থাকা সত্ত্বেও আউট দেওয়া হয়নি, ব্রেট লি-র নো-বলে ওয়াসিম জাফরকে আউট দেওয়া হয়, রাহুল দ্রাবিড়কে ভুল আউট দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যায় স্টুয়ার্ট ব্রডের পক্ষে
২০১৩ সালের অ্যাশেেজের প্রথম টেস্টে ৩৭ রানে ব্যাটিং করার সময় অ্যাশটন আগরের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু আম্পায়াররা আউট দেননি। এরপর আরও ২৮ রান করেন ব্রড। অস্ট্রেলিয়া ১৪ রানে সেই ম্যাচ হেরে যায়।
২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজে আম্পায়ারের ভুলের সুবিধা পান ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস
২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডের যখন জয় পেতে আর ২ রান দরকার, তখন নাথান লিয়নের বল বেন স্টোকসের প্যাডে লাগে। সারা মাঠ দেখতে পায় পরিষ্কার এলবিডব্লু। কিন্তু আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউট দেননি। এরপর ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে নেয়।
২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ইয়ান বেলের স্টাম্পিং নিয়ে বিতর্ক
২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে রবীন্দ্র জাদেজার বলে চোখের পলক ফেলার আগেই ইংল্যান্ডের ইয়ান বেলকে স্টাম্প করে দেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এত দ্রুত স্টাম্প করেন ধোনি, টেলিভিশন ক্যামেরাতেও ভালোভাবে বোঝা যায়নি। সেই কারণেই বিতর্ক তৈরি হয়।
২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ওভার-থ্রোয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেওয়া নিয়ে বিতর্ক
২০১৯ সালে ওডিআই বিশ্বকাপের শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের ব্যাটার বেন স্টোকস ছুটে ২ রান নেওয়ার পর বল তাঁর ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা ইংল্যান্ডকে মোট ৬ রান দেন। তার ফলেই জয় পায় ইংল্যান্ড। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়।