
Kolkata Derby Durand Cup: কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রবিবার সন্ধ্যায়, ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল (Durand Cup 2025)।
কার্যত, নক-আউটের এই কলকাতা ডার্বি রীতিমতো জমে উঠল (Kolkata Derby 2025)। ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ইস্টবেঙ্গল। কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল তারা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইকে সঙ্গী করে, শুরু থেকেই জমে ওঠে এই ম্যাচ। মিগুয়েলের পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন লাল হলুদের প্রাণভোমরা এডমুন্ড। তবে এক্ষেত্রে বিপদ কিছু ঘটেনি।
কিন্তু প্রথমার্ধেই কিছুটা ধাক্কা খায় ইস্টবেঙ্গল। চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান হামিদ আহাদাদ। আর তাঁর বদলে মাঠে আসেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস। তিনিই বাস্তবে হয়ে গেলেন সুপার সাব। দিয়ামান্তাকোসের জোড়া গোলেই ডার্বি জিতল লাল হলুদ ব্রিগেড। বলা চলে, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন তিনি। তবে ম্যাচের ২৭ মিনিটে, মিগুয়েলের নির্বিষ ফ্রিকিক থেকে গোল আসেনি।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে, অফসাইডের জন্য দিয়ামান্তাকোসের গোল বাতিল হয়। কিন্তু লাগাতার চেষ্টা জারি রেখেছিল লাল হলুদ ব্রিগেড। আর সেই সুবাদেই তাদের সামনে চলে আসে সুবর্ণ সুযোগ। ফলে, মোহনবাগান ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। টপ বক্সের ভিতর, বিপিন সিংকে ফাউল করে বসেন মোহনবাগান ডিফেন্ডার আশিস রাই। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি।
আর সেই পেনাল্টি থেকেই খেলার ৩৮ মিনিটে, গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস। ম্যাচের ফলাফল তখন ১-০। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ শুরু লাল হলুদ গ্যালারিতে। কিন্তু পাল্টা অ্যাটাক তুলে আনে মোহনবাগানও। ফার্স্ট হাফের অতিরিক্ত সময়ে, আপুইয়ার শট একটুর জন্য বাইরে চলে যায়। তারপর অবশ্য আর কোনও গোল হয়নি। শেষপর্যন্ত, প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ফলাফল নিয়েই।
দ্বিতীয়ার্ধে দলে পরিবর্তন আনেন মোহনবাগান কোচ জোসে মোলিনা। পাসাং দোর্জি তামাং-এর বদলে মাঠে নামেন জেসন কামিংস। আর সেকেন্ড হাফের শুরুতেই সুযোগ নষ্ট করেন মোহনবাগানের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার সাহাল আবদুল সামাদ।
তবে লাল হলুদ যেন আজ অন্য মেজাজেই মাঠে নেমেছিল। খেলার ৫২ মিনিটে, নাওরেম মহেশ সিং-এর পাস থেকে বল পেয়েই জোরালো শটে গোল করে যান সেই দিয়ামান্তাকোস। ঠিক যে সময়টায়, মোহনবাগান ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করছিল, সেই সময়েই আসল কাজটি করে দেয় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ফলাফল তখন ২-০। কার্যত, চালকের আসনে বসে পড়ে লাল হলুদ ব্রিগেড।
তবে জেমি ম্যাকলারেনের শট লাল হলুদের কেভিন সিবলি গোললাইন সেভ না করলে, ম্যাচের ফলাফল হয়ত অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। এরপর লিস্টনের জোরালো শট বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর ম্যাচের ৬৮ মিনিটে, চেষ্টার ফল কিছুটা হলেও মেলে। সবুজ মেরুনের হয়ে গোল করে ব্যবধান কমান অনিরুদ্ধ থাপা।।
খেলার ফলাফল তখন ২-১। আর তারপর থেকেই ক্রমাগত চাপ বাড়াতে থাকে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। মাঠে নামেন দীপক টাংরি এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। অপরদিকে, লাল হলুদের হয়ে মাঠে আসেন ডেভিড। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মোহনবাগান যখন একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন খুব ঠাণ্ডা মাথায় স্মার্ট ফুটবল খেলে পরিস্থিতির সামাল দেয় অস্কার ব্রুজোর ছেলেরা। নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এটি।
কারণ, মোহনবাগান যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নেমেছিল, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মোলিনার ছেলেদের হারানো কিন্তু রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিঃসন্দেহে অনবদ্য ফুটবল খেলেই জয় তুলে নিল লাল হলুদ ব্রিগেড। মোহনবাগান যখনই ম্যাচের হাল ধরতে চেয়েছে, তখনই সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররা। অভিষেক থেকে ম্যাকলারেন কিংবা লিস্টন, মোহনবাগানের আক্রমণভাগকে রীতিমতো এদিন বোতলবন্দি করে ফেললেন কেভিন সিবলি, লালচুংনুঙ্গা এবং আনোয়ার আলিরা।
বলা চলে, গোটা মাঠ জুড়ে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিল লাল হলুদ ব্রিগেড। অর্থাৎ, মাঝমাঠের দখল নিয়েই আক্রমণে বাজিমাত করল ইস্টবেঙ্গল। উল্টোদিকে থাকা জেসন কামিংস এবং জেমি ম্যাকলারেনদের তুলনায় অনেক ভালো ফুটবল উপহার দিলেন সল ক্রেসপো, বিপিন সিং এবং মহম্মদ রাকিপরা। কোথাও গিয়ে যেন ফিটনেসই পার্থক্য গড়ে দিল দুই দলের মধ্যে।
তবে এদিনের ম্যাচে মিগুয়েলের প্রশংসা করতেই হয়। দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছেন তিনি। আর জোড়া গোল করে নায়ক বনে গেলেন সেই দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস। ম্যাচ শেষে, লাল হলুদ ফুটবলাররা গ্যালারির দিকে এগিয়ে যান। আর ডার্বি জিতে সমর্থকরা তখন যেন রীতিমতো আবেগতাড়িত। গোটা গ্যালারি জুড়ে চলছে লাল হলুদ গর্জন।
অন্যদিকে, এই ম্যাচে গ্যালারিও কিন্তু বেশ বড় বার্তা দিল। এদিন লাল হলুদ সমর্থকরা রশিদকে হৃদয়ে রেখে একটি ব্যানার নিয়ে মাঠে আসেন। সেখানে লেখা ছিল, “রশিদ ডিপেস্ট কন্ডোলেন্সেস টু ইউ অ্যান্ড ইওর ফ্যামিলি। আমরা ইস্টবেঙ্গল পরিবার। সবসময় তোমার পাশে আছি। শক্ত থাকো।" এদিন ম্যাচ শেষেও রশিদের জার্সি হাতে নিয়ে এই জয় তাঁকে উৎসর্গ করেন দিয়ামান্তাকোস, সল ক্রেসপো এবং মহেশরা। এছাড়া বাংলা ভাষা নিয়েও এদিন ব্যানার চোখে পড়ে। সেটিতে লাল হলুদ সমর্থকরা লিখেছিলেন, “বাংলা ভাষা স্বাধীনতার শ্বাস, শহীদের ত্যাগের ধ্বনি, অস্বীকার করলে কাঁপবে দেশ, বাজবে প্রতিবাদের রণধ্বনি।"
ওদিকে আবার মোহনবাগান সমর্থকরাও একাধিক টিফো নিয়ে আসেন। সেগুলির মধ্যে মজার ছলেই ইস্টবেঙ্গলকে একটু খোঁচা দেওয়া ছিল। যেমন একটিতে লেখা ছিল, “ ও দাদা পাস না অনার্স?" আরেকটিতে লেখা ছিল, “মাঝি ধরল হাল, নৌকা তুলল পাল।" তবে বাস্তবের মাটিতে সেটা ঘটেনি। মোহনবাগানকে রীতিমতো টেক্কা দিলেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। অন্যদিকে, রবিবার মাঠে ডার্বি ম্যাচ উপভোগ করতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন মোট ৫৮,৬৭৬ জন দর্শক। এদিনও কিন্তু ডার্বির আগে সেই চেনা ছবি ধরা পড়ল। বাইপাস দিয়ে ছুটল একের পর এক ম্যাটাডোর। কোনওটায় ছিলেন মোহনবাগান সমর্থকরা এবং কোনওটায় ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। রীতিমতো স্লোগান দিতে দিতে, গান বাজিয়ে যুবভারতীর দিকে এগোতে থাকেন তারা।
অনেকক্ষেত্রে একই বাইকে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা একসঙ্গেও খেলা দেখতে যান। আসলে ফুটবল মানেই তো তাই। টানটান লড়াই হবে ৯০ মিনিটের এবং তারপর সেই ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। বাঙালির এই ডার্বি আবেগ চিরন্তন। দিনের শেষে জিতল ফুটবল এবং অবশ্যই গ্যালারি দিল একাধিক বার্তা।
মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের সেরা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।