
International Champions: উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়া প্রতিভাদের জন্য সুবর্ণ সময় শুরু হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের সরকার এখন রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়গুলোকে কেবল পড়াশোনার কেন্দ্র নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিভাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চলেছে। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা অপার প্রতিভাকে খুঁজে বের করার, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার একটি পরিকল্পনা করেছে। যেখানে এতদিন স্কুলে খেলাধুলা কেবল সময় কাটানোর বা বার্ষিক উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এখন স্কুল গেমস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসজিএফআই) দ্বারা নির্বাচিত খেলাধুলায় ভারতীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের (সাই) মতো প্রস্তুতি এবং পেশাদার প্রশিক্ষণের পথে পা রেখেছে। ২০২৫-২৬ অধিবেশনের জন্য সরকার ১.৩৪ লক্ষেরও বেশি স্কুলের জন্য ১৩৪ কোটি টাকার বিশাল বাজেট বরাদ্দ করেছে। যোগী সরকারের লক্ষ্য হল উত্তরপ্রদেশের স্কুল থেকে দেশকে আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন উপহার দেওয়া।
রাজ্য থেকে বেরোবে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়: যোগী সরকারের এই উদ্যোগ সরকারি বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্রীড়াক্ষেত্রে কেবল রাজ্যেরই নয়, দেশেরও গৌরব বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে। এখন উত্তরপ্রদেশের স্কুল থেকে বেরিয়ে আসা শিশুরা ক্লাসের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার মাঠেও তাদের পরিশ্রম এবং প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবে। সরকারের এই পদক্ষেপকে গ্রামীণ অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা ক্রীড়া প্রতিভাদের সনাক্তকরণ এবং তাদের উপযুক্ত মঞ্চ প্রদানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে উত্তরপ্রদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় বেরিয়ে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
১৩৪ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ: যোগী সরকার খেলাধুলাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে প্রচেষ্টা শুরু করেছে। সরকার ২০২৫-২৬ অধিবেশনের জন্য প্রায় ১.৩৪ লক্ষেরও বেশি স্কুলের জন্য ১৩৪ কোটি টাকার বিশাল বাজেট বরাদ্দ করেছে। এর আওতায় ৮৬,৭৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩.৩৮২ কোটি টাকা, ৪৫,২৪৫টি জুনিয়র হাই স্কুল এবং কেজিবিভি বিদ্যালয়ে ৪৫.২৪৫ কোটি টাকা এবং ২,৩০৪টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫.৭৬ কোটি টাকা, 'এক কেজিবিভি এক খেলা' প্রকল্পে ১৯.৪১ কোটি টাকা, ওপেন জিম-ক্রীড়া সামগ্রীর জন্য ১৪.৯২ কোটি টাকা এবং জাতীয় স্তরের প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজনের জন্য ৫.৩৩ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। এই অর্থ ক্রীড়া কার্যকলাপকে উৎসাহিত করতে, নতুন সরঞ্জাম কেনার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যয় করা হবে। ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৫,০০০ টাকা, প্রতিটি জুনিয়র হাই স্কুল এবং কেজিবিভিকে ১০,০০০ টাকা এবং প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ২৫,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
১০ দিনের প্রস্তুতি শিবির: জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতার জন্য ১৪ বছরের কম, ১৭ বছরের কম এবং ১৯ বছরের কম বয়সী গ্রুপে নির্বাচিত ছেলেমেয়েদের পর্যায়ক্রমে ১০ দিনের প্রস্তুতি শিবিরে পাঠানো হবে। এই শিবির শিশুদের একে অপরকে জানার, বোঝার, দলগত भावনা গড়ে তোলার এবং খেলার ভূমিকা ও অবস্থান বোঝার সুযোগ করে দেবে। এই শিবির খেলোয়াড়দের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে এবং আসন্ন জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে সাহায্য করবে।
ভারতীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের (সাই) আদলে প্রস্তুত হবে ছাত্র-খেলোয়াড়: আসলে, আগে বিভিন্ন জেলায় জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত শিশুদের ক্রীড়া সরঞ্জাম দিয়ে সরাসরি জাতীয় প্রতিযোগিতার স্থানে পাঠানো হত, যেখানে তারা টুর্নামেন্টের অংশ হত; কিন্তু তাদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় থাকত না এবং তারা তাদের সেরাটা দিতে পারত না। এখন যোগী সরকার ১০ দিনের শিবিরের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরিচয় বাড়িয়ে পারস্পরিক সমন্বয়, দলগত भावনা এবং খেলার ভূমিকা ও অবস্থান সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি করবে। এটা ঠিক সাইয়ের মতোই হবে, যেমন সাই আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় অনুশীলন করাত এবং জাতীয় স্তরের খেলার স্থানে অনুশীলন ম্যাচের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে এবং তাদের এক সূত্রে বেঁধে उत्कृष्टতার জন্য প্রস্তুত করে। এখন এই খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতার স্থানের নিকটবর্তী বিভাগে শিবিরের মাধ্যমে শেখার সুযোগ मिलेगा। তাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার পর তারা সরাসরি মূল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবে, যেখানে ফুটবল, হকি, ভলিবল, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল এবং রাগবির মতো দলগত প্রতিযোগিতায় সমন্বয় এবং দলগত বোঝাপড়া গড়ে তুলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে পারবে।
শারীরিক-খেল शिक्षक দেবেন প্রশিক্ষণ: নির্বাচিত খেলোয়াড়দের খেলার সূক্ষ্ম বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য যোগী সরকার বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিশু শিক্ষা অধিকার আইনের আওতায় ১০০ টির বেশি নাম নথিভুক্ত উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক খেলার প্রশিক্ষক এবং ব্লক ও জেলা পর্যায়ে শারীরিক খেলার শিক্ষকদের ইতিমধ্যেই নিয়োগ করেছে। এই সমস্ত শারীরিক খেলার প্রশিক্ষক এবং ব্লক ও জেলা পর্যায়ের শারীরিক খেলার শিক্ষকরা জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত শিশুদের শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলায় উৎসাহিত করার এবং খেলাধুলায় দক্ষ করে তোলার কাজ করবে।
‘এক কেজিবিভি-এক খেলা’ প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের সুযোগ: উল্লেখ্য, রাজ্যের ৭৩ টি জেলায় পরিচালিত ৭৪৬ টি কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪৫ টি বিদ্যালয়ে ‘এক কেজিবিভি, এক খেলা’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় এসজিএফআই-এর বিধান অনুযায়ী ১৯ টি খেলা নির্বাচন করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে প্রধান খেলাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মেয়েরা তাদের আগ্রহ এবং দক্ষতা অনুযায়ী সেই খেলায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করছে। সরকার ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং বিদ্যালয়ের ওয়ার্ডেনদের মেয়েদের সনাক্তকরণ এবং প্রশিক্ষণের জন্য নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড়রা সময়ে সময়ে এই বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে মেয়েদের উৎসাহিত করছেন এবং খেলার শিক্ষিকাদের আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
ওপেন জিম: ৭৪৬ টি কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে মেয়েদের শারীরিক সুস্থতার উপর বিশেষ ধ্যান দেওয়া হচ্ছে। খেলার প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য ওপেন জিম সরঞ্জাম স্থাপন করা হচ্ছে যাতে মেয়েরা শারীরিকভাবে শক্তিশালী হয় এবং প্রতিযোগিতায় ভালো পারফরম্যান্স করতে পারে।