ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে ঘটক পরিবারের পুজো

  •  ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে ঘটক বাড়ির পুজো 
  • বাংলাদেশে সূচণা হয়ে এই পুজো এখন চালু কলকাতাতেও 
  • পুরনো সব রীতি মেনেই ঘটক বাড়ির এই দুর্গা পুজো হয় 
  • এছাড়াও এই পুজোতে রয়েছে বিশেষ কিছু বিধি ও আচার
     

debojyoti AN | Published : Oct 7, 2019 10:41 AM IST / Updated: Oct 07 2019, 06:20 PM IST

তিনশো বছরেরও বেশি সময় আগে সুদূর বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিঝারী গ্রামে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন ঘটক পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়ে আজও চলে আসছে সেই পুজো। দেশভাগের পর কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন তাঁরা, তবে তাতেও থেমে থাকেনি পুজো। অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আজও চলে আসছে তাদের পুজো।  

টানা প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো কখনো ছেদ পড়েনি পুজোয়। আজও শাক্ত মতে সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মেনেই পুজো হয় ঘটক পরিবারে। দুই শতাব্দীর প্রাচীন নিয়ম মেনে সপ্তমী থেকে নবমী পুজোর তিন দিনই বলি হয় দেবীর সামনে। বলিদান নিজের হাতেই দিয়ে থাকেন পরিবারের সদস্যদেরই একজন। শুধু তাই নয় এই ঘটক পরিবারের পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মা দুর্গার বাঁ-দিকে থাকে গণেশ। কার্তিক ও কলা বউ থাকে মায়ের দুর্গার ডান দিকে। মা দুর্গা ও তার সন্তানদের পরনে থাকে নতুন বেনারসী। বাংলাদেশের বিঝারীতে এই পরিবার সংস্কৃত পণ্ডিত পরিবার হিসাবে পরিচিত ছিল। পরে এঁরা ঘটক উপাধি পান। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ঘটক ছিলেন মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়িতে মা সারদা গিয়েছিলেন এমনটাও শোনা যায়। 

বিধূভূষণ ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৯৪২ -এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে এই ঘটক পরিবার কলিকাতায় চলে আসেন । এরপর থেকে ৭০ বছর ধরে এপার বাঙলাতেই চলে আসছে ঘটক পরিবারের দুর্গা পুজো। যাদবপুরের রামগড়ের ঘটক বাড়ির ঠাকুরদালানে আড়ম্বরের সঙ্গে প্রতি বছর আশ্বিন মাসে মা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। বর্তমান প্রজন্মের পুজোর অন্যতম আয়োজক প্রসেনজিৎ ঘটক জানালেন, পুজোর ক'দিন দূর-দূর থেকে এমনকী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং বিদেশ থেকেও পরিবারের সদস্যরা এসে হাজির হন রামগড়ের বাড়িতে। সকলেই মেতে ওঠেন আনন্দময়ীর উৎসবে। অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে পুজোর কটা দিন সরগরম বাড়ির অভ্যান্তর। প্রতিমা দর্শনে আসা প্রতিটি মানুষকেই মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। প্রতিদিন দুবেলা দুই থেকে আড়াইশ জনের ভোগ রান্না হয় এ বাড়িতে। মা-দুর্গা -কে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। মাছ মাংস থেকে শুরু করে আরও নানা কিছু থাকে মায়ের ভোগের তালিকায়। পুজোর তিন দিনেই মায়ের ভোগে থাকে মাছের পদ। এই পুজোর কূল পুরোহিত হিসাবে বংশ পরম্পরায় কাজ করে আসছেন মেদিনীপুরের নিকুশিনীর ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা। পুজোর ক'দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করেন পরিবারের মহিলারা। মায়ের একচালা প্রতিমা দীর্ঘদিন ধরে একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরাই তৈরি করে আসছেন। 

Share this article
click me!