ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দার দেশপ্রেমের এক আদর্শ উদাহরণ। মাস্টারদা সূর্য সেনের সশস্ত্র সংগ্রামের মন্ত্রের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রীতিলতা ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়তে চাননি। বরং সগর্বে পটাশিয়াম সায়েনায়াড খেয়ে শহিদ হয়েছিলেন দেশের পরাধীনতা মোচনের আন্দোলনে।
বাংলার প্রথম মহিলা বিপ্লবী শহিদ। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদাররা আজও রয়েছেন বাংলার মানুষের স্মরণে ও বিশ্বাসে। ২১ বছর বয়সে যে তরুণী স্বপ্নে বিভোর থাকে। সেই বয়সে দেশের জন্য এক লহমায় নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। পড়াশোনায় মেধাবী। কলকাতার বেথুন কলেজে সেই সময় অসম্ভব মেধাবী না হলে স্থান হত না। সেই কলেজ থেকে স্নাতকে দর্শনে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। সঙ্গে ছিল ডিস্টিংশন। এত মেধাবী ছিলেন যে প্রীতিলতার চাকরি পেতেও অসুবিধা হয়নি। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি স্কুলে পড়ানোর চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। ১৯১১ সালে চট্টগ্রামের পাটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে এক বৈদ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম প্রীতিলতার। ওয়াদ্দেদার আসলে ছিল তাঁদের উপাধি। আসল পদবী ছিল দাশগুপ্ত। চট্টগ্রাম পুরসভায় ক্লার্কের চাকরি করতেন প্রীতিলতার বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার মা প্রতিভাময়ীদেবী ছিলেন গৃহবধূ। প্রীতিলতারা মোট ছয় ভাই-বোন। এরমধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। ছোট থেকে দেশের পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের আন্দোলন তাঁকে টানত। ছোট থেকেই নিজেকে ঝাঁসির রানি লক্ষীবাঈ-এর আদর্শে দিক্ষীত করেছিলেন। কলকাতায় পড়তে এসে সশস্ত্র বিপ্লবীদের ধ্যান-ধারণার আরও কাছাকাছি এসেছিলেন প্রীতিলতা। চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্যসেনের কাছে পাকাপাকিভাবে নিয়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবের শিক্ষা। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের পাহারটালি ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলার ছক কষে বিপ্লবীরা। এই অভিযানের মূল দায়িত্ব ছিল প্রীতিলতার উপরে। হামলায় ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে প্রবল গুলির বিনিময় হয় বিপ্লবীদের। ঘটনাস্থলে গুরুতর জখম হন প্রীতিলতা। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ঘিরে ফেলে। ব্রিটিশের হাতে জীবীত ধরা পড়ার থেকে মৃত্যুবরণকে গৌরব বলে মেনে নিয়েছিলেন প্রীতিলতা। তাঁর জামার পকেটে থাকা পটাশিয়াম সায়ানায়েড খেয়ে তিনি শহিদের মর্যাদা লাভ করেন।