পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের পাঠানোর রিপোর্ট পেয়ে তদন্তে নেমেছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। লাগাতার দিন কয়েকের নজরদারির পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে এখানে নাবালিকাদের এনে রাখা হয়েছে এবং তাদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করানো হচ্ছে।
তৃণাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, প্রতিনিধি, আসানসোল-- এ যেন রাত বাকি-বাত বাকি-হো জানে দো-জো হোনা হ্যায় হো জানে দো। পুলিশ ফাঁড়ির নাকের ডগায় দিনের পর দিন চলছিল যৌন বাজার। যেখানে রাত হলেই জেগে উঠত একটা পাড়া। দিশা জনকল্যাণ কেন্দ্র লছিপুর নামে এই এলাকা আসলে একটি যৌনপল্লি। কিন্তু করোনা বিধিনিষেধ এবং লকডাউনের বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে সেখানে চলছিল যৌনবাজার। পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের কাছে খবর ছিল যে কুলটির নিয়ামতপুরের লছিপুরের এই যৌনপল্লিতে নাবালিকাদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের পাঠানোর রিপোর্ট পেয়ে তদন্তে নেমেছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। লাগাতার দিন কয়েকের নজরদারির পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে এখানে নাবালিকাদের এনে রাখা হয়েছে এবং তাদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করানো হচ্ছে। এরপরই আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট, পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন এবং পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন এক যোগে এক তল্লাশি অভিযানের পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী এবং তাঁর কমিশনের সদস্যরা আসানসোলে পৌঁছে যান।
দেখুন ভিডিও- যৌনপল্লীতে হানা পুলিশের, উদ্ধার ৩৫ নাবালিকা
তল্লাশি অভিযান চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের কাছে তথ্য ছিল ৪ থেকে ৫ জন নাবালিকাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু, তল্লাশি অভিযানে তাঁরা ৩৫ জনের মতো নাবালিকাকে উদ্ধার করেছেন।
কীভাবে এত সংখ্যক মহিলাকে নিয়ে একটা যৌনপল্লি রমরমিয়ে চলছিল- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কলকাতায় বসে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা এর খোঁজ পেয়ে গেলেন, অথচ পুলিশ প্রশাসনের কাছে এর কোন খোঁজ ছিল না- সে নিয়ে কুলটির সাধারণ জনমানসে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের জেলা শাসক বিভু গোয়েল জানিয়েছেন, করোনা বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করেই এখানে অনৈতিক কাজ-কারবার চলছিল। কেউ কেউ স্থানীয় পুলিশকর্মীদের সঙ্গে যোগসাজোশেরও কথা বলছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
নাইট কার্ফুর মধ্যে এভাবে যৌন বাজার, তারপর সেখানে আবার নাবালিকাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করানো- কীভাবে পুলিশ এর খবর পেল না? এই প্রশ্নের উত্তরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার অজয় ঠাকুর-ও জানিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- টিকা না মিললে মণ্ডপে জ্বলবে না আলো, অন্ধকারেই দুর্গাপুজো হবে আসানসোলে
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের একাংশের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে আসানসোলের এক বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্লাস ফ্যাক্টরির মধ্যে অবৈধভাবে এক গরু উদ্ধারকারী সংগঠন কাজ করে চলেছিল, কিন্তু তা নিয়ে স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের কাছেও কোনও খবর ছিল না। পরে স্থানীয় থানার আইসি ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে নিচুতলার কিছু পুলিশকর্মী জানান ওই গরুর আস্তাবল যে চলছে তারা জানেন। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোথায়? নিচুতলার পুলিশকর্মীরা এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি। কেন অবৈধ গরুর আস্তাবলের কোনও চিঠি স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে কমিশনারেট বা জেলা প্রশাসনে যায়নি- তার কোনও উত্তর সেদিন দিতে পারেননি ওই পুলিশকর্মীরা।
নিয়ামতপুরের লছিপুর একটি যৌনপল্লি বলেই প্রসিদ্ধ। সেখানে পুলিশের নজরদারি ঢিলেঢোলা থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, সেখানে ৩৫ জন নাবালিকা এনে রাখা হয়েছে এই তথ্য কীভাবে ফসকে গেল তাতে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দেখুন ভিডিও- যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বাড়ির ছাদ, সেই বাড়িতেই দিন কাটছে দৃষ্টিহীন বাপি -র
জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া নাবালিকাদের মেডিক্যাল টেস্ট করানো হচ্ছে। এরপর তাদের হোমে রাখা হবে। সেখান থেকে বাড়ির ঠিকানা উদ্ধার করে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই তল্লাশি অভিযানে মোট ৫০ জন মহিলাকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে নাবালিকারা ছাড়া প্রত্যেককে অতিমারি আইনে কেস দেওয়া হতে পারে বলে খবর। এই তল্লাশি অভিযানে অসংখ্য গ্রাহককেও আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যেও বেশকিছু জন নাবালক বলে জানা গিয়েছে।