ফের ঠুঁটো জগন্নাথ পুলিশ, হরিশ্চন্দ্রপুরে ল্যান্ড মাফিয়াদের মারে জীবনসঙ্কটে ক্যানসার আক্রান্ত

  • হরিশ্চন্দ্রপুরে এখন আইনের শাসন নয় চলছে মাফিয়া রাজ
  • আর এই মাফিয়ারাজে নাম জড়িয়েছে আইসি সঞ্জয় দাসের 
  • অভিযোগ, তাঁর মদতেই এলাকায় মাফিয়া রাজ জাকিয়ে বসেছে 
  • তিন মাসের তিন প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় থানার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মানুষ

৩ মাসের মধ্যে তিন তিনটে বড় হামলা। কখনও থানা থেকে কয়েক গজের মধ্যে বসত বাড়ির ভিটেমাটি দখলের চেষ্টা পুলিশের চোখের সামনে। কখনও আবার থানা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকে বসত দেওয়াল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা। আর সাম্প্রতিক ঘটনাটি ঘটল নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে। যেখানে এই ল্যান্ড মাফিয়াদের মারে এখন জীবনসঙ্কটে ক্যানসার আক্রান্ত এক বৃদ্ধ। আর তিন হামলাতেই সামনে আসতে কয়েক জন ল্যান্ড মাফিয়ার নাম- বাবলু কর্মকার, সাদ্দাম হোসেন এবং ললিত আগরওয়াল। যারা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বুলবুল খানের আশ্রিত বলে অভিযোগ। আর এই ল্যান্ড মাফিয়াদের সঙ্গে বারবার নাম জড়াচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় দাসের। কারণ হরিশ্চন্দ্রপুরবাসী এবং মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ হরিশ্চন্দ্রপুরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ আইসি সঞ্জয় দাস। উল্টে তাঁর সঙ্গে দুষ্কৃতী এবং মাফিয়াদের যোগ এলাকাকে অশান্ত করে তুলেছে। নিত্যদিন কোনও না কোনও হিংসার সম্মুখিন হতে হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষদের। আর সব জেনেও চুপ  করে বসে রয়েছেন মালদহ পুলিশ প্রশাসনের কেষ্টবিষ্টু কর্তারা। 

অক্টোবর মাসেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা লাগোয়া পারিজাত রায় এবং তাঁর পরিবারের উপরে হামলা চালিয়েছিল ল্যান্ড মাফিয়া বাবলু কর্মকারের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীদের দল। পুলিশের সামনেই সেই আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। আজও সেই ঘটনায় বাবলু কর্মকার, সাদ্দাম হোসেন, বুলবুল খানদের টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। এবার ২ জানুয়ারি বাবলু কর্মকার, সাদ্দাম হোসেনদের নেতৃত্বে জনা পঞ্চাশের এক দুষ্কৃতী দল চড়াও হয় হরিশ্চন্দ্রপুরের বারদুয়ারির রাজীব ভগতের পরিবারের উপরে। বারদুয়ারিতে একটি পেট্রোল পাম্প রয়েছে এই পরিবারের। সেই পেট্রোল পাম্পের সামনে রাস্তার পাশে থাকা ভগতদের একটি পারিবারিক জমি দখলের চেষ্টা চালায় বাবলু কর্মকার, সাদ্দাম হোসেনরা। এমনই অভিযোগ করেছেন রাজীব ভগত। এমনকী, এই  ঘটনার সময় বাধা দিতে গিয়েছিলেন রাজীবের বাবা ক্যানসার আক্রান্ত জগদীশ ভগত। সে সময় জগদীশের শরীরে লাগানো ক্যাথিডারে সপাটে নাকি লাথি মারে বাবলু ও সাদ্দাম। এতে গুরুতর আহত হন জগদীশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে জগদীশকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল এবং সেখান থেকে মালদহে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসাার জন্য। কিন্তু, জগদীশের শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে কলকাতায় রেফার করেন মালদহের চিকিৎসকরা। কোভিড পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে জগদীশ ভগতকে হরিশ্চন্দ্রপুরের বারদুয়ারির বাড়়িতেই ফেরত আনা হয়েছে। ভগত পরিবার আপাতত চেষ্টা করছে কোনওভাবে জগদীশকে মুম্বই নিয়ে যেতে। সেখানেই কয়েক বছর আগে জগদীশের ক্যানসারের চিকিৎসা হয়েছিল এবং ক্যাথিডারকে বিশেষভাবে শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ল্যান্ড মাফিয়াদের হামলায় জগদীশের ক্যাথিডার সিস্টেমে গুরুতর আঘাত লেগেছে। এমন এক ঘটনার পরও পুলিশ থেকে বাবলু কর্মকার ও সাদ্দান হোসেনদের ধরার জন্য কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। উল্টে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ না পেলে তাঁরা এই ঘটনাার কোনও তদন্ত করতে পারবে না। পুলিশের এমন নিস্ক্রিয়তায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। 

Latest Videos

মঙ্গলবার সকালে আক্রান্ত ব্যবসায়ী রাজীব ভগতের সঙ্গে কথা বলে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। সেই টেলিফোনিক কথোপকথনে রাজীব অভিযোগ করেছেন, যে জমি দখলের চেষ্টা বাবলু কর্মকাররা করছে তা তাঁরা কিনেছিলেন ৪০ বছর আগে। শরিকয়ানায় কেনা সেই জমির মালিকানা তাঁদের কাছে বলে দাবি করেছেন রাজীব। তিনি জানিয়েছেন, আইন মেনে সমস্ত জমি-র নথি তারা তৈরি করেছেন। মাস ছয়েক আগে বাবলু কর্মকার এবং সাদ্দাম হোসেনরা এক মহিলাকে জমি দাবিদার বলে এনে হাজির করেছিল। সে সময়ই রাজীব নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন, জমির মালিকানার সমস্ত কাগজপত্র তাদের রয়েছে। মহিলা যদি জমির মালিক হয়ে থাকেন তাহলে কাগজপত্র দেখিয়ে আদালতে মামলা করুক। রাজীবের অভিযোগ, এরপরও হরিশ্চন্দ্রপুর থানা থেকে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বাবলু কর্মকার এবং সাদ্দাম হোসেনদের সঙ্গে আপসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। রাজীব সে সময়ও নাকি হরিশ্চন্দ্রপুর থানাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন আইন মেনে আদালতে আসুক বাবলুরা। সেখানেই তিনি তাদের মোকাবিলা করবেন। রাজীবের অভিযোগ, এরপর আচমকাই ২ জানুয়ারি বাবলু এবং সাদ্দাম দলবল সমেত তাঁর পারিবারিক জমি দখলের চেষ্টা করে। এমনকী, সঙ্গে ওই মহিলাকেও আনা হয়েছিল। বাবলু ও তার দলবল জামির চারিদিকে থাকা টিনের বেড়া উপড়ে ফেলে দেয়, ভেঙে ফেলে দেয় সমস্ত বাঁশের খুঁটি। রাজীবরা বাধা দিতে গেলে তাদের মারধরও করা হয়। এই সময় রাজীবদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নাকি সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সিভিল ম্যাটার বলে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানা। 

বাবলুদের সঙ্গে থাকা মহিলা যিনি নিজেকে প্রেমলতা মণ্ডল বলে দাবি করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, রাজীব যে জমির উপরে বেড়া দিয়েছেন তা আসলে তাদের। যদিও, স্থানীয় মানুষদের দাবি, প্রেমলতা মণ্ডলের নিজের বা তাঁর পরিবারের কোনও জমি সেখানে নেই। একটা সময় প্রেমলতার শরিকদের জমি ওখানে ছিল। কিন্তু, বহুদিন আগেই সেই সব জমি তারা অন্যদেরকে বিক্রি করে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাবুল এবং সাদ্দামরা রাজীবদের জমির পিছনে অন্য কারোর কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। কিন্তু সেই জমি-তে প্রবেশের কোনও সুনির্দিষ্ট রাস্তা নেই। যার জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাজীবের জমি দখলের চেষ্টা করছে বাবলু এবং সাদ্দামদের মতো ল্যান্ড মাফিয়ারা। 

রাজীব ভগতেরও অভিযোগ, বাবলু কর্মকাররা প্রেমলতা মণ্ডল নামে ওই মহিলাকে সামনে রেখে তাঁদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। কারণ, তাঁদের জমি একদম রাস্তার ধারে। যার বাজার মূল্য অনেকটাই বেশি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সোমবার রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। যদিও, বাবলু কর্মকার ও সাদ্দামদের দৌরাত্ম নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। এলাকায় ল্যান্ড মাফিয়াদের দৌরাত্ম এবং হিংসার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ও থানার দিকেই আঙুল তুলেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামনে নির্বাচনে বিজেপি-র দিকে পাল্লাভারী দেখে ইতিমধ্যেই বাবলু কর্মকার তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে ফের বিজেপি-তে ঢোকার চেষ্টা করছে। কলকাতাক এক বিজেপি নেতা বাবান ঘোষের সঙ্গেও বিজেপি পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে তোলা একটি ছবি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে বাবলু। এই বিজেপি ছেড়েই তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছিল বাবলু। 

বাবলু কর্মকাররা কয়েক বছর আগেও এলাকায় সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু, এই মুহূর্তে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় দুষ্কৃতী হিসাবে নাম করে ফেলেছে বাবলু। আর পিছনে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় দাস। অক্টোবর থেকে জানুয়ারির ২ তারিখ পর্যন্ত হরিশ্চন্দ্রপুরের বুকে জমি দখলকে ঘিরে তিনটি প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে, অথচ আইসি সঞ্জয় দাস প্রথমে অশান্তি থামাতে বাহিনী তো পাঠাননি, উল্টে আক্রান্তদের বার্তা পাঠিয়েছিলেন থানায় এসে সালিশি করে যেতে। হরিশ্চন্দ্রপুরবাসীরা মনে করছেন অবিলম্বে এই দুর্নীতিগ্রস্থ আইসি সঞ্জয় দাস-এর অপসারণ হোক। মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনও ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত আইসি-র অপসারণ চেয়ে মালদহ পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছে। 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘২৬ এর নির্বাচনই তৃণমূলের শেষ নির্বাচন!’ Samik-এর সাবধানবাণী Mamata-কে, দেখুন | By Election Results
প্রেমের নামে এসব কী! নিখোঁজ নাবালিকার মর্মান্তিক পরিণতি, শোকের ছায়া পরিবারে | Nadia News Today
চলন্ত বাসে দুঃসাহসিক ছিন্তাই! চাঞ্চল্য ছড়ালো গোটা এলাকায় | South 24 Parganas News Today
ফের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড (Kolkata Fire) কলকাতায়, পুড়ে ছাই গড়িয়া ষ্টেশন সংলগ্ন ৬টি দোকান
বাপ রে! ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে ডাকাতি! আতঙ্কের ছায়া গোটা এলাকায় | Salt Lake Theft News Today