একে অপরের বিরুদ্ধে সমানে আক্রমণ শানিয়ে যান তাঁরা। একে অপরের নিশানায় সবসময় থাকেন। বাংলার রাজনীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী বিতর্ক তৈরি করতে সমান পারদর্শী। একে অন্যকে ঠুকে কথা বলতে , কটাক্ষ করতে ছাড়েন না কোনও সুযোগ। সেই বাগযুদ্ধের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দেখুন তাঁদের মধ্যে কথার লড়াইয়ের কিছু অংশ।
নাবালক অভিষেক
রাজভবনের সামনে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাবালক বলে সম্বোধন করেন শুভেন্দু অধিকারী। পরিষ্কার জানান ২০১১ সালে পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভাইপো অভিষেকের বাংলার রাজনীতিতে পথ চলা শুরু। সেই নাবালককে নিয়ে কিছুই বলার নেই।
নাবালক তকমা পেয়ে চুপ থাকেননি অভিষেকও। পূর্ব মেদিনীপুরে ইয়স পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সরব হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। নাম না করেই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তিনি বলেন, "আমি না হয় নাবালক। কিন্তু ওঁকে বলুন ওর সাবালকত্বের প্রমাণ দিতে। সাবালক তো এসে দেখতে পারলেন না, সেই নাবালককেই আসতে হল। আমাকে আবারও ডাকলে আসব। ১০ দিন পরেই নাবালক ফের আসবে।"
আরও পড়ুন - মুখ্যসচিবের ভোট-পরবর্তী হিংসার রিপোর্টে অসন্তুষ্ট, টুইট করে জানালেন রাজ্যপাল
দায়িত্বজ্ঞানহীন শুভেন্দু
তৃণমূলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পরেই সাংবাদিক বৈঠকে ফের শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন বিরোধী দলনেতাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। গঠনমূলক মন্তব্য করতে শিখতে হবে। গঠনমূলক আলোচনা করলে তবেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় না দেওয়াই ভালো।
৪২০ অধিকারী
নির্বাচনী প্রচারে শুভেন্দু অভিষেক তরজায় সরগরম ছিল বাংলার মাটি। একাধিকবার অধিকারীগড়ে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে তুলোধনা করেছেন অভিষেক। পালটা নিজের প্রচারে অভিষেককে বিদ্ধ করেছেন শুভেন্দুও। নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে অভিষেক সরাসরি শুভেন্দুকে ৪২০ অধিকারী বলে সম্বোধন করেন। এর সঙ্গে ছিল গদ্দার, মীরজাফর ও বেইমানের মতো শব্দবন্ধের প্রয়োগও।
তোলাবাজ ভাইপো
বিজেপিতে যোগদানের পর একাধিকবার তৃণমূলের তোলাবাজির অভিযোগ এনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শুভেন্দু। নাম না করেই তোলাবাজ ভাইপো বলে সম্বোধন করে বিতর্ক তৈরি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন রাজ্যের সবাই জানেন ভাইপো কে। খেজুরির একটি নির্বাচনী সভা থেকে তিনি অভিষেকের সম্পর্কে তোলাবাজ ভাইপো ও পাচারকারীর মত শব্দ ব্যবহার করেন।
অবশ্য এর পাল্টায় চুপ থাকেননি অভিষেকও। সরাসরি আইনী নোটিশ পাঠিয়ে অভিষেক দাবি করেন ক্ষমা চাইতে হবে শুভেন্দুকে। অভিষেকের বিরুদ্ধে মানহানিকর কথা বলার অপরাধে আইনী নোটিশ যায় তাঁর কাছে। ক্ষমা না চাইলে মামলাও হুমকি দেন তৎকালীন তৃণমূলের যুব সভাপতি।
আরও পড়ুন - আকাশ কালো করে নামবে ঝেঁপে বৃষ্টি, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু দক্ষিণবঙ্গে
উল্লেখ্য, একুশের নির্বাচনে বড় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অভিষেককে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে একাধিকবার তাঁকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যেও আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন অভিষেক। রাজনৈতিক মহলের দাবি, অভিষেকের দলে রমরমার কারণেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু। ফলে তিনি যে অভিষেককে নিশানা করবেনই, তা বলাই বাহুল্য। কয়লাপাচার কাণ্ড থেকে শুরু করে গরুপাচার কাণ্ড, একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে অভিষেকের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপির প্রথমসারির নেতারা। পাল্টা আক্রমণে পিছিয়ে থাকেননি অভিষেকও। ফলে এই দুই প্রথম সারির নেতার বাগযুদ্ধে বিতর্ক তৈরি হতে বেশি সময় লাগেনি।