তৃতীয় দফায় হটসিট তেমন নেই। কিন্তু এই দফায়ই ভোটের লড়াইতে না থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এটি সেমিফাইনাল বললেন খুব একটা ভুল হবে না। কারণ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের পাশাপাশি ভাগ্যপরীক্ষা হচ্ছে অভিষেকেরও। এদিন ভোট গ্রহণ হচ্ছে, ডায়মন্ডহারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া ও বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের। গত লোকসভা নির্বাচনের নিরীখে এই চারটি কেন্দ্রেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বর্তমানে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলে গেছে। তাই রাজনৈতিক মহলের নজর রয়েছে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের দিকে।
ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে। দীর্ঘ দিন ধরেই এই কেন্দ্র থেকে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব সামলেছিলেন সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু। ২০০১ সালে নির্বাচনেই অংশ নেননি তিনি। আর সেই বছর থেকে টানা তিন বার এই কেন্দ্রীয় থেকে জয়ী হয়ে বিধানসভায় গিয়েছিলেন সোনালি গুহ। একটা সময় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যান্ত ঘনিষ্ট ছিলেন সোনালি। কিন্তু এবার তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়নি। দল বদল করে বিজেপিতে যোগ দিলেও ভাগ্যা শিকে ছেঁড়েনি সোনালির। তবে এই সাতগাছিয়ায় সোনালির প্রভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই এই কেন্দ্রের ভোট কোন দিয়ে যাবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক গুঞ্জন।
হুগলি থেকে বাংলার সঙ্গে দিল্লি দখলের বার্তা, নির্বাচনী এজেন্ট নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ মমতার ...
ফলতা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরপর দুবার তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন তমোনাশ ঘোষের। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এবার ফলতা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শঙ্কর কুমার নস্কর। বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুই। এদিন সকালেই তাঁকে ঘইরে একপ্রস্থ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে স্থানীয়রা। চলে ইঁট বৃষ্টি। ভোটগ্রহণের প্রথম পর্ব থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে ফলতা। অন্যদিকে সংযুক্ত মোর্চার তরফে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে। তাই ফলতাতেও জোর লড়াই হবে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রেও জোর লড়াইয়ের মুখে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গতবারের তৃণমূলের বিধায়ক দীপক হালদার এবার দল বদল করে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। স্পিড পোস্টে চিঠি লিখেই তিনি দল বদল করেছেন। আর বিজেপির টিকিটেই লড়াই করছেন তিনি। সম্প্রতী তাঁর ওপর আক্রমণও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীপকের মোকাবিলা করার জন্য তৃণমূল দাঁড় করিয়েছে পান্নালাল হালদারকে। অন্যদিকে জোটের প্রার্থী প্রতীক উর রহমান। বিষ্ণুপুর কিছুটা হলেও তৃণমূলের কাছে নিরাপদ আসন বলেও মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কথায় ডায়মন্ড হারবার সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনারয় ২০১৯ এর আগে পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের সাভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তির কথা সর্বজদন বিদিত। কিন্তু। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় তাঁর। ভোটের সময়েই তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না। বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁকে সেভাবে পথে নামতে কোনও দিনই দেখা যায়নি। চলতি বিধানসভা নির্বাচনেও ছবিটা তেমন বদলায়নি। এবারও শোভন চট্টপাধ্যায় রাজনীতিক বাইরে রয়েছেন। কিন্তু তিনি অন্দরে থেকেও কোন চাল দেন কিনা সেটাই এখন দেখার। অন্যদিকে এই জেলায় সাংগঠনিক প্রভাব ছিল শুভেন্দু অধিকারীরও। যা বর্তমানে বিজেপির হয়েই কাজ করছে। বিজেপিও অভিষেককে কোনঠাসা করতে তৎপর। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব ডায়মন্ড হারবারের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচারে জোর দিয়েছিলেন। তাই সব মিলিয়ে লড়াইয়ের বাইরে থেকেও কঠিন লড়াইয়ে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।