রবিবার ডায়মন্ড হারবার থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে নাম করে 'ঘুষখোর' বলে তোপ দেগেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু ৬ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে বলে মঞ্চের উপর থেকে কাগজ দেখিয়ে দাবি করেছিলেন অভিষেক। নির্বাচনের পর ইঞ্চিচে ইঞ্চিতে বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেওয়ার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীকে 'তুই তামারি' করেছিলেন তৃণমূল নেতা। তারপর থেকেই সোমবার তমলুকের সভা থেকে পাল্টা কি জবাব দেন শুভেন্দু সেই দিকে নজর ছিল সকলের।
ঘুষখোরের পালটা চিটিংবাজ-
তমলুকের সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু জবাব দেওয়াই নয়, 'তোলবাজ'-এর পর এবার অভিষেককে 'চিটিংবাজা', 'ফেরেববাজ' বলেও তোপ দাগলেন শুভেন্দু অধিকারী। তমলুকে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন,'বলেছে শুভেন্দু ঘুষখোর, মধুখোর আর বিশ্বাসঘাতক। আর বলেছে সরকার আমরা চালাই না। আপনাকে বলি, মাননীয় তোলাবাজ ভাইপো। এই ধরনের ফেরেববাজ, চিটিংবাজ খুব কম আছে। আগে নামের আগে এমবিএ লিখত। এখন লেখেন না কেন? প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছিলেন, দিল্লিত এরকম কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখান থেকে তোলাবাজ ভাইপো এমবিএ করেছে।' শুধু তাই নয়, চিটিংবাজি তোলাবাজ ভাইপোর বাড়িতেও রয়েছে বলে কটা করেছেন শুভেন্দু। নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডক্টরেড ডিগ্রিকেও কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা।
বিদেশের ব্যাঙ্কে অভিষেকের অ্যাকাউন্ট-
তমলুকের সভা থেকে বোমা ফাটিয়ে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন যে, বিদেশের ব্যাঙ্কেও অ্যাকাউন্ট রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ব্যাঙ্কের নাম ও শাখার নামও জানান তিনি। একইসঙ্গে অভিষেকের সহযোগী এক মহিলার কথা উল্লেখ করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। তিনি বলেন,'লালার টাকা, এনামুলের টাকা। 'গরু পাচারের টাকা খেয়েছ তো তুমি! লালার টাকা কার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে? থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকেছে। প্রতি মাসে ৩৬ লক্ষ টাকা করে ঢুকেছে রসিদও আছে। কে ম্যাডাম নারুলা? কয়েক দিনের মধ্যেই আপনারা জেনে যাবেন।'
বিনয় মিশ্র ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে টেনে আক্রমণ-
গরু পাচার কাণ্ডে ফেরার ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্র প্রসঙ্গ টেনেও আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, সবার নাম বললেও, কেনও বিনয় মিশ্রের নাম একবারও তোলেন না কেনও? যুবার দায়িত্বে কে বসিয়েছিল বিনয় মিশ্রকে। কার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তা ও সামনে আসবে। খুব শীঘ্রই সিবিআই তদন্তে আসল অপরাধি ধরা পড়বে বলেও জানান শুভেন্দু অধিকারী।
সারদা ও নারদা নিয়ে তোপ-
সারদা কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেনের লেখা চিঠি নিয়েও তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। পুলিসের সাহায্য নিয়ে সেই চিঠি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন,'বিমান বসুর নাম লিখেছে। নিজের জামা-কাপড় নিজের হাতে কাঁচে। আমার লড়াই লক্ষ্মণবাবুর বিরুদ্ধে। হার্মাদগিরির বিরুদ্ধে ছিল। অধীর চৌধুরীর নাম লিখেছে। সুজন চক্রবর্তীর নাম লিখেছে।' সারদা কেলঙ্কারি কেডি সিংয়ের টাকা দিয়ে 'তোলাবাজ ভাইপো করিয়েছে বলেও তোপ দাগেন শুভেন্দু। তিনি বলেন,'খবরের কাগজে মুড়িয়ে আমাতে টাকা নিতে দেখা গেছে। তাহলে সৌগত রায়, ববি হাকিম ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কী হবে? ম্যাথুকে টাকা দিয়েছে কেডি সিং। কেডি সিংকে লাগিয়েছে তোলাবাজ ভাইপো।'
সম্পত্তি ও বিদেশ সফর নিয়ে কটাক্ষ-
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ ও বিদেশ সফর নিয়েও বোমা ফাটিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি। আমার বাড়ির একটা তালাও বাড়েনি। আমার পাসপোর্টে কাঠমাণ্ডু যাওয়ার দাগও নেই। আপনার তো সিঙ্গাপুরে না গেলে চিকিৎসা হয় না। মধু আপনি খাচ্ছেন। আমার বাড়ি যা ছিল তাই আছে। হাতে ঘড়ি নেই। আংটি নেই। হরিশ মুখার্জি ও হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ৩৫টি বাড়ির মালিক। দুর্গাপুরে কারখান। পুরিতে হোটেল। আরও কত কী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ-
তমলুকের সভা থেকে জয় শ্রী রাম শুনলে কেনও মাননীয় রেগে যাচ্ছেন সেই বিষয়েও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। জয় শ্রী রাম শুনলে ক্ষেপে যাচ্ছে। আর একজন ক্ষেপে যাচ্ছে তোলাবাজ ভাইপো শুনলে। জয় শ্রী রামে এত রাগ কেনও তও প্রশ্ন ছুড়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে সোমবার পুরশুড়ার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দেন, ' হরে কৃষ্ণ হরের, তৃণমূল ঘরে ঘরে'। সাম্প্রতিক কালে এই স্লোগান দিচ্ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাই কটাক্ষের সুরে শুভেন্দু বলেন, আমফানের ত্রাণ চুরি, ত্রিপল চুরি, চাল চুরি, করোনার টিকা চুরির পর এবার স্লোগানটাও চুরি করে নিলেন মাননীয়া।