পশ্চিমবঙ্গে জেলাগুলিতে এই তিনটি জাতি, উপজাতি মিলিয়ে জনসংখ্যা মোটামুটি ভাবে ৫০-৮০ শতাংশ। ফলে এদের সমর্থন ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জয়ের পিছনে একটা বড় কারণ ছিল বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
অপশাসন, দুর্নীতি আর বঞ্চনা ছাড়া গত দশ বছরে তৃণমূল সরকারের থেকে কিছু পায়নি এই রাজ্যের পিছিয়ে পড়া দলিত, তফসিলি জাতি, উপজাতির লোকেরা। তাদের ক্ষোভ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে গত লোকসভা ভোটে সুবিধা করে দিয়েছিল বিজেপিকে। ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটেও সেই ধারা বজায় থাকবে কি না জানা যাবে ২ মে ফলপ্রকাশের দিন। তার আগে গ্রাফিক্সে দেখে নেওয়া যাক কি ভাবে পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তনে’র এই হাওয়া বইছে।
১। ২০১১ সালের জন গণনা অনুযায়ায়ী রাজ্যে হিন্দু জনঘনত্বের সংখ্যাটা কেমন, তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
২। দেখা যাচ্ছে রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং তার সন্নিহিত অঞ্চলে মুসলিম জনঘত্বের ছবিটা।
৩। এখানে সামনে উঠে এসেছে তফসিলি উপজাতিদের জনঘনত্ব দেখানো হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কিছু জেলা, যেমন দার্জিলিং (২২ শতাংশ), জলপাইগুড়ি (১৯ শতাংশ), পুরুলিয়া (১৮ শতাংশ) দক্ষিণ দিনাজপুর (১৬ শতাংশ) এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে (১৫ শতাংশ) তফসিলি উপজাতির লোকজন তুলনায় বেশি।
৪। তফসিলি জাতির জনঘনত্ব কেমন রাজ্যে তা এই মানচিত্রে পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তফসিলি জাতি ও মুসলিমদের ভোটের একটা বড় অংশ তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছিল।
৫। মুসলিম ও তফসিলি- এই দুই জনজাতির মিলিত জনঘনত্ব কোন এলাকায় কী রকম তা দেখানো হয়েছে এখানে।
৬। তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মুসলিমদের জনঘনত্ব একসঙ্গে দেখানো হয়েছে এখানে।
৭। পশ্চিমবঙ্গে জেলাগুলিতে এই তিনটি জাতি, উপজাতি মিলিয়ে জনসংখ্যা মোটামুটি ভাবে ৫০-৮০ শতাংশ। ফলে এদের সমর্থন ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জয়ের পিছনে একটা বড় কারণ ছিল বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে কোন দলের ভোটশেয়ারিং কেমন ছিল সেটা দেখানো হয়েছে এখানে।
৮। ২০১৬-তে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পরেও এই জনজাতিদের উন্নয়নে কিছু কাজ করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের সরকার। ফলে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই জনজাতির একটা বড় অংশ সমর্থন করে বিজেপি-কে। বিধানসভা কেন্দ্র ধরে লোকসভা ভোটের ফল কোথায়-কার পক্ষে গিয়েছিল দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
৯। খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে কম, সেখানে বিজেপির ভোট বেড়েছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে মুসলিম-দলিত অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বিজেপির জয়যাত্রা থমকে গিয়েছিল।
১০। কিন্তু, উপরোক্ত বিষয়টিকে আবার পুরোপুরি মান্যতা দিলে হবে না। কারণ, রাজ্যে এমনকিছু এলাকা রয়েছে যেখানে তৃণমূল এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে যে জোট তা অটুট ছিল। কিন্তু সেখানে বিজেপি-র উত্থান আটকায়নি। সেইসঙ্গে জলপাইগুড়ি আর কোচবিহারকে এই ট্রেন্ডের বাইরেও রাখতে হবে। কারণ এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনীতি চলে।
১১। নদিয়া ছাড়া মালদা থেকে নীচে উপকূল পর্যন্ত তৃণমূল তাদের সংগঠন ধরে রাখতে পেরেছিল লোকসভা ভোটেও। বাকি এলাকায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি।
১২। এটা আরও সুন্দর করে বোঝা যাবে যখন মুসলিম আর দলিত অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে তৃণমূল কি ভাবে শক্তি ধরে রেখেছে, সেটা একসঙ্গে দেখব।
উপরোক্ত ছবিগুলিতে ভোট শেয়ারিং-এর চিত্র বিশ্লেষণের পর আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে দক্ষিণবঙ্গের যে সমস্ত এলাকায় মুসলিম ও দলিত মিলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার রয়েছে, সেখানে তৃণমূলের জোর বেশি। ক্ষমতায় আসতে হলে বিজেপিকে অবশ্য এই কেন্দ্রগুলোর উপরে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি এটাও বলা যায়, এবারের বিধানসভা ভোটের ফল দু’টো বিষয়ের উপরে নির্ভর করছে। এক, দলিত ভোট কতটা বিজেপি টানতে পারল। দুই, মুসলিম ভোট কতটা বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের দিকে গেল। এই দু’টো শক্তি যখন পূর্ণমাত্রায় কাজ করবে, তখনই তৃণমূলের মুসলিম + দলিত ভোটব্যাঙ্ককে রোখা যাবে।
পরিসংখ্যানের কচকচানি সরিয়ে এটাও বলা যায়, পরিবর্তনের হাওয়া চলে এসেছে বাংলায়। এই ‘আসল পরিবর্তন’ই গড়বে আগামী দিনের সোনার বাংলা।