তাপস দাস: চণ্ডীদাসের জন্য নানুরের নাম মনে রাখতে পারত মানুষ। কিন্তু নানুর বার বার খ্যাত হয়েছে অন্য কারণে। ঊনবিংশ শতকের প্রবল দুর্ভিক্ষ যেন অভিশাপ হয়ে এসেছিল নানুরের মাটিতে। সে অভিশাপ ফের যেন ফিরে এসেছিল নতুন সহস্রাব্দের গোড়ার বছরে। ২০০০ সালে নানুরের সূচপুরে খুন হয়েছিলেন ১১ জন ভূমিহীন চাষি। এ ঘটনা সূচপুর গণহত্যা নামেই জায়গা পেয়েছে জনতার মনে। ক্লাব ঘরের মধ্যে, যা বকলমে সিপিএমের পার্টি অফিস বলেই পরিচিত ছিল, সেখানে খুন করা হয় ১১ জনকে। দু জন অত্যাচার সত্ত্বেও বেঁচে গিয়েছিলেন। ঘটনার এক দশক পর, এই গণহত্যা মামলায় ৪৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে সিপিএমের দলীয় সদস্যদের নামও ছিল।
১৯৭৭ সাল থেকেই নানুর বিধানসভা সিপিএমের দখলে ছিল। ২০০৬ সালেও এখানে জিতেছিলেন সিপিএমের জয়দেব হাজরা, হারিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের গদাধর হাজরাকে।
আরও পড়ুন: বোলপুরের লাল মাটিতে কি এবার গেরুয়া আস্তরণ, নাকি ফের জিতবেন মন্ত্রীই
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে গদি পাল্টায়। তৃণমূল কংগ্রেসের গদাধর হাজরা সেবার বিধায়ক নির্বাচিত হন নানুরের। গদাধর হারিয়েছিলেন সিপিএমের শ্যামলী প্রধানকে। গদাধর পেয়েছিলেন ৯১ হাজার ৮১৮ ভোট। শ্যামলী পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৯৫৫ ভোট।
আরও পড়ুন: নজরবন্দিকে গুরুত্ব দিতে চান না অনুব্রত মণ্ডল, চান ভোটে দলের হয়ে কাজ করতে
২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন সিপিএমের শ্যামলী প্রধান। তিনি হারিয়ে দেন গতবারের নির্বাচিত বিধায়ক তৃণমূলের গদাধর হাজরাকে। শ্যামলী ১ লক্ষ ৪ হাজারের বেশি ভোট পান, গদাধর পান ৭৮ হাজার ৬৪৪ ভোট। এ ঘটনার পর তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে সাড়া পড়ে, বীরভূম জেলা তৃণমূলকে এই হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী নানুর বিধানসভায় মাত্র ৮ হাজার ৮১১ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পদ্মশিবিরে যায় ১৮ হাজার ৫০২ ভোট। বিজেপির ভোট শেয়ার বেড়েছিল ৪ শতাংশেরও বেশি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নানুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৯০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেবার ভোটের পরেই দল বদল করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা। তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বিধানচন্দ্র মাঝি। সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিএমের প্রার্থী শ্যামলী প্রধান। বিজেপির প্রার্থী তারক সাহা।
তফশিলি জাতিভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত নানুর বিধানসভা আসনের ভোট নেওয়া হবে রাজ্যের অষ্টম তথা শেষ দফা ভোটগ্রহণের দিন, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল।