ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মমতা বনাম বিজেপি, নাকি নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর প্রেস্টিজ ফাইট

  • একুশের নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের লড়াই
  • রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু নন্দীগ্রাম
  • নন্দীগ্রামের মমতার প্রতিপক্ষ কে?
  • কি বলছে রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ

Asianet News Bangla | Published : Jan 21, 2021 9:04 AM IST / Updated: Jan 21 2021, 02:35 PM IST

তপন মল্লিক- শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর থেকেই কার্যত দু’হাত খুলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে আহ্বান জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ তিনি তৃণমূল ছাড়লে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের বিপুল লাভ। শেষপর্যন্ত শুভেন্দু ঘাস ফুল ছেড়ে গেরুয়া ছত্রছায়ায় এসেছেন। আর আসার পর থেকেই বিজেপি শুভেন্দুকে সামনে রেখে মমতার বিরুদ্ধে একের পর এক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একুশের নির্বাচনে মূল লড়াইটা মমতার সঙ্গে বিজেপির। মমতা চাইছেন এরাজ্যে তাঁর নেতৃত্বে ক্ষমতা ধরে রাখতে। অন্যদিকে বিজেপি চাইছে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে এ রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এই ক্ষমতা দখলের লড়াইটা যত না মমতা বনাম বিজেপি তার থেকে অনেক বেশি মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দুর সরাসরি চ্যালেঞ্জ। শুভেন্দুর সেই চ্যালেঞ্জকেই বোরে করেই বিজেপি এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মমতাকে হারাতে চাইছে। 
মমতা নন্দীগ্রামে নিজেই ভোটে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণার পর থেকে একটা প্রশ্ন রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরপাক খেতে শুরু তাহলে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন?  কেউ কেউ বলতে শুরু করেন নন্দীগ্রামের পদত্যাগী বিধায়ক শুভেন্দুই হবেন সেই প্রার্থী। বিজেপির পক্ষে মমতাকে হারানোর জন্য শুভেন্দুর থেকে যোগ্য প্রার্থী আর কেউ হতে পারে না। একুশের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম যে মেগা লড়াই তা নিয়ে আর কোনও বিতর্ক নেই। নন্দীগ্রামের মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর সম্মুখ সমর যে এবারের নির্বাচনে মূল আকর্ষণ তা নিয়ে ও নেই কোনও প্রশ্ন। ইতিমধ্যে শুভেন্দুকে ভর করে মমতাকে হারানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা বিশ্বস্ত সহায়ক শুভেন্দু অধিকারী আর তৃণমূল সুপ্রিমোর ডুয়েল নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চর্চা। 
সেই চর্চা কিন্তু উসকে দিয়েছেন শুভেন্দু নিজেই। মমতা নিজের নাম ঘোষণার পর সোমবার সন্ধেবেলায় দক্ষিণ কলকাতার এক সভা থেকে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছোড়েন ‘হাফ লাখ ভোটে যদি হারাতে না পারি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ এখানে অবশ্য শুভেন্দু সরাসরি প্রার্থী হবেন কি না তা স্পষ্ট করে বলেন নি। তবে সোমবার রাতে শুভেন্দু অধিকারী যে টুইট করেন সেটা ঘিরেই জল্পনা শুরু হয়। রাত ৯.৩০ মিনিট নাগাদ এক টুইটে শুভেন্দু বলেন, ‘এবার নন্দীগ্রামে সামনা-সামনি দেখা হবে’। তবে এবিষয়ে বিজেপির তরফে কোনও নিশ্চত বক্তব্য পাওয়া যায় নি। যদিও এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত বিজেপির পক্ষে হেভিওয়েট রিক্রুট হলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, একুশের লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে শুভেন্দুর নাম প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে।  
এই নন্দীগ্রামের সমাবেশ থেকেই ২০১৬ সালে মমতা শুভেন্দুর নাম ঘোষণা করেছিলেন। তখনও ভোটের অনেক দেরি। তবু মমতা নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দুর নাম ঘোষণা করে কার্যত ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। কাকতালীয় হলেও এখনও বিধানসভা ভোটের দেরি আছে। তবে পাঁচ বছর পর নন্দীগ্রামের সেই তৃণমূল বিধায়ক পদ ছড়ায় এই মুহূর্তে নন্দীগ্রাম সেই  অর্থে বিধায়ক বিহীন। সোমবার তৃণমূল নেত্রীর নন্দীগ্রামে ভোট লড়ার ঘোষণাকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে বর্ণনা করছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষঙ্গদের মতে মমতার এই সিদ্ধান্ত অনেক সমীকরণ বদলে দিতে পারে। 
প্রসঙ্গত; সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে যাবতীয় সাফল্যের অন্যতম মাইলফলক। সেই নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেত্রী নিজেই একুশের বিধানসভা ভোটে লড়লে তার প্রভাব যে অন্যরকম সে কথা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়ত তাই নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে সোমবার আচমকা মমতার ঘোষণায় কিছুটা হলেও চিন্তায় পরে যায় বিজেপি নেতারা। অন্যদিকে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে আসা শুভেন্দুর আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু যেমন তৃণমূল তেমনি সে দলের নেত্রীকে পরাস্ত করাটাই তার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে শুভেন্দুকেই যে বিজেপি নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইতে নামাবেন সাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞানও সেকথা বলে।

Share this article
click me!