গত লোকসভা নির্বাচনে জোটধর্ম পালন করেন নি। ' বিস্বাসঘাতকতা' করেছিলেন বামফ্রন্টের কর্মীদের সঙ্গে। সেই জন্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামকর্মীদের ক্ষোভ কমাতে তাঁদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনের প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। জোট ধর্ম ভঙ্গ করে আদালা প্রার্থী দাঁড় করিয়ে লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ আসনে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে ছিল কংগ্রেস, আজ সেই ভূলের প্রায়শ্চিত্ত করতে প্রকাশ্যেই সিপিআইএম কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত। বিগত লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস দীপা দাসমুন্সীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল কংগ্রেস। সেটা ছিল উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের চরমতম ভূল। সেই ভূলের কথা স্বীকার করে বাম-কংগ্রেস জোটের কর্মীসভায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোটের কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট কর্মীদের কাছে এভাবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতার ক্ষমা চাওয়ায় কিছুটা হলেও মহম্মদ সেলিম হারার ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়ল।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসেবে কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। নিঃস্বার্থভাবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে রায়গঞ্জের সিপিএম এর নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্তের প্রচারে। জয়ী হয়েছিলেন মোহিত সেনগুপ্ত। এর ঠিক আড়াই বছর পর ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে জোট ধর্ম ভেঙে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে দীপা দাসমুন্সীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। ফলত রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে হার মানতে হয়েছিল সিপিএমএর সাংসদ মহম্মদ সেলিমকে। সেইসময় থেকেই উত্তর দিনাজপুর জেলায় কংগ্রেসের সাথে সখ্যতা নষ্ট নয় সিপিএম এর। বিশেষ করে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম নেতা কর্মীরা কংগ্রেস তথা রায়গঞ্জের বিধায়কের মোহিত সেনগুপ্তের উপরে ক্ষুদ্ধ হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের মতো ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট বাঁধে। জোটের প্রার্থী হিসেবে রায়গঞ্জ বিধানসভা আসন পায় কংগ্রেস। প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে সেলিমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস দীপা দাসমুন্সীকে প্রার্থী করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এই অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার সিপিএম কর্মীরা। সিপিএম কর্মীদের এই ক্ষোভ প্রশমনে এবার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। এদিন রায়গঞ্জ শহরে বিধানমঞ্চে বাম-কংগ্রেস জোটের নির্বাচনী কর্মীসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই তিনি সিপিএমের কর্মীদের কাছে বিগত লোকসভার ঘটনার ভূলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।একই সঙ্গে তিনি বলেন বাম ও কংগ্রেস বর্তমানে একটি পরিবারের মত। পরিবারের একজন সদস্য ভুল করলেও বাকিরা তাঁকে যেমন ক্ষমা করে দেন এক্ষেত্রেও তেমনই হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন সিপিএম ও বামফ্রন্টের নেতা কর্মীদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি বিগত লোকসভা নির্বাচনে ভূল বোঝাবুঝির জন্য। মোহিত সেনগুপ্তের এই প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনায় সিপিএম নেতা কর্মীদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ যে কিছুটা প্রশমিত হল এটা বলাই যায়। ভুল বোঝাবুঝি দুর করে আগামী দিনে তাঁরা একসঙ্গে লড়াই করবেন বলেও জানিয়েছেন।
সি পি এমের জেলা নেতা উত্তম পাল জানিয়েছেন, " এর আগেও কংগ্রেসের সাথে আমাদের জোট হয়েছে। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে তাদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেসব মিটে গিয়েছে। আমরা একসাথেই নির্বাচনে লড়াই করবো। "