বিক্রি বাড়াতে কি মেশানো হত মদে? হাওড়া বিষমদ কান্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রতাপকে জেরা করে মিলেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা থেকে কী ভাবে মদে বিষক্রিয়া, তা-ও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রের খবর প্রায় চার দশক আগে, ধৃত প্রতাপের বাবার হাত ধরে গজানন বস্তিতে বেআইনি মদের কারবারের শুরু হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পরে ব্যবসার দায়িত্ব নেন প্রতাপ। 

হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার গজানন বস্তিতে দিন কয়েক আগেই ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক ঘটনা। বিষমদ কান্ডে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। তার তদন্তে নেমে তদন্তকারীদের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যে ভাটিখানায় বসে বিষ মদ পান করে মৃত্যু হয় ১১ জনের, সেই মদের ভাটির জনপ্রিয়তা বাকি দোকানগুলির চেয়ে অনেক বেশি ছিল। 

মদ্যপায়ীদের মধ্যে রীতিমত চাউর ছিল যে প্রতাপের মদে নেশা বেশি। ফলে দিনের পর দিন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী প্রতাপের দোকানেই ভিড় বাড়ত ক্রেতাদের। এই প্রতাপ কর্মকারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতাপকে জেরা করে মিলেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা থেকে কী ভাবে মদে বিষক্রিয়া, তা-ও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রের খবর প্রায় চার দশক আগে, ধৃত প্রতাপের বাবার হাত ধরে গজানন বস্তিতে বেআইনি মদের কারবারের শুরু হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পরে ব্যবসার দায়িত্ব নেন প্রতাপ। মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বাস গজানন বস্তিতে। প্রতাপের ক্রেতাও ছিলেন মূলত তাঁরাই। ব্যবসা নিজের হাতে পাওয়ার পরেই লাভ বেশি করতে পরিকল্পনা আঁটেন প্রতাপ। ঠিক হয়, বাইরে থেকে দেশি মদ কিনে তাতে এমন কিছু মেশাতে হবে, যাতে কম খরচেও ভরপুর নেশা হয়। 

Latest Videos

এরপরে প্রতাপ বাইরে থেকে বাংলা মদ কিনে এনে তাতে ঘুমের ওষুধের গুঁড়ো মেশানো শুরু করেন। কিন্তু তাতেও সেভাবে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছিল না। পরে বাংলা মদে রাসায়নিক মেশানো শুরু। প্রতাপ জানিয়েছেন তিনি বাংলা মদের বোতল কিনে এনে তা থেকে মদ বের করে ফেলে জলের সঙ্গে মেশাতেন কাঠের আসবাবপত্রে রং করার বার্নিশের স্পিরিট। সামান্য পরিমাণে তা মেশালেই নেশার পারদ চড়চড়িয়ে চড়ত ক্রেতাদের। তার পর পাঞ্চিং মেশিন দিয়ে আবার বোতলের ছিপি লাগিয়ে তা বিক্রি করা হত। কিন্তু সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মদের এই মিশ্রণ যে কোনও দিন ভয়ঙ্কর ঘটনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কারণ স্পিরিটের পরিমাণ সামান্য এ দিক ও দিক হলেই মৃত্যু অনিবার্য!

কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রঙের জন্য ব্যবহৃত স্পিরিট অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। ইথানল মানুষের পক্ষে তেমন ক্ষতিকারক না হলেও মিথানল অত্যন্ত বিপজ্জনক। রঙের স্পিরিটে থাকে মিথানল। এটা শরীরে অতিরিক্ত ঘোর আনতে পারে। সেই সঙ্গে মিথানল শরীরের মধ্যে জারিত হয়ে ফর্মালিন ও ফরমিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। ফলে বিষক্রিয়া হতেই পারে। এটা এতই বিষাক্ত যে অন্ধত্ব, এমন কি মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, মালিপাঁচঘড়া থানার পিছনেই রেললাইনের ধারে নিয়মিত বসে চোলাইয়ের ঠেক। সেই ঠেক থেকেই মদ কিনে খেয়েছিলেন মৃত ১১ ব্যক্তি। এমনকী, অসুস্থরাও সেখান থেকেই মদ্যপান করেন। এরা সকলেই কারখানার শ্রমিক। মঙ্গলবার রাতে এই দোকানের মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তাঁদের দাবি, রাতে বাড়ি ফিরে বমি শুরু করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ওই ১১জনকে। 

Share this article
click me!

Latest Videos

Sukhendu Sekhar কী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে? জল্পনা উস্কে যা বললেন Agnimitra Paul
তন্ত্রযোগ? নাকি বৌমা ও ছেলেকে শিক্ষা দিতেই...আটক দাদু, ঠাকুমা ও জেঠিমা | Hooghly News Today
TMC ছেড়ে কেন BJP-তে শুভেন্দু! আজ নিজেই বলে দিলেন সব | Suvendu Adhikari | Bangla News
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024
'আমি বলছি, আমার নাম করে লিখে রাখুন' ঝাঁঝিয়ে উঠে যা বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari