পঞ্চম দফার ভোটই নবান্ন দখলের চাবিকাঠি, তৃণমূল নেত্রী মমতার কাছে কতটা কঠিন এই লড়াই

  • শনিবার পঞ্চম দফা নির্বাচন 
  • এটি তৃণমূল নেত্রীর কাছে কঠিন লড়াই 
  • আগের আসনগুলি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ 
  • দোশরা মে ফল প্রকাশ 

Asianet News Bangla | Published : Apr 14, 2021 3:57 AM IST / Updated: Apr 14 2021, 10:37 AM IST

মধ্য গগনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। ২৯৪টি আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৩৫টি আসনে নির্বাচন শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৫৯টি কেন্দ্র, যেখানে ভোটাররা আগামী চারটি দফায় সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন। দীর্ঘদিন বাদে বাংলায় ত্রিমুখী ভোটের লড়াই হচ্ছে।  বাম কংগ্রেসের কাছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যেমন টিকে থাকার লড়াই তেমনই তৃমণূল কংগ্রেস ও বিজেপির কাছে এই নির্বাচন ক্ষমতা দখলের লড়াই। 


শনিবার পঞ্চম দফা নির্বাচন। এই ৪৫টি আসনে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। কিন্তু চতুর্থ দফায় শীতলকুচির ঘটনার পরই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ভোট গ্রহণের ৭২ ঘণ্টা আগেই প্রচার শেষ করতে হবে। সেইমত মঙ্গলবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। তৃতীয় দফা থেকে পঞ্চম দফায় পর্যন্ত বাংলারয় প্রায় ১২০ টি আসনে ভোট গ্রহণ। যা নীলবাড়ি দখলে চাবিকাঠি হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও কঠিন লড়াই হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্র্রীর জন্য। 

পাহাড়ে প্রচারে উত্তপ বাড়াচ্ছেন অমিত শাহ, আর সমতলে ধর্নায় তারই প্রতিপক্ষ মমতা ... R

প্রথম দফাঃ

 গত ২৯ মার্চ প্রথম দফায় ভোট গ্রহণ হয়। রাজ্যের ৩০ আসনে ভোট নেওয়া হয়েছিল। যারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জঙ্গলমহল। ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচন এই ৩০ আসনে রীতিমত শক্তি প্রদর্শন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা ভোট থেকেই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে থাকে। প্রথম দফার ৩০ আসনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে ছিল প্রায় ১৯টি আসনে। 


দ্বিতীয় দফাঃ

পয়লা এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের আরও ৩০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। যার মধ্যে ২০১১ ও ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ২১ ও ২২টি আসনে। পাঁচ বছর আগে বিজেপি জিতেছিল মাত্র একটি আসনে। আর বাম ও কংগ্রেস পেয়েছিল ৮টি আসন। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলিতে গেরুয়া প্রভাব স্পষ্ট হয়েছিল। ১২টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। যার প্রভাব চলতি বিধানসভা নির্বাচনেও পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় পর্বের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম। ভোটের দিনের মতই ফল প্রকাশের দিনেও এই কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের। 

মমতার পর এবার কমিশনের খাঁড়া রাহুল সিনহার ওপর, ৪৮ ঘণ্টা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি .
তৃতীয় দফাঃ 

তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। যেখানে ২০১১ থেকে ২০১৬সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিপত্য দেখা গেছে। ৩১এর মধ্যে ২৯টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সেই সময় গেরুয়া ঝড় বয়েছিল। বিজেপির কোনও চিহ্ন ছিল না। ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনেই ওই আসনগুলিতে এগিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বাম কংগ্রেসের আসনগুলিতেই থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। 

চতুর্থ দফাঃ 
১০ এপ্রিল ৪৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। এই পর্বেই শীলতকুচির গুলিকাণ্ডে উত্তপ্ত হয়েউঠেছিল রাজ্যরাজনী। এই পর্বে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল সিঙ্গুর। ২০১১ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিপত্য ছিল। ২০১১ ও ২০১৬ সালে এই ৪৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩ ও ৩৯টি কেন্দ্রে জয় লাভ করেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস দুটি ও বামেরা ৮টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ৪৪টি কেন্দ্রের প্রায় বেশ কয়েকটিতেই তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস ২৫টি কেন্দ্রে এগিয়ে থাকলেও বিজেপির ঝড়ে তৃণমূলের জমি কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছেন। এই কেন্দ্রগুলি একটা সময় বামেদের গড় হলেও বর্তমানে তারা তেমনভাবে লড়াইয়ের মধ্যে নেই বললেই চলে। 

পঞ্চম দফাঃ
আগামী ১৭ এপ্রিল ভোট গ্রহণ হবে রাজ্যের ৪৫টি আসনে। এই কেন্দ্রগুলির অধিকাংশতেই ২০১৯ আসের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনেই বিজেপি প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তৃণমূল ২৩ ও বিজেপি ২২টি আসনে এগিয়ে ছিল। তাই এই পঞ্চম দফা নির্বাচনই নীলবাড়়ি দখলের লড়াইতে রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৬ নির্বাচন এই কেন্দ্র গুলির মধ্যে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ৩১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। ২০১৬ নির্বাচনে আরও ৬টি আসন দখল করেছিল। তুলনায় অনেকটাই পিছনে ছিল বাম ও কংগ্রেস। পঞ্চম দফায় অধিকাংশ আসন যদি তৃণমূল কংগ্রেস ধরে রাখতে পারে তাহলে নীলবাড়ি লড়ইয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ঘাসফুল। 

লক্ষ্য শুধু হিন্দু ভোট নয়, সংখ্যালঘু ভোট টানতে কী কৌশল নিচ্ছে বিজেপি ...

ষষ্ঠ দফাঃ 
ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল ৩৫টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। যেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে সেগুলিতে দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের প্রভাব রয়েছে। ২০১১ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ২৮টি আর ২০১৬ তৃণমূল দখল করেছিল ৩২টি আসন। তবে এবার তৃণমূলের মূল লড়াই হবে বিজেপির সঙ্গে। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এগিয়েছিল ২৪টি আসনে। আর বিজেপি এগিয়ে ছিল ১৯টি আসনে। 

সপ্তম দফাঃ 

এই পর্বে ২২ এপ্রিল ৩৬টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১১ ও ১৬ নির্বাচনে পেয়েছিল ১৪ ও ১৭টি আসন। তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে ছিল কংগ্রেস ও বামদলগুলি। তারা পেয়েছিল ২২টি আসন। আর ২০১১ র নির্বাচনে পেয়েছিল ১৮টি আসন।  কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে দেখা যাচ্ছে বাম ভোট চলে যাচ্ছে বিজেপির দিকে। তাই লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলিতে যথেষ্ট ভালো ফল করেছিল বিজেপি। 

অষ্টম দফাঃ চূড়ান্ত পর্বে ভোট গ্রহণ ২৭ এপ্রিল। ভোট গ্রহণ হবে ৩৫টি কেন্দ্রে। কিন্তু এই গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল প্রতিপক্ষ ছিল বামেরা। কিছুটা হলও লড়াই চালিয়েছিল কংগ্রেস। ২০১১ ও ১৬র নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ১৪ ও ১৭টি আসন। সেখানে বাম ও কংগ্রেস পেয়েছিল ১৬টি আসন। কিন্তু এবার কী বাম ও কংগ্রেস জোট বেঁধে প্রত্যাসা পুরণ করতে পারবেন? নাকি বাম কংগ্রেসের আসনে থাবা বসাবে বিজেপি? 

সব জল্পনার অবসান হবে ২ মে ফল প্রকাশের পর। 

 

Share this article
click me!