Nadia Accident: 'চাল চড়েনি হাড়িতে, খাবেটা কে', পরিবারের ১০ জনকে হারিয়ে কেঁদেই চলেছেন নিভা

 নদিয়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ১০ জনকে হারিয়েছেন নিভা বিশ্বাস, নিভার বোনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি তাঁর দুই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে। তাঁরা জানে শুধু দুর্ঘটনায় তাঁদের মা জখম হয়েছেন, কিন্তু মন যে মানছে না, শুধু অঙ্কিতা-অন্বেষার মুখে একই প্রশ্ন, 'কেমন আছে মা।'

 

Asianet News Bangla | Published : Nov 29, 2021 6:59 AM IST / Updated: Nov 29 2021, 12:33 PM IST

নদিয়ার হাঁসখালির দুর্ঘটনার (Nadia Hanskhali accident ) পর বিশ্বাস পরিবারে আর হাড়ি চড়েনি। কারণ শুধুই মনকষ্ট নয়, খাবার খাওয়ারই তো আর কেউ নেই বলে জানালেন উত্তর ২৪ পরগণা বাগদা ব্লকের পারমাদন গ্রামের এক বাসিন্দা। গ্রামের কমবেশি সবাই এখন বিশ্বাস পরিবারের কাছেই রয়েছে। নদিয়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ১০ জনকে (10 member of a same family) হারিয়েছেন নিভা বিশ্বাস (Nibha Biswas)। 

'দুই ছেলে, ভাই, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে এবং দুই বোন', কেউ কি আর নেই বাকি বলে আফশোস নিভার এক প্রতিবেশীর। জড়ো হওয়া সবারই চোখে জল, গলা বুজে এসেছে ঘটনা বলতে গিয়ে অনেকেরই। 'আমি কী নিয়ে বাঁচব, আর ইচ্ছে নেই বাঁচার', বাড়ির উঠোতে চিৎকার করে কাঁদছেন আর বুক চাপড়াচ্ছেন বছর পয়ষট্টির নিভা বিশ্বাস। ঘটনার মোড় ঘোরে শনিবার দুপুরে।  নিভা বিশ্বাসের মায়ের হয় ওই দিন দুপুরে। ২৭ নভেম্বর শনিবার দুপুরে গোবরডাঙায় ছোট মেয়ের বাড়িতে, বার্ধক্যজনিত কারণেই তাঁদের মা শিবানীর মৃত্যু হয়। এর পর দেহ আনা হয় পারমাদনের বাড়িতে। নব্বই বছরের বৃদ্ধার দেহ নবদ্বীপের শ্মশানে নিয়ে যেতে গিয়েই শনিবার রাতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে বাগদা গ্রামের কয়েক জন। এদের মধ্যে নিভার পরিবারেরই রয়েছেন ১০ জন। 

আরও পড়ুন, Nadia Accident: মৃতের পরিবারকে ২ লাখ করে অনুদান, নদিয়ার দুর্ঘটনায় টুইট বার্তা মোদীর

শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ গ্রামের রীতি মেনে দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উত্তর ২৪ পরগণা জেলা থেকে সুদূর নদিয়া জেলার নবদ্বীপে। প্রায় ৬০ কিলোমিটারের রাস্তা। যদিও বঁনগায় শ্মশান আছে, তাও পারমাদনবাসী সৎকারের জন্য রীতি মেনে নবদ্বীপেই যান। রওনা হওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই দুর্ঘটনার খবর আসে।   ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর, কাছেপিঠে সৎকার করলে দুর্ঘটনাই হত না বলে অনেকেই কপাল চাপড়াচ্ছেন। ওদিকে নিভার দুই ছেলে অমর ও অমলেন্দু বিশ্বাস মারা গিয়েছেন। অমর-অমরেন্দুর বাবা প্রভাস দুর্ঘটনার খবর পয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। দুই ছেলের দেহ দেখে আর পারেননি তিনি। শুরু হয় বুকে ব্যাথা। দ্রুত তাঁকেও শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিভার ভাই বৃন্দাবন মুহুরি ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। তাঁর আরও দুই ভাই স্বপন ও বিশ্বনাথও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বপনের মেয়ে শ্রাবণীরও মৃত্য়ু হয়েছে দুর্ঘটনায়। প্রাণ হারিয়েছেন স্বপনের ঘরের নাতনি পাঁচ বছেরর অনন্যাও। নিভার বোনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি তাঁর দুই স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে। তাঁরা জানে শুধু দুর্ঘটনায় তাঁদের মা জখম হয়েছেন। কিন্তু মন যে মানছে না, শুধু অঙ্কিতা-অন্বেষার মুখে একই প্রশ্ন, 'কেমন আছে মা।'

আরও পড়ুন, Accident: 'দুঃখজনক', নদিয়ার দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ ধনখড়-শাহ-শুভেন্দুর, 'পাশে থাকা'-র আশ্বাস মমতার

 রবিবার সকালে পারমাদনে এসেছিলেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। আসেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন ওসি উৎপল সাহা এবং এসডিপিও সুকান্ত হাজরা। সন্ধ্যের পর কয়েকজনের দেহ গ্রামে আসেন বনমন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। সারি সারি করে দেহ রাখা হয়। উল্লেখ্য, নদিয়ার হাঁসখালিতে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৮ জনের। একটি শববাহী গাড়ির সঙ্গে লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৮ জনের। পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। আহত ৫ জন। তাঁদের মধ্য়ে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মৃতের পরিবারের পাষে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের নিকট-আত্মীয়কে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।' 

Read more Articles on
Share this article
click me!