প্রতিমার সঙ্গে বিসর্জন আরও ৫টি তরতাজা প্রাণের, দশমীতে গভীর শোকের ছায়ায় ডুবল মুর্শিদাবাদ

দশমীতে প্রথামতো বাইচ খেলার মধ্য দিয়ে চলছিল বিসর্জন

আর তার মধ্যেই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

ডুমনি নদীতে ডুবে মৃত্যু হল পাঁচ যুবকের

শোকের ছায়া নেমেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়

 

amartya lahiri | Published : Oct 27, 2020 9:53 AM IST

দশমীর ঢাকের বোল এমনিতেই খুব বিষণ্ণ শোনায়। দেবী দুর্গার বাড়ি ফেরার পালা। আর সেই বিসর্জনকে কেন্দ্র করেই আরও গভীর শোকের ছায়া নেমে এল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা পৌরসভা এলাকায়। অসাবধানতাজনিত কারণে মাঝ নদীতে নৌকাডুবি এবং তারপর প্রকতীমার কাঠামোয় আটকে সলিল সমাধী ঘটল এলাকার পাঁচজন যুবকের। করোনার আতঙ্কের মধ্যে একটু স্বাদ বদল ঘটিয়েছিল পুজো, কিন্তু, তার শেষ দিনে এলাকাজুড়ে এখন শুধুই হাহুতাশ।

দীর্ঘদিনের প্রথা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙ্গা হাটের হাজরাবাড়ীর এলাকার দেবী দুর্গার বিসর্জন সম্পন্ন হয় স্থানীয় ডুমনি নদীতে। দুটি নৌকায় দেবীর কাঠামো সপ্ত দড়িতে বেঁধে মাঝ নদীতে নিয়ে আনা হয়। সেখান বেশ কিছুক্ষণ বাইচ খেলার পর, আস্তে আস্তে দুটি নৌকা একে অপরের থেকে সরে যেতে শুরু করে। আর মাঝে বাঁধা প্রতিমা আপনাআপনি জলের মধ্যে ডুবে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রথা চলে আসছে।

পরিকল্পনায় কোথাও কিছুটা খামতি

সোমবার বিকেলে, সেইমতো এলাকার যুবকেরা ডুমনি নদীর ধারে প্রতিমা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। কোভিড নিয়ে সরকারি সকল নির্দেশিকাও মানা হয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে। বাইচ খেলার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জনের পালা শুরু হয়। কিন্তু সবকিছু মানা হলেও পরিকল্পনায় কোথাও কিছুটা খামতি থেকে গিয়েছিল এবার। দুটি নৌকা একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে শুরুও করেছিল। কিন্তু কয়েক ফুট যেতে না যেতেই আচমকা একটি নৌকা বেসামাল হয়ে উল্টে যায়। জানা গিয়েছে নৌকাটি পুরোনো হওয়ায় তাকে আর সোজা করা যায়নি, মুহুর্তের মধ্যেই সেটি জলে ডুবে যায়।

কুড়ি থেকে পঁচিশ জন যুবক ছিলেন সেই নৌকাটিতে। অধিকাংশই সাঁতরে পারে চলে এসেছিলেন। কিন্তু, কয়েকজনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডুবন্ত নৌকা ও প্রতিমার বিশাল কাঠামো। নদীর পারে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন তারা প্রতিমার তলায় চাপা পড়ে গিয়ে কাঠামোর মধ্যে আটকে গিয়েছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও কাঠামোর থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেননি। নৌকা ও প্রতীমার সঙ্গেই তারা ডুবে যায়।

এমন দিনে এই কাণ্ড ঘটতে পারে

তড়িঘড়ি স্থানীয় বেলডাঙা থানা ও স্থানীয় পৌরসভায় খবর দেওয়া হয়। পৌর কর্মীরা এবং বেলডাঙা থানা থেকে একটি বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধারকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, হতভাগ্য পাঁচ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রথমে তিন যুবকের দেহ মেলে। তাদের সুখেন্দু দে (২১), অরিন্দম ব্যানার্জি (২০) ও সোমনাথ ব্যানার্জি (২২) বলে সনাক্ত করা হয়েছে। পরে ডুমনি নদীতে ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধার করা হয় নিপন হাজরা (৩৬) ও পিকন পাল (২৩)-এর দেহ।

পুরো বেলডাঙ্গা এলাকাতেই এই ঘটনায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুজোর শেষদিনে এই আকস্মিক আঘাত কেউই মেনে নিতে পারছেন না। বেলডাঙা পৌরসভার প্রশাসনিক বডির সদস্য আবু সুফিয়ান বলেছেন, 'আমাদের বেলডাঙা পৌরসভা এলাকায় এমন ঘটনা অতীতে কোনওদিন ঘটেনি। আমরা সকলেই গভীর শোকাহত। ভাবতেই পারছি না এমন দিনে এই কাণ্ড ঘটতে পারে।'

 

Share this article
click me!