কখনও হোয়াটসঅ্যাপে অশালীন মেসেজ, কখনও আবার রাতে ভিডিও কল। ছাত্রীদের সঙ্গে এমনই অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠল এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শুধু অশালীন মেসেজই নয়, একাধিক ছাত্রীকে ওই শিক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগই সোমবার উত্তেজনা ছড়ায় উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরের কসবা এলাকার কৈলাসচন্দ্র রাধারানী বিদ্যাপীঠ স্কুলে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম বাপি প্রামাণিক। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে সোমবার স্কুল চত্বরেই বিক্ষোভ দেখায় স্কুলের ছাত্রীরা। অভিযোগ, ভূগোলের শিক্ষক বাপি প্রামাণিক দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আপত্তিকর আচরণ করে আসছে। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানোই নয়, প্রাইভেট টিউশন পড়ানোর সুযোগে অনেক ছাত্রীর সঙ্গে তিনি আপত্তিকর ব্যবহারও করেন বলে অভিযোগ। ছাত্রীরা বাধা দিলেও অভিযুক্ত শিক্ষক একই কাজ বার বার করত বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন নিগৃহীত হওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত একজোট হয়ে সোমবার প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে ছাত্রীরা।
শুধু বর্তমান ছাত্রীরাই নয়, সোমবারের বিক্ষোভে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীরাও যোগ দেয়। অভিযোগ তাদের মধ্যে অনেককেও একই ভাবে নিগ্রহ করেছিল ওই ভূগোল শিক্ষক। হাতে পোস্টার নিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ দিন বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রীরা। অভিযুক্ত শিক্ষক অবশ্য সোমবার স্কুলে ছিল না।
বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, মাঝরাতে বিভিন্ন অজুহাতে ওই শিক্ষক তাদের ভিডিও কল করত। তাদের ছবি নিয়ে অশালীন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করত ওই শিক্ষক। এমন কী, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যও বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দিত ওই শিক্ষক। প্রমাণ লোপাটের জন্য তাদের কথোপকথন ডিলিট করে দেওয়ার নির্দেশও দিত বাপি প্রামাণিক নামে ওই শিক্ষক। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করানোর অজুহাতে ছাত্রীদের আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করার চেষ্টাও করত ওই শিক্ষক। লজ্জায় ও ভয়ে ছাত্রীরা প্রকাশ্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পেত না। শেষ পর্যন্ত নিগ্রহের মাত্রা লাগামছাড়া হওয়ায় একজোট হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রীরা।
ছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে নড়েচড়ে বসে স্কুল কর্তৃপক্ষও। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যদিও অভিযক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ছাত্রীদের অবশ্য দাবি,ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিস্কার না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রীর অভিযোগ, 'এই ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। আমাদের ব্যাচের একাধিক ছাত্রী ওই শিক্ষকের অশালীন আচরণের শিকার হয়েছে। লজ্জায় ও ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। এ দিন ছাত্রীদের বিক্ষোভের খবর পেয়েই আমি ছুটে এসে তাতে সামিল হয়েছি।'
স্থানীয় কাউন্সিলর অভিজিৎ সাহা জানান,'ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের থেকে এর আগেও এই ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত বলেন, 'ছাত্রীদের থেকে অভিযোগ পেয়েছি। এর আগে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে তার বক্তব্য জানতে চেয়েছি। গোটা ঘটনা উর্ধ্বতন তন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দোষ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।’ বার বার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শিক্ষক বাপি প্রামাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।