এক বিয়েতেই বিখ্যাত বড়ুয়া, বাড়িতে গিয়ে বরকে শুভেচ্ছা জানালেন বিডিও

  • মুর্শিদাবাদের বড়ুয়া গ্রামের ঘটনা
  • নিজের বিয়েতে অভিনব উদ্যোগ শিক্ষকের
  • খবর পেয়ে বাড়িতে হাজির হলেন বিডিও নিজে
  • বিয়েতে সমাজ সচেতনতার বার্তা আইনুল হকের

debamoy ghosh | Published : Aug 27, 2019 4:34 AM IST / Updated: Aug 27 2019, 11:59 AM IST

পরাগ মজুমদার,মুর্শিদাবাদ: আর পাঁচটা গ্রামের থেকে এতদিন আলাদা কিছু ছিল না। কিন্তু একটি বিয়ের সৌজন্যেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যেও রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া গ্রাম। গ্রামে হাজির জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সারা বছর যে এলাকার খোঁজ পর্যন্ত কেউ রাখতেন না বলে অভিযোগ, সেই গ্রামই এখন আইনুল হক নামে এক যুবকের হাত ধরে এক নামে সকলের কাছে পরিচিত। আইনুলের হকের বিয়ে নিয়েই চর্চায় ব্যস্ত গোটা বড়ুয়া এলাকার মানুষ।

নিজের বিয়েতে অন্যরকম কিছু করার ভাবনা ছিল আইনুলের। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র থেকে শুরু করে ভোজ বাড়ির আনাচে কানাচে সর্বত্র সমাজ সচেতনার বার্তা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন আইনুল। ঝাঁ চকচকে জৌলুস না থাকলেও,সাধারণ জিনিস কে অসাধারণ ভাবনায় তুলে ধরা হয়েছে গ্রামীণ পরিবেশে। কী নেই সেখানে! সারা বিশ্ব যখন জল সংকটে হাঁসফাঁস করছে, তখন তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে গাছ লাগাও ,প্রাণ বাঁচাও স্লোগানকে হাতিয়ার করা হয়েছে। কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো সামাজিক ব্যাধির  বিরুদ্ধেও বিয়েতে  নিমন্ত্রিতদেক সচেতন করেছেন পেশায় বেসরকারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক আইনুল হক।

আরও পড়ুন- উপহার নয়, গাছে রাখি পরিয়ে আশীর্বাদ নিলেন রায়গঞ্জের নবদম্পতি

আরও পড়ুন- ফিল্মি কায়দায় আংটি বদল! বোদরুমে সঙ্গীত-এর দিন এভাবেই তাঁকে প্রপোজ করেছিলেন নিখিল

তাঁর বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ডে 'জল ধরো- জল ভরো', 'গাছ লাগাও- বেটি বাঁচাও' এর বার্তা তুলে ধরেছেন আইনুল। ঠিক তেমনই ভোজ বাড়ি জুড়ে সর্বত্র 'গাছ বাঁচাও', 'জল বাঁচাও', 'ভ্রূণ হত্যা বন্ধ' করার মতো বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তায় ভরিয়ে তোলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। বাংলায় স্নাতকোত্তর এই যুবক গাছের গুরুত্ব বোঝাতে  বিয়ে বাড়ির চারিদিকে রং বেরঙের গাছ দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন আইনুল। আমন্ত্রিত অতিথিদের সচেতন করতে চেষ্টার কসুর করেননি তিনি।

এই খবর কানে যেতেই আইনুলের উদ্যোগকে চাক্ষুস করতে খোদ পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে বেলডাঙার বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র আইনুলের বাড়িতে পৌঁছন। সমাজ এবং পরিবেশ সচেতনতার এই চেষ্টা করার জন্য তাঁকে সম্মানিতও করেন বিডিও। গ্রামবাসীরাও আইনুলের উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

আইনুল হক বরাবরই একজন পরিবেশ সচেতন যুবক। শৈশব থেকেই তাঁর নেশা গাছ লাগানো ও তার যত্ন নেওয়া। সময় পেলেই বিভিন্ন সমাজ সচতনতামূলক কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কখনও পড়ুয়া-অভিভাবক, তো কখনও এলাকাবাসীদের নিয়ে চলে তাঁর সমাজ সচেতনতার কাজ।  গ্রামের মানুষও এমন অভিনব বিয়ের আয়োজন দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।  যাঁকে কেন্দ্র করে এত ঘটনা, সেই শিক্ষক আইনুল হক লাজুক গলায় বলেন,'আমি খুব সাধারণ পরিবারের  গ্রামের একটি ছেলে। যদি কিছুটা হলেও এলাকার মানুষকে কোনওভাবে সামাজিক বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারি, তাহলে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জীবন সার্থক বলেই মনে করব।' 

বেলডাঙার বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলেন,'আমরা আইনুল হকের এই অভিনব কায়দায় সমাজ সচেতনতার কাজকে কুর্নিশ জানাই। আগামী দিনে তাঁর এই ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে  প্রশাসনও ওই শিক্ষকের পাশেই থাকবে।' গ্রামবাসী বাসার শেখ,আমিনা বিবিরা বলেন,"আইনুল সবসময় আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা কী করলে ভালো থাকবে, সেই চিন্তা করেন।' আর স্বামীর এই উদ্যোগে গর্বিত আইনুলের সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর কথায়,'আগামী দিনে এমন কাজে আমি সব সময় ওঁর পাশে থাকব।'
 

Share this article
click me!