এ যেন 'ব্রক্ষা জানেন গোপন কম্মটি' বাংলা ছবির প্লট। সমাজে নারীরা যে কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই, নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে সব কাজ করতে পারে এই বার্তা দিতেই পুরোহিতের কাজে এগিয়ে এল নারীরা। পূজা অর্চনার পাশাপাশি এবার হিন্দু রীতিমতে বিবাহের কাজও পারদর্শীতার সাথে সম্পন্ন করে দেখাল রায়গঞ্জের এক বঙ্গ তনয়া। রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জে এক কন্যার বিবাহ কার্য করলেন মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল। ঠিক এইভাবেই সোশ্যাল ট্যাবু ভেঙে পুরোহিত বাবার পেশা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বাংলা ছবি 'ব্রক্ষা জানেন গোপন কম্মটি'র নায়িকা। আর এবার তা সেলুলয়েড ছেড়ে সত্যি হল। বাংলায় এই কাজে এগিয়ে এল রায়গঞ্জ।
উত্তর দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম মহিলা পুরোহিত দিয়ে কনের বিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জ বিবাহ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে। রায়গঞ্জের বাসিন্দা শিপ্রা রায়ের কন্যা ঋতুপর্ণা রায়ের বিয়ের পুরোহিতের সমস্ত কাজই করলেন সুলতা মন্ডল । বিবাহ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত থেকে অতিথি অভ্যাগত এবং পরিবারের মহিলারা গর্বিত একজন মহিলার এই পুরোহিত পেশায় যুক্ত হওয়ায়। সমাজের কোনও কাজেই যে মহিলারা আজ আর পিছিয়ে নেই এটা অনুভব করতে পেরেই গর্বিত তাঁরা।
বৈদিক গ্রন্থে কিছু নারী ঋষি বা মুনির কথা উল্লেখ আছে। একজন নারী ঋষি হওয়ার অর্থ তিনি বৈদিক মন্ত্র উচ্চারন করে সমস্ত দেবদেবী পূজা আর্চা ও যাগযজ্ঞ করতেন। কিন্তু মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সেই মান মর্যাদাকে দমিয়ে রেখে সমাজের বহু জায়গা থেকে তাদের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে নারীরা শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে পুরুষদের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছে এযুগের নারী। এতদিন পুজো পাঠ যাগযজ্ঞ বিবাহ অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠা সম্পন্ন করতেন পুরোহিতেরা। যাঁরা হলেন পুরুষ। এখন থেকে সেই ধ্যান ধারনা পালটে দিয়ে সমাজের মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন পুরোহিতের কাজে। পূজো পাঠ যাগযজ্ঞের পাশাপাশি এবার বিবাহ কার্যও সম্পন্ন করছেন মহিলা পুরোহিতেরা।
উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জ ভবনে এমনই এক বিবাহ অনুষ্ঠানের ছবি ধরা পরল যেখানে সুলতা মন্ডল নামে এক মহিলা পুরোহিত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করলেন। রায়গঞ্জ বীরনগরের বাসিন্দা শিপ্রা রায়ের মেয়ে ঋতুপর্ণা রায়ের সাথে হেমতাবাদের বারইবাড়ির পাত্র ধীরেন্দ্র নাথ দে'র বিবাহে পুরোহিতের কাজ করলেন গঙ্গারামপুরের ঠ্যাঙাপাড়ার মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল। বিয়ের অধিবাস থেকে শুরু করে নারায়ন শিলার পূজো এবং বৈদিক মন্ত্রোচ্চারনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করলেন মহিলা পুরোহিত।
মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল জানালেন, সমাজে যে মহিলারা কোনও অংশেই কম নয়, তারাও যে পুরুষদের সাথে সমান তালে সব কাজ করতে পারে এই বার্তা দিতেই তিনি পুরোহিতের পেশাকে বেছে নিয়েছেন। মহিলা পুরোহিত দিয়ে নিজের বিয়ে হওয়া প্রসঙ্গে পাত্রী ঋতুপর্ণা বলেন, আমি নিজে একজন মেয়ে হয়ে পরিবার চালাতে অংশগ্রহন করছি। যে আমাকে জন্ম দিয়েছেন, বড় করে তুলেছেন সেও একজন মহিলা। একজন মহিলা পুরোহিত তাঁর বিবাহ কার্য সম্পন্ন করাতে তিনি যেমন খুশী তেমনই গর্বিত। ঋতুপর্ণার মতো খুশী তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব।