'বাংলাদেশের পাবনা থেকে মনোহরা আসে বাংলায়', স্মৃতির শহরে মালদহের বর্ষীয়ান মিষ্টি বিক্রেতা

 মালদহের মনোহরা উত্তরের কাশ্মীর থেকে দক্ষিণের হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত বিখ্যাত। ৫০ বছর ধরে মনোহরা মিষ্টি পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অজিত গুপ্ত।  

 মালদহের মনোহরা উত্তরের কাশ্মীর থেকে দক্ষিণের হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত বিখ্যাত। ৫০ বছর (50 years in Malda) ধরে মনোহরা মিষ্টি পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অজিত গুপ্ত (Ajit Gupta )। মালদহে কাঁপা কাঁপা হাতে পুরনো পিতলের গামলা থেকে মনোহরা তুলে দাঁড়িপাল্লায় মাপতে মাপতে সত্তরোর্ধ অজিত গুপ্ত বলেন,"আমার বাবা স্বর্গীয় অনন্তলাল গুপ্তর হাত ধরে বাংলাদেশের পাবনা জেলার শিবগঞ্জ থেকে এ মিষ্টি এসেছিলো এদেশে। ছানা না থাকায় এই মিষ্টি নষ্ট হতো কম। তাই এর কদর ছিল খুব।একসময় মালদা টাউন থেকে পাইকারেরা এসে টাউনে বিক্রির জন্য নিয়ে যেত।এখন কোথায় আর সেসব দিন", বলে আফসোস বর্ষীয়ান বিক্রেতার। ক্ষীরের তৈরি সুস্বাদু এই মিষ্টির চাহিদা একসময় গোটা মালদা জেলা জুড়ে ছিল। মূলত মালদা জেলার ইংলিশ বাজার ব্লকের ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহদীপুর গ্রামে এই মিষ্টি তৈরি হয়।

অজিত  গুপ্ত ছাড়াও এখনো এলাকার বাজারে দুই একটি মিষ্টির দোকানে মনোহরা পাওয়া যায়। তবে অজিত গুপ্তর হাতে তৈরি মনোহরার মত বিকল্প আর কোথাও নেই। ছোটবেলা বাবা অনন্ত লাল গুপ্তের হাত ধরেই মনোহরা তৈরিতে হাতে খড়ি। ৫০ বছর ধরে মনোহরা মিষ্টি পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অজিত গুপ্ত। বাংলা ছাড়িয়ে অজিত গুপ্তর হাতে তৈরি মনোহরা উত্তরের কাশ্মীর থেকে দক্ষিণের হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত খ্যাতি ছড়িয়েছে। মালদার গৌড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা আগে তাঁর তৈরী মনোহর টানে মহদিপুর  আসতেন। কলকাতার বহু মানুষের কাছে মনোহরা বরাত একসময় পেয়েছেন অজিত গুপ্ত। তবে এখন অনেকটাই চাহিদা কমেছে। বয়সের ভাড়ে আগের মত শ্রম দিয়ে মনোহর তৈরি করতে পারছেন না। আগামী প্রজন্মের কাছে মনোহরা কতটা গুরুত্ব পাবে তানিয়া অনেকটাই চিন্তিত অজিত গুপ্ত। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের রুচির অনেকটাই বদল ঘটেছে, গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি মনোহরা সহ অন্যান্য মিষ্টির প্রতি বর্তমান প্রজন্ম মুখ ফেরাচ্ছে। আধুনিক কেক প্রেস্টিতে মজেছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই কদর কমছে মনোহরা।

Latest Videos

অজিত কুমার গুপ্তা বলেন, একসময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আমার কাছে মনোহরা কিনেছেন। আগে বহু পর্যটক মনোহরা টানে মহদীপুর এসেছেন। তবে এখন আর তেমন চাহিদা নেই। মালদা শহরের পাইকারি দাও আর মনোহরা কিনতে আসছেন না। এর ভবিষ্যৎ কি তা আমার জানা নেই।  ইংরেজবাজার ব্লকের মহদীপুর বাস স্ট্যান্ড ও বাজারে প্রায় প্রতিটি দোকানে এখনও মনোহরা বিক্রি হয়। স্থানীয়দের মধ্যেই মনোহর চাহিদা রয়েছে। মূলত ক্ষীর, চিনি, নারকেল ও এলাচ দিয়ে মনোহরা তৈরি করা হয়। প্রথমে ক্ষীরের ঘানি তৈরি করা হয়। ক্ষীরের ঘানির মধ্যে দেওয়া হয় নারকেল ও এলাচ। ঘানি তৈরি সম্পূর্ণ হলে সেগুলিকে চাচা বসিয়ে গোল গোল মিষ্টির আকার দেওয়া হয়। দুইদিন সেই অবস্থায় শুকোতে দেওয়া হয়। মিষ্টি গুলি শুকিয়ে গেলেন তার ওপরে চিনির সিরা তৈরি করে প্রলেপ দেওয়া হয়। তারপরেই তৈরি হয় মনোহরা। মনোহরা সম্পূর্ণ তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।


বর্তমানে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে মনোহরা। তবে পিস হিসাবে স্থানীয় বাজারে মনোহরা বিক্রি হয়। আকারে ছোট মনোহরা দুই টাকা ও বড় মনোহরা পাঁচ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। মালদা শহরের বহু মিষ্টিপ্রেমী এখনো মহদীপুর থেকে মনোহরা নিয়ে আসছেন। অনেকেই মালদার এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির জিআই ট্যাগ দাবি তুলছেন। মিষ্টিপ্রেমী সৌমেন্দু রায় বলেন, মালদার মনোহরা সহ অন্যান্য যে সমস্ত স্থানীয় মিষ্টি গুলি রয়েছে সেগুলি জিআই ট্যাগ দেওয়া উচিত। ক্রমশ এই মিষ্টিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের খাবারের মাধ্যমে ও স্থানীয় সংস্কৃতি পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা চাইছি সরকারিভাবে এই মিষ্টির সংরক্ষণ ও বিক্রির সুব্যবস্থা করা হোক। জেলা ও রাজ্যের বাইরে ও মানুষের কাছে তুলে ধরা হোক এই সমস্ত মিষ্টি গুলি।

২৫ পয়সার পিস দরে মনোহরা বিক্রি শুরু করেছিলেন অজিত গুপ্ত। সেই সময় তাতেও লাভ হয়েছিল। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মনোহর তৈরীর সরঞ্জাম এর দামের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু সেই হিসাবে দাম পাচ্ছেন না কারিগরেরা। তাই বর্তমান প্রজন্মের মিষ্টি কারিগরেরা মনোহরা তৈরীর প্রতি ঝুঁকি হারাচ্ছে। মনোহারা বিক্রি করে লাভ অনেকটা কম থাকায় অনেকে বিক্রিও করতে চাইছেন না। তবে পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি কে ধরে রাখতে চান অজিত গুপ্তর মেয়ে তনুশ্রী গুপ্ত। মেয়ের বিয়ে  দিয়েছেন অজিত গুপ্ত তবে মেয়ে তনুশ্রী গুপ্ত বলেন, 'ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাবার হাতে তৈরি মনোহরার খ্যাতি। এমনকি আমার ঠাকুরদা ও একজন মনোহরা তৈরীর কারিগর ছিলেন। তাই আগামীতে পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যকে চালিয়ে নিয়ে যাব আমি।'

Share this article
click me!

Latest Videos

ছিঃ বাঙালি হিসাবে লজ্জা ইউনুস! Bangladesh-এর প্রধানকে ধুয়ে যা বললেন Adhir Ranjan Chowdhury
'India ফুঁ দিলে Bangladesh উড়ে jabe' বাংলাদেশকে একহাত নিলেন Agnimitra Paul, #shorts #shortsfeed
'ভাইপো মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়' কেন বললেন শুভেন্দু? দেখুন | Suvendu Adhikari | Bangla News
অবশেষে নির্ধারিত হলো RG Kar মামলার রায় ঘোষণার দিন! শেষ পরিণতি কী হবে, অপেক্ষায় পুরো রাজ্য | RG Kar
‘৫০% মুসলমান হলে West Bengal-এর অবস্থাও Bangladesh-এর মতো হবে’ বিস্ফোরক মন্তব্য Suvendu Adhikari-র