নিজের দল যে পুরসভার ক্ষমতায়, তাকেই সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করলেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শুধু পুরসভাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা নয়, মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'ধৃতরাষ্ট্র' বলেও কটাক্ষ করলেন অনুব্রত। তাঁর অভিযোগ, সবজেনেও রামপুরহাট পুরসভার দুর্নীতির প্রতিবাদ করেননি আশিসবাবু। তবে প্রকাশ্য কোনও সভা নয়, দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন অনুব্রত।
সামনের বছর রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার সঙ্গে রামপুরহাট পুরসভাতেওর নির্বাচন রয়েছে। সেই কারণে আগে ভাগে দলীয় সভা ডেকে ফাঁকফোকর মেরামতে কোমর বেঁধে নেমেছে তৃণমূল। সেই মতো বৃহস্পতিবার দলের জেলা কমিটির সভা ডাকা হয় বোলপুরে। সেখানে পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদেরও ডাকা হয়। সূত্রের খবর, সেই সভাতেই ক্ষুব্ধ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন '“সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত পুরসভা রামপুরহাট। আশিসবাবু সব জেনেও ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধ
হয়ে রয়েছেন। তিনি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।'
প্রসঙ্গত, রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংখ্যাধিক্য কাউন্সিলর জেলা সভাপতির কাছে অভিযোগ জানান। তারই মাঝে চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্বাস হোসেনের সঙ্গে চেয়ারম্যানের হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয় অনুব্রত
মণ্ডলকে।
এর পর অনুব্রত মণ্ডল পাঁচজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটি ছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীনাক্ষী ভকতের স্বামী, দলের শহর কার্যকারী সভাপতি সৌমেন ভকত। কিন্তু তিনিও একটি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পরেন। সিপিএম
তাঁদের দুর্নীতি নিয়ে একটি কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করে আন্দোলনে নামে। জেলাশাসক থেকে রামপুরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় সিপিএমের পক্ষ থেকে। অভিযোগের তদন্তের জন্য পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির
প্রধান করা হয় আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, সেই রিপোর্টে কী উঠে এসেছে, তা কেউই জানতে পারেননি। ফলে পুরসভা পরিচালনায় ফের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই দ্বন্দ্বে রামপুরহাট পুরসভায় সাতমাস ধরে উন্নয়ন খাতে কোন অর্থ আসেনি। ফলে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ রামপুরহাট শহরের মানুষ। যার জেরে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফলাফল খারাপ হয়েছে রামপুরহাট শহরে। এতেই ক্ষুব্ধ দলের জেলা সভাপতি।
রামপুরহাট পুরসভা নির্বাচনে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে বিশেষ দেওয়া হয়েছে। দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ ওরফে রানা বলেন, 'রামপুরহাটের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচটি পুরসভাকে সতর্ক করা হয়েছে। মানুষকে পাশে নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কৃষি দফতরে কাজ থাকায় বোলপুরের সভায় যেতে পারেনি। তবে দল যে নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করব। আর সভায় কী হয়েছে, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।'