ছবি এঁকে পরজন্মের কথা বলে ভিক্ষে করেন ওঁরা, জুটছে না ইহজন্মের চালটুকুও

Published : Apr 21, 2020, 06:55 PM ISTUpdated : Apr 21, 2020, 07:10 PM IST
ছবি এঁকে পরজন্মের কথা বলে ভিক্ষে করেন ওঁরা, জুটছে না ইহজন্মের চালটুকুও

সংক্ষিপ্ত

লকডাউনে বেজায় বিপাকে শ্যামসুন্দর গ্রাম এই গ্রামের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম ভিক্ষে  ছবি এঁকে অর্থ উপার্জনই এদের পেশা ওই ছবি এঁকে পরজন্মের কথা বলে ভিক্ষে নেয় এরা

বুদ্ধদেব পাত্র: ছবি এঁকে পরজন্মের কথা বলে ভিক্ষে করেন ওঁরা। কিন্তু লকডাউনে বাজারে সেই ভিক্ষেটুকুও জুটছে না। কারণ, পাড়া থেকে পাড়ায় যাওয়ার ওপর তৈরি হয়েছে বিধিনিষেধ। এদিকে ঘরে চাল বাড়ন্ত। রেশন থেকে পাওয়া চাল ফুরিয়ে গিয়েছে কবেই। তাই, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার শ্য়ামসুন্দরপুর গ্রামের আশি ঘর চিত্রকর পরিবার আপাতত অর্ধাহারেই দিন কাটাচ্ছে। 

এই চিত্রকর পরিবারগুলো প্রজন্মের-পর-প্রজন্ম ধরে ছবি এঁকে গান গেয়ে ভিক্ষে করে বেড়ায়। গ্রামে কোথাও কেউ মারা যাওয়ার খবর পেলে সেখানে চলে যান এই চিত্রকররা। ছবি এঁকে গানের সুরে গল্প বলতে থাকেন। কী সেই গল্প? ধরা যাক, কোনও বাড়িতে কেউ মারা গিয়েছেন। এবার তাঁর প্রিয়জনদের কাছে গিয়ে এঁরা বোঝান, সেই মৃত ব্য়ক্তি এখন কোথায় আছেন। তিনি যমের দুয়ার অবধি পৌঁছেছেন কিনা। তাঁর স্বর্গে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে কিনা। আর তারপর তাঁরা দাবি করেন সামান্য় কিছু ভিক্ষের চাল। আজকের ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় স্মার্ট সিটিতে বসে এই চিত্রকরদের বেঁচেবর্তের থাকার এহেন ছবিটা কল্পনা করা বেশ কষ্টকর ঠিকই। তবে গ্রাম বাংলার প্রাচীন অনেক রীতির মতো এটিও টিকে রয়েছে পুরুলিয়ার বেশ কিছু জায়গায়।  ভালো হোক কি মন্দ,  রঘুনাথপুর থানার বাবুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে শ্যা মসুন্দরপুর গ্রামের প্রায় আশিটি চিত্রকর পরিবার এখনও এই ঐতিহ্য় বজায় রেখে চলেছে  নিজেদের পেটের তাগিদেই। কার্যত, এইভাবে ছবি এঁকে গান গেয়ে ভিক্ষে করা ছাড়া আর কোনও রোজগারের পথ এঁদের সামনে  খোলা নেই। 

এদিন শ্য়ামসুন্দরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে রয়েছেন চিত্রকররা। কেমন কাটছে লকডাউনের ভেতর? প্রশ্ন শুনেই সতীশ চিত্রকর, কীর্তন চিত্রকর, বিনলতা চিত্রকররা সব সমস্বরে বলে উঠলেন, "ভিক্ষের ওপর সংসার চলে। লকডাউনের সময়ে বাইরের লোককে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কোনও গ্রামে। তাই ভিক্ষে বন্ধ। খাওয়াও বন্ধ।" কিন্তু রেশন থেকে পাননি চাল? প্রশ্ন শেষ হতে-না-হতেই আবারও সমস্বরে উত্তর এলো, "সে তো কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এনজিও-র কয়েকজন লোক এসে দু-কিলো চাল আর কিছু আলু দিয়ে গিয়েছিল গ্রামে। তা-ও সবাই পায়নি। এখন  বাজারে ভিক্ষে করে কিছু কাঁচা সবজি ছাড়া  আর কিছুই জুটছে না।"  

বছর সত্তরের বৃদ্ধা লতিকা চিত্রকর আনমনে বসেছিলেন ঘরের দাওয়ায়। জিজ্ঞেস করলাম, এর আগেও কত মারী মন্বন্তর হয়েছে, তখনও তো বন্ধ ছিলো ভিক্ষে? বৃদ্ধা বললেন, "সত্তর বছর বয়স হয়েছে। এমন অবস্থা জীবনে কখনও দেখিনি। সেই বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকেই এভাবে ছবি এঁকে ভিক্ষে করে খাচ্ছি পরজন্মের কথা শুনিয়ে। এখন দেখছি ইহজন্মের চালটুকুও জোটাতে পারছি না।"  

PREV
click me!

Recommended Stories

Today live News: উত্তুরে হাওয়ায় বঙ্গে শুরু শীতের ঝোড়ো ব্যাটিং, আর কতটা নামবে পারদ? রইল বিরাট আপডেট
উত্তুরে হাওয়ায় বঙ্গে শুরু শীতের ঝোড়ো ব্যাটিং, আর কতটা নামবে পারদ? রইল বিরাট আপডেট