পাঁচদিন পরেও খনিগর্ভে নিখোঁজ তিন যুবক, এনডিআরএফ এলেও স্থানীয়দের ভরসা 'লাদেন'-ই

  • পাঁচদিন ধরে কুলটি থানার আলডিতে বেআইনি খনিতে আটকে আছেন তিন যুবক
  • বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে এসেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দল
  • ক্রমে যুবকদের পরিবারের আশা কমছে
  • স্থানীয় ছিঁচকে এক চোরই তাদের উদ্ধার করতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা

 

amartya lahiri | Published : Oct 17, 2019 5:36 AM IST / Updated: Oct 17 2019, 11:10 AM IST

দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচদিন। কুলটি থানার আলডিতে বেআইনি খনিতে আটকে পড়া তিন যুবকের এখনও কোনও খোঁজ মিলল না। ক্রমশ আশা কমছে  সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু, কালীচরণ কিস্কুদের পরিবারের। খনিগর্ভের মুখেই প্রিয়জন এবং পরিবারের একমাত্র রোজগেরেদের জন্য অপেক্ষায় ভিড় করে আছেন তাঁরা। মঙ্গলবার আচমকা উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখার পর বুধবার উদ্ধারকাজে এসেছিল সিভিল ডিফেন্সের একটি দল। তারাও কিছু করতে পারেনি। তাই এখন শেষ ভরসা 'লাদেন'।

কে এই লাদেন? তার আসল নাম অশোক চৌধুরি। ছোটখাটো চুরি, হাতসাফাই-এর মতো কুকীর্তির কারণে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছে। কুলটি থানা, নিয়ামতপুর ফাঁড়ি ও হীরাপুর থানার পুলিশ কর্তাদের পরিচিত মুখ। কিন্তু এর পাশাপাশি খনি থেকে উদ্ধারের বিষয়ে অসাধ্যসাধন করতে পারে সে, এমন পরিচিতিও রয়েছে।

সোমবার ইসিএলের মাইনস্ রেসকিউ স্টেশনের উদ্ধারকারী দল এসেছিল আটকে পড়া তিন যুবককে উদ্ধারের জন্য। অক্সিজেন সরবরাহের ছোট মেশিন, যা 'সেল্ফ কন্টেনার সেল্ফ রেসকিউয়ার' নামে পরিচিত, তাই নিয়ে তারা উদ্ধারের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু খনির মুখ ছোট হওয়ায় সেই সেলফ রেসকিউয়ার মেশিনের টিউব ফেটে যায়। গ্রামবাসীরাও খনির মুখ দিয়ে ভিতরে নামার চেষ্টা করেছিলেন। তারাও গ্যাসের জন্য ফিরে আসতে বাধ্য হন। মঙ্গলবার অনেকটাই ভাটা পড়েছিল উদ্ধারকাজে। বুধবার সিভিল ডিফেন্সের দলটি জানিয়ে দেয় জলে ডুবে গেলে উদ্ধার করা সম্ভব, কিন্তু খনির ভিতরে নেমে উদ্ধার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দলও। কিন্তু তারপরেও নিখোঁজদের পরিবার ও স্থানীয়রা চাইছেন 'লাদেন'-কেই উদ্ধারের কাজে লাগানো হোক। দুর্ঘটনার পর থেকেই ঘটনাস্থলে দেখা মিলেছে তার। কিন্তু পুলিশ অবৈজ্ঞানিকভাবে কাউকে খনিতে নামতে দিতে রাজি নয়। তাই পুলিশ থাকাকালীন সে কখনই সামনে এগিয়ে আসেনি। কিন্তু পুলিশের অনুপস্থিতিতে বেশ কয়েকবারই লাদেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত খনিতে অনায়াসে নেমে কিছুদূর গিয়ে উঠে এসেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি আলডিহির আট নম্বর বস্তির এক পরিত্যক্ত ব্রিটিশ খনি থেকে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করেছিল সে। বছর দুয়েক আগে কাকরসোল এলাকার পরিত্যক্ত খাদান থেকে দেহ উদ্ধারে সাহায্য করেছিল। লাদেনের এই ইতিহাসও স্থানীয়দের মনে বিশ্বাস এনে দিয়েছে, পারলে সেই পারবে।

এই ক্ষেত্রে যেখানে সবাই প্রায় ব্যর্থ, সেখানে লাদেন কীভাবে খনিতে ঢুকবে? লাদেন নিজেই জানিয়েছে তার পরিকল্পনার কথা। প্রথমে খনির মুখ প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে বড় একজস্টেড ফ্যান চালাতে হবে। তারপর ব্লিচিং ছড়িয়ে দিতে হবে খনির সুড়ঙ্গে। তাতেই কার্বন মনোক্সাইড গ্যসের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া খনির মুখ কেটে চওড়া করে দিলেও গ্যাস বেরিয়ে যেতে পারে। তারপরই খনিতে নেমে ওই যুবকদের উদ্ধার করা সম্ভব। তবে, যুবকদের বেঁচে থাকার আশা, সেও দিচ্ছে না।  

 

Share this article
click me!