আজ বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ফের তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন সব্যসাচী দত্ত। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।
২০১৯ সালে তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপি (BJP)-তে যোগ দিয়েছিলেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta)। ২০২১-এ পুরোনো দলে ফিরলেন তিনি। আজ বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) উপস্থিতিতে ফের তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও (Firhad Hakim)। যোগ দেওয়ার পর বলেন, "ভুল বোঝাবুঝির জন্য দল ছেড়েছিলাম। আমায় আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) গ্রহণ করেছেন, পার্থদা, ববিদা গ্রহণ করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। দল যে ভাবে বলবে সে ভাবে কাজ করব।"
২০১৯ সালের দেবীপক্ষে (Devi Paksha) ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায় (Mukul Roy) ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী। এরপর তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। কিন্তু, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিজেপি-তে থাকলেও সব্যসাচীর বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে দলবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগ উঠছিল। দুর্গাপুজো (Durga Puja) নিয়েও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি।
আসলে এবার সল্টলেকে বিজেপির পুজো হবে কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় রয়েছে। আর পুজো নিয়ে কোনও হেলদোলও দেখা যাচ্ছে না নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তা নিয়েই মন্তব্য করেছিলেন সব্যসাচী। তিনি বলেছিলেন, গতবার ভোট ছিল তাই পুজো হয়েছে। এবার ভোট নেই তাই পুজোও নেই। এর প্রেক্ষিতেই দিলীপ বলেন, "বিধি অনুযায়ী পুজো হওয়া উচিত। ভোট দেখে পুজো হওয়া ঠিক নয়। যাঁরা পুজো করেছিলেন তাঁদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।" এরপর লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়েও দিলীপের সঙ্গে তাঁর মত পার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। এভাবে বেশ কিছু দিন ধরেই বেসুরো ছিলেন তিনি। আর ততই বাড়ছিল তাঁর ঘরওয়াপসির সম্ভাবনাও।
আরও পড়ুন- আজ বিধায়ক পদে শপথ নিলেন মমতা, প্রচলিত রীতি ভেঙে পাঠ করালেন রাজ্যপাল
এক সময় মুকুল রায়ের হাত ধরেই বিজেপি-তে গিয়েছিলেন সব্যসাচী। মুকুলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা সকলেরই জানা। এদিকে মুকুল তৃণমূলে ফেরার পরও সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে জানা গিয়েছে। তারপর বিধানসভা নির্বাচনে বিধাননগরে পদ্মের টিকিটে ভোট লড়েও পরাজিত হন সব্যসাচী। এরপর থেকেই দলের নীতি নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হন। তাঁর বিরুদ্ধে দলেবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগও উঠেছিল। বারবার নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধী দেখা দেয়। একই সঙ্গে বিজেপি নেতারা দাবি করতে থাকেন, তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সব্যসাচী। আর সেই জল্পনাকে উসকে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।
আরও পড়ুন, Subrata Mukherjee: আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়
অবশেষে জল্পনার অবসান হল বৃহস্পতিবার। শেষপর্যন্ত অবশ্য বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়ক হিসেবে মমতার শপথগ্রহণের কিছুক্ষণ পরেই বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে যান সব্যসাচী। আর সেখানেই ফিরহাদ হাকিম এবং পার্থর থেকে হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন। এরপর জানান, দীর্ঘদিন বিধায়ক ছিলেন। পুরপ্রতিনিধি ছিলেন। পুরোটাই সম্ভব হয়েছে মমতাদিকে সামনে রাখার জন্যই। দলের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য ‘আবেগতাড়িত’ হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- তোড়জোড় তেমন নেই, ইজেডসিসির পুজো উদ্বোধন করতে পারেন জেপি নাড্ডা
বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক পদে ছিলেন সব্যসাচী। পাশাপাশি আসন্ন খড়দার উপনির্বাচনে তাঁকে ইনচার্জ করেছিল বিজেপি। ফলে উপনির্বাচনের আগেই তাঁর দলবদলের জেরে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। যদিও প্রকাশ্যে সব্যসাচীর দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য নেতৃত্ব।