রাজ্য রাজনীতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মুকুল রায়। সংসদয়ী রাজনীতিতে না থেকেও তিনি বরাবারই রাজ্যরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। এখন বিধায়ক হয়েও নিজের অবস্থান বজায় রেখেছেন বলা যেতেই পারে। তবে মুকুল ঘনিষ্টেদের সূত্রে পাওয়া খবর, বিজেপিতে গিয়ে তিনি তেমন স্বস্তিতে নেই। বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হলেও তিনি নাকি কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন গেরুয়া শিবিরের থেকে। তাতে জল্পনা আরও বাড়িয়েছে দিলীপ ঘোষের ডাকা পর্যালোচনা বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি। আর সেই জল্পনার আগুনেই ঘি ঢাললেন তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূল সাংসদ আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন মুকুলের দলে ফেরা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এনডিটিভিকে বুধবার সন্ধ্যায় সৌগত রায় বলেছেন, 'এমন অনেকেই আছেন প্রয়োজনের সময় তাঁরা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও এখন দলে ফিরে আসতে চাইছেন, তাঁদের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যোগাযোগ রেখে চলেছেন।' পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌগত রায় আরও বলেছেন, তিনি মনে করেন প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে বিবেচনা করা প্রয়োজন। একটি 'হার্ডলাইনার' অন্যটি 'সফট লাইনারা'।
হার্ডলাইনার আর সফটলাইনা-এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সৌগত রায়। সফ্টলাইনারের তালিকাভুক্ত হবেন তাঁরা, যাঁরা দলত্যাগের পরেও দলনেত্রী সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলেননি। দলনেত্রীকে কোনও অপমান করেননি। কট্টরপন্থীরা প্রকাশ্য়েই দলনেত্রীকে অপরমান করেছেন। কথা প্রসঙ্গে সৌগত রায় শুভেন্দু অধিকারী আর মুকুল রায়ের তথাও উত্থাপন করেন। তিনি বলেন দল বদলের পর শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার দলনেত্রী সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছিলেন। বদনাম করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুকুল রায় দল ছাড়লেও দলনেত্রী সম্পর্কে কোনও খারাপ মন্তব্য করেননি। মুকুল রায় সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রথম সারির নেতা এজাতীয় মন্তব্য এই প্রথম করলেন। যা আরও জিয়ে রাখল তাঁর প্রত্যাবর্তন ইস্যুকে।
মুকুল রায়- তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম কোনও বড় নেতা, যিনি ২০১৭ সালে দল পরবর্তন করেছিলেন। তার হাত ধরেই একে একে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা দল পরিবর্তন করে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছিল। কিন্তু ভোট পরবর্তী বাংলায় ক্রমশই প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপি নেতৃত্বে অন্তর্দ্বন্দ্ব। তবে এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে গোটা বিষয়টিকেই রহস্যঘনীভূত করে রেখেছেন মুকুর রায়।
ভোটের পর থেকেই বিজেপি নেতাদের একাধিক মন্তব্য ক্রমশই উস্কে দিচ্ছে দল পরবর্তনের জল্পনা। বিজেপির টিকিটে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়। তারপর তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে তাঁর বিজেপির সঙ্গে দূরত্বের ছবিটা। অন্যদিকে মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে দেখেতে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্নে তথা তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাকি ব্যক্তিগত স্তরে মুকুলপত্নীর খোঁজখরব নিয়েছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত দল বদলের বিষয়ে নীরবতাই পালন করে এসেছেন মুকুল রায়। তবে তাঁর বাড়িতে নাকি প্রায়ই তাঁর অনুগামীরা আসা যাওয়া করছেন। দফায় দফায় হচ্ছে বৈঠক। দক্ষ সংগঠক হিসেবে গোটা বাংলায় মুকুল রায়ের প্রভাব রয়েছে। সূত্রের খবর জেলার অনুগামীদের সঙ্গেও নাকি তিনি কথাবার্তা বলছেন। যা নিয়ে নাকি বিজেপির অন্দরেও রয়েছে অস্বস্তি।