হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা আনেসুর রহমান। তারপর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা জুড়ে।
প্রতিদিনের মতোই বাড়ি থেকে সকাল বেলায় ব্যবসার সূত্রে বেরিয়েছিলেন এলাকার তৃণমূলের কনভেনার তথা ব্যবসায়ী আনেসুর রহমান(৫০)। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে রাত চলে গিয়ে পরের দিনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা আনেসুর রহমান। তারপর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা জুড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিছাপা গ্রামে। পরিবারের লোক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পুরনো শত্রুতার জেরে হয় তো আনেসুর রহমানকে কেউ বা কারা অপহরণ করে থাকতে পারে। এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ সূত্রের খবর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতি ছাপা গ্রামের বাসিন্দা ইট ব্যবসায়ী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত আনিসুর রহমান রবিবার সকাল বেলায় সাড়ে সাতটা নাগাদ ভাটায় যাচ্ছি বলে বেরিয়ে যান। তারপর বেলা গড়িয়ে গেল কোন খোঁজ পাওয়া যায় না আনেসুর বাবুর। পরিবার ও স্থানীয় লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর চালিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাননি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ভালুকা ফাঁড়ি ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরিবারের লোক ও গ্রামের লোকদের দাবি আনেসুর বাবু ভালো মানুষ। কারো সঙ্গে কোনোদিনও বিবাদে জড়ান নি। বছর খানেক আগে ইট কেনা বেচা সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে কালিয়াচকের কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর বচসা হয়। সেখানেই আনেসুর বাবুকে হুমকি দেওয়া হয় দেখে নেওয়ার। এছাড়াও সুলতান নগর এলাকাতেও টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়েও স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার গন্ডগোল ছিল। এখন পরিবারের দাবি আনেসুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে নিশ্চয়ই ওদের হাত রয়েছে।
পরিবারের লোকেরা চান প্রশাসন তৎপর হয়ে আনেসুর বাবুকে উদ্ধার করুক। এ প্রসঙ্গে আনেসুর রহমানের স্ত্রী বিবি মাসেদা জানান প্রতিদিনের মতোই আমার স্বামী গত রবিবার সকাল বেলায় বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া করে কাজে বের হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি বাড়ি ফেরেন না। আমরা এলাকার খোঁজ-খবর চালিয়ে কোনো খোঁজ পায়নি। আমাদের মনে হচ্ছে তার নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কোন নিশ্চয়ই কারণ আছে। কেউ বা কারা আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে আমরা চাই পুলিশ সঠিক কারণ খুঁজে আমার স্বামীকে উদ্ধার করুক।
নিখোঁজ আনেসুর রহমানের ছেলে নুর ইসলাম জানান বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরা পরিবারের লোকেরা গভীর চিন্তায় আছি। বহু বছর আগে ইট কেনা-বেচা সংক্রান্ত ব্যাপারে কালিয়াচকের বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে আমার বাবার গন্ডগোল হয়। তারা আমার বাবাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এছাড়াও সুলতাননগর এলাকার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে ব্যবসায়িক বিবাদ রয়েছে বাবার। আমাদের সন্দেহ এই ব্যাপারে কেউ বা কারা আমার বাবাকে অপহরণ করে থাকতে পারে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করে আমার বাবাকে উদ্ধার করুক।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন জানান আমরা রবিবার রাত্রে বেলা শুনতে পাই এলাকার তৃণমূলের বুথ কনভেনার তথা ব্যবসায়ী আনেসুর রহমানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আনেসুর বাবু এলাকায় ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কারো সঙ্গে ঝগড়া গন্ডগোল ছিল না। তবে শোনা যাচ্ছে ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে বাইরের কিছু লোকের সঙ্গে গণ্ডগোল হয়েছিল। এখন তারাই এই ব্যাপারে জড়িয়ে আছে কিনা সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মকবুল হোসেন জানান আনেসুর রহমান এলাকার দুটি বুথের কনভেনার ছিলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় তৃণমূল করতেন। এলাকার বিভিন্ন সালিশি সভায় তাকে ডাকা হতো। শুনতে পেয়েছি ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে কালিয়াচকের কিছু লোকের সঙ্গে তার বিবাদ হয়েছিল। আশা করছি পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা নির্ণয় করবে।
ঘটনার অভিযোগ পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ তদন্তে নেমেছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানান ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।