চন্দ্রবোড়ার কামড় খেয়ে তারকেশ্বর থেকে ক্যানিংয়ে পাড়ি, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন কৃষক

  • জমিতে জলের পরিমান কেমন আছে তা দেখতে গিয়েছিলেন দীনবন্ধু 
  •  জমির আলের উপর দিয়ে হাঁটার সময়  তাঁকে চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ায় 
  • মুহূর্তেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন ওই প্রৌঢ়, বাড়িয়ে এসে সব জানান 
  • তারপর চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আসা হয় তাঁকে 
     

Asianet News Bangla | Published : Oct 4, 2020 6:20 AM IST / Updated: Oct 04 2020, 11:58 AM IST

 
কলকাতার বড় বড় সরকারি হাসপাতাল নয়, সাপের কামড়ের চিকিৎসায় রাজ্যবাসীকে ভরসা যুগিয়েছে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল। তা আরও একবার প্রমানিত হল। সুদূর ১৩৫ কিলোমিটার দূরের হুগলী জেলার তারকেশ্বর থেকে তাই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলেন পরিবারের সদস্যরা। এই ভরসার মর্যাদা রেখেছেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে সুস্থ আছেন দীনবন্ধু মাইতি নামে ঊনষাট বছরের ঐ সাপে কাটা রোগী।

আরও পড়ুন, ক্লাস ৮ পাশ করলেই কলকাতায় চাকরি, বিজ্ঞপ্তি জারি করল ভারতীয় ডাকবিভাগ

পরিবার সূত্রের খবর, গত সোমবার সকাল ১০ টা নাগাদ জমিতে জলের পরিমান কেমন আছে তা দেখতে গিয়েছিলেন দীনবন্ধু। যখন তিনি জমির আলের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন ঠিক তখনই তাঁকে একটি চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসে পরিবারের বাকি সদস্যদের বিষয়টি জানান তিনি। এদিকে যত সময় যেতে থাকে ততই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন এই প্রৌঢ়। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাঁকে নিয়ে যান স্থানীয় ধনিয়াখালি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা করেন তাঁর। অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে দেওয়া হয় ১০ টা এভিএস। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে দ্রুত কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পরিবারের লোকেরা সুদূর হুগলী থেকে কলকাতা পার হয়ে সুন্দরবনের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চলে আসেন দীনবন্ধুকে নিয়ে। 

আরও পড়ুন, রবিবার ফুলবাগান-মেট্রোর উদ্বোধন, দীর্ঘ ২৬ বছর পর পাতালের স্টেশন ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে


এতটা পথ আসতে অনেকখানি সময় লেগে যায়। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যখন তাঁরা পৌঁছন তখন প্রায় সন্ধ্যা। রোগীর অবস্থা ও খারাপ হতে থাকে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তড়িঘড়ি সিসিইউ-তে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় ঐ সাপে কাটা রোগীর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অন্যান্য আনুসঙ্গিক ওষুধের পাশাপাশি আরও ৪০ টি এভিএস দেওয়া হয় তাঁকে। বর্তমানে দীনবন্ধুর অবস্থা স্থিতিশীল। দীনবন্ধুর ছেলে প্রদীপ্ত মাইতি বলেন, ' বাবাকে যখন সাপে কামড়াল তখন বিভিন্ন পরিচিতকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তাঁদেরই একজন আমায় বলে সাপে কাটা রোগের চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের নাম রয়েছে। আমি নিজেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাপে কাটা রোগের চিকিৎসায় ক্যানিং হাসপাতালের নাম শুনেছিলাম। তাই ধনিয়াখালি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কলকাতায় রেফার করলেও আমরা এই হাসপাতালের উপর ভরসা করে নিয়ে আসি।'

আরও পড়ুন, 'ধর্ষণ রোধে, নারীদের দাও ফাঁসি', হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ডের পর বিস্ফোরক গানের লাইনে তসরিফ খান

বরাবরই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সাপের কামড়ে রোগীর চিকিৎসা সুনামের সঙ্গে করে আসছেন এখানকার চিকিৎসকরা। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় কালাচ, কেউটের কামড়ের পাশাপাশি আশপাশের ব্লক থেকে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের বহু রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার লাগাতার আন্দোলন ও দাবির ফলে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সাপের কামড়ের চিকিৎসার কথা মাথায় ১২ বেডের সিসিইউ করা হয় বছর সাতেক আগে। তৈরি হয় সাপের কামড়ের চিকিৎসার ট্রেনিং সেন্টার। যেখানে সারা রাজ্য থেকেই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ট্রেনিং নিতে আসেন। হাসপাতালে সিসিইউ তৈরি হওয়ায় বহু সাপে কাটা রোগী প্রাণে বেঁচেছেন। 

আরও দেখুন, ভিসা ছাড়াই বিশ্ব-ভ্রমণ, বহাল তবিয়তে এই ১৬ টি দেশে ঘুরে আসতে পারবেন ভারতীয়রা, দেখুন ছবি


তবে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে ডায়লোসিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে কোনও ডায়লোসিস সেন্টার নেই। এখানে ডায়লোসিস সেন্টার তৈরি হলে সাপের কামড়ে চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এই হাসপাতালের সুপার অপূর্বলাল সরকার বলেন, ' আমাদের হাসপাতাল সারা রাজ্যের মানুষের কাছে সাপের কামড়ে চিকিৎসার অন্যতম ভরসা। তাইতো সন্দেশখালি থেকে হাসনাবাদ, হুগলী থেকে মুর্শিদাবাদের মানুষজন এই হাসপাতালের উপর ভরসা করেন। এখানকার চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসায় সিদ্ধহস্ত। তবে ডায়লোসিস সেন্টারের অভাবে কিছু কিছু সময় সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।' সাপে কাটা রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ' এই হাসপাতালে আমরা ৪০টির বেশি চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসা করেছি। কালাজ ও কেউটের কামড়ে আসা বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছি। সঠিক সময়ে হাসপাতালে এলে প্রান বাঁচানো সম্ভব। ফলে সাপে কামড়ালে হাসপাতালে আসুন, ওঝা গুনিনের কাছে নয়।'

Share this article
click me!