প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন শুভব্রত। শুভেন্দুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার ফলে কাঁথিতে থাকতেন তিনি।
দেহরক্ষীর রহস্যমৃত্যু মামলায় রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করল সিআইডি। সোমবার সকালে তাঁকে ভবানীভবনে তলব করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সকাল ১১টা নাগাদ ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। যদিও এই তলব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি শুভেন্দু।
প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন শুভব্রত। শুভেন্দুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার ফলে কাঁথিতে থাকতেন তিনি। ১৩ অক্টোবর ২০১৮ সাল। প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টার সময় স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলেন শুভব্রত। জানিয়েছিলেন ওইদিন বাড়িতে ফিরবেন তিনি। এরপর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে স্কুলে বেরিয়ে পড়েন সুপর্ণা। বেলার দিকে স্কুলের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ ১১টা ২০ নাগাদ তাঁকে ফোন করেন তাঁর জা। দ্রুত সুপর্ণাকে বাড়ি ফিরতে বলেন। এরপর তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন শুভব্রতকে গুলি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান শুভব্রতর দুই দাদা এবং অন্য আত্মীয়রা। অভিযোগ, সেখানে শুভব্রতর কোনও চিকিৎসা হয়নি। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই তাঁকে ফেলে রাখা হয়েছিল। এদিকে শুভব্রতর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে বলেন। কিন্তু, কাঁথি থেকে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স পেতে এতটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল যে আর স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি সুপর্ণা। কলকাতায় যাওয়ার আগেই শুভব্রতর মৃত্যু হয়।
স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল সুপর্ণার মনে। তাঁর প্রশ্ন, কেন গুলি চালানো হল, কেনই বা একজন মন্ত্রীর দেহরক্ষী হয়ে অ্যাম্বুলেন্স পেতে দেরি হল। তাহলে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সেদিন অ্যাম্বুলেন্স দেরিতে এসেছিল? এই ধরনের একাধিক প্রশ্ন বছরের পর বছর নিজের মনের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন তিনি। অবশেষে সেই রহস্য উদঘাটন করতেই চলতি বছরের জুলাইতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ঘটনার এত বছর পরে কেন তিনি অভিযোগ দায়ের করলেন তার উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই একাধিক বিষয় নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারী প্রভাবশালী মানুষ, তাই প্রথমেই তিনি মুখ খুলতে পারেননি। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। তাই এখন মুখ খোলার সাহস পেয়েছেন।
আরও পড়ুন- বড়বাজারে ভেঙে পড়ল বহু পুরোনো বাড়ি, আতঙ্কে বাইরে সবাই, জখম বৃদ্ধা
আরও পড়ুন- জমি বিবাদের জের, মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে অপহৃত মা
আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ১২ জুলাই এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। ওইদিনই মহিষাদলের সরবেড়িয়া গ্রামে সুপর্ণার বাড়িতে আসে সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল। শুরু হয় খুনের মামলার তদন্ত। ১৮ জুলাই কাঁথি থানায় যান সিআইডি আধিকারিকরা। পুলিশ ও কাঁথি হাসপাতালের ২ চিকিৎস, নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া শুভেন্দুর বাড়ি শান্তিকুঞ্জের উল্টোদিকে নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জায়গাতেও যান সিআইডি আধিকারিকরা। তারপরই এই প্রেক্ষাপটেই আগামী সোমবার শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করেছে সিআইডি।