রাতে বাড়ির ফেরার সময়ে যদি দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়েন, তাহলে আত্মরক্ষার কাজ লাগবে। সেকথা চিন্তা করেই গাড়িতে একটি লাঠি রেখে দিয়েছিলেন। সেই লাঠি দিয়ে শেষে কিনা তাঁর স্ত্রীকে পিটিয়ে খুন করল গাড়ি চালক! হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এমনটাই জানিয়েছেন বর্ধমানে আক্রান্ত চিকিৎসক সুব্রত নাগ। ওই চিকিৎসকের দাবি, পুজোর সময়েও জোর করে তাঁর কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করার চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত গাড়ির চালক। শেষপর্যন্ত অবশ্য হাতে পায়ে ধরে ক্ষমাও চেয়ে নেয় সে। স্ত্রীর অনুরোধে গাড়ির চালককে আর কাজ থেকে বরখাস্ত করেননি তিনি।
বর্ধমান শহরের তুলা লেনে স্ত্রীর মৌসুমীর সঙ্গে থাকতেন চিকিৎসক সুব্রত নাগ। প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই চিকিৎসকের গাড়ি চালাচ্ছে তপন দাস নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার বিকেল আচমকাই মালিকের বাড়িতে চড়াও হয় সে। বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই কেয়ারটেকারকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় তপন। এরপরই সুব্রত ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে তাঁদেরই গাড়ির চালক। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই চিকিৎসক দম্পতিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। হাসপাতালের মৌসুমীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গুরুতর আহত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মৃতার স্বামী।
মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন আক্রান্ত চিকিৎসক সুব্রত নাগ। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি। এদিন যখন হাসপাতালে থেকে ফেরেন, তখনও মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। সুব্রত নাগ জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে পরিকল্পনা করেই বাড়িতে এসেছিল তপন। জুয়ায় লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছিল সে। বাড়িতে ঢুকেই মালিকের কাছে সেই টাকা দাবি করে অভিযুক্ত। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রথমে চিকিৎসক সুব্রত নাগকে লাঠি দিয়ে মারধর করতে শুরু করে তপন। স্বামীকে যখন বাঁচাতে যান সুব্রত নাগের স্ত্রী মৌসুমী, তখন তিনিও রেহাই পাননি। ওই মহিলাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। শেষপর্যন্ত মারা যান তিনি। আক্রান্ত চিকিৎসক আরও দাবি, তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে মারার পরিকল্পনা নাকি আগেভাগে থানায় জানিয়েওছিল অভিযুক্ত তপন দাস। তার ফাঁসির দাবি তুলেছেন চিকিৎসক সুব্রত নাগ।
এদিকে ঘটনার দিনই অভিযুক্ত তপন দাসকে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতকে তোলা হয় আদালতে। তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।