শাসনে সিপিএমের বারাসত দক্ষিণ লোকাল কমিটির দফতর। পোশাকি নাম অনিল বিশ্বাস স্মৃতি ভবন। ২০০৭ সালে ওই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ওই এলাকার নেতা ছিলেন এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মজিদ মাস্টার।
ঘরের বাইরে জ্বলজ্বল করছে কমরেড অনিল বিশ্বাস (Anil Biswas) স্মৃতি ভবন নামটা। আসলে এক কালে এখানেই ছিল সিপিএমের পার্টি অফিস (CPM Party Office)। দলীয় কর্মীদের (Party Worker) যাতায়াত লেগেই থাকত সেখানে। সারাক্ষণ চলত আলোচনা। দলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে বসত বৈঠক। কিন্তু, এখন সবই অতীত। রাজ্যের ক্ষমতা (State Power) হস্তচ্যুত হওয়ার পর থেকেই জৌলুসহীন এই পার্টি অফিস। কর্মীদেরও আর দেখা মেলে না। আসলে দলবদলুদের ভিড়ে নাম লিখিয়েছেন তাঁদের মধ্যে থেকে অনেকেই। তাই এখন এই পার্টি অফিসের মধ্যে গরু (Cow) চরে বেড়ায়। সেখানে পাকা ছাদের তলায় রাখা হয় গরুর খাবার। আর ওই ছাদের তলায় একেবারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে গরুর পালও। এখন এই ছবিই ধরা পড়েছে এক সময়ের লালদুর্গ উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) শাসনে।
শাসনে (Shasan) সিপিএমের বারাসত (Barasat) দক্ষিণ লোকাল কমিটির দফতর। পোশাকি নাম অনিল বিশ্বাস স্মৃতি ভবন। ২০০৭ সালে ওই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Bose)। ওই এলাকার নেতা ছিলেন এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মজিদ মাস্টার (Majid Master)। লোকাল কমিটির এই দফতরে সব সময় মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকত। চারিপাশে তখন কত ব্যস্ততা। কিন্তু, সে সবই এখন বড়ই ফিকে হয়ে গিয়েছে। একদা ব্যস্ততম ওই দফতর এখন পরিণত হয়েছে পশুখামারে (cowshed )। দফতরের ভিতরে ঘরে স্তূপাকারে রাখা হয়েছে বিচালি। কোথাও আবার রাখা গোবর। এক সময় যে সেখানে পার্টি অফিস ছিল তা কোনওভাবেই বোঝা যাবে না। তবে বাইরে থাকা নাম দেখে কিছুটা হলেও ঠাহর করা যাবে।
আরও পড়ুন- 'ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পরিবর্তন আনতে বিজেপি কর্মীর দেহ স্থানান্তর', অভিযোগ শুভেন্দুর
আরও পড়ুন- বাজল স্কুলের ঘণ্টা, সতর্কতা মেনে ২০ মাস পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পা পড়ুয়াদের
এক সময় শাসন ছিল লাল দুর্গ। সেখানে অত্যন্ত জাঁকজমক করে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল সিপিএমের এই দফতরটি। ২৪ ঘণ্টা দফতরের মাথায় উড়ত লাল পতাকা। এই ঠাটবাটের যার পিছনে ছিল শাসনের সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টারের ভূমিকা। কিন্তু, সেসব হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন সেই বামও নেই, নেই রাজপাটও। তাই দলীয় দফতরও এখন পরিণত হয়েছে পশুখামারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ওই ঘরগুলিতে গরু রাখেন। আসলে পাকা বাড়িতে গরুরাও নিরাপদে থাকবে, সামনের মাঠে ইচ্ছে হলে তাদের আবার চরানোও যাবে সেই কারণেই সেখানে গরু রাখার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একটা-দুটো করতে করতে এখন একাধিক গরু থাকে সেখানে।
আরও পড়ুন- পরিষেবা ব্যাহত হলে কড়া পদক্ষেপ, আরজি করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে হাইকোর্ট
এ প্রসঙ্গে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "ছোটবেলা থেকে দেখেছি এখানে সিপিএমের বড়বড় নেতারা আসতেন। সিপিএমের ঝান্ডা উড়ত। বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এখন সিপিএমের লোকও নেই। কেউ আসেন না। দলীয় দফতর খোলার মতো লোক নেই। এখানে মানুষ এখন একচেটিয়া ভাবে তৃণমূল করেন।" স্থানীয় এক সিপিএম নেতৃত্বের কথায়, ২০১১ সালের পর যেভাবে বিরোধীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে তার জেরেই কেউ আর সেখানে থাকার সাহস পাননি। সব পার্টি অফিস বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগই এখন অবহেলিত। কোথাও গরু থাকে তো কোথাও আবার অফিসগুলির অবস্থা ভগ্নপ্রায়।