নিজে দিন আনেন দিন খান। কাজ না জুটলে খাবারও জোটে না। ফলে ভাগ্যের উপর ভরসা করেই রোজ সকালে কাজ খুঁজতে বেরোন পেশায় দিনমজুর স্বপন মণ্ডল। বীরভূমের রামপুরহাটের ডাক্তারপাড়ার ওই যুবক অবশ্য তার পরেও মানবিকতা হারাননি। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে পড়ে থাকা এক নাম, পরিচয়হীন অসুস্থ মহিলাকে দু' বেলা খেতে দিচ্ছেন তিনি। শুধু খাবার দেওয়াই নয়, অসুস্থ ওই মহিলাকে নিজে হাতে খাইয়েও দেন স্বপ্নন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিহারের বাসিন্দা এক মধ্যবয়সি মহিলা প্রায় দু' বছর ধরে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়দের থেকে মৃতদের আত্মীয়রা তাঁকে দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যান। কিন্তু পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি রামপুরহাট পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তার পাড়ারব বাসিন্দা যুবক স্বপন মণ্ডল। পেশায় দিনমজুর ওই যুবক প্রতিদিন দু' বার ওই মহিলাকে খাবার দিয়ে যান। শুধু খাবার এনে দেওয়া নয়, নিজে হাতে খাবারও খাইয়ে দেন তিনি।
পেশায় দিনমজুর স্বপনের এই মহানুবতা ছুঁয়ে গিয়েছে হাসপাতাল চত্বরে থাকা বাদশাহ শেখ নামে এক ব্যক্তিকেও। তাই যেদিন কোনও কারণে স্বপন আসতে পারেন না, সেদিন বাদশাহ শেখ ওই অসুস্থ মহিলাকে খেতে দেন।
কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারে এক অচেনা মহিলাকে কেন খাবার দিচ্ছেন? স্বপন বলেন, 'ওই মহিলা চলাফেরা করতে পারেন না। কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে হাসপাতাল থেকেও তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে তাঁর আশ্রয় হয়েছে মর্গের সামনে ছাউনির নীচে। হাসপাতালের মর্গে এক নিকট আত্মীয়ের মৃতদেহ নিতে এসে ওই মহিলাকে দেখতে পাই। তারপর থেকেই রোজ খাবার দিয়ে যাই। সকালে কাজে যাওয়ার আগে টিফিন দিয়ে যাই। দুপুরে ভাত দিই।' স্বপন জানিয়েছেন, ছ' বছরের ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করেন। দু' জনের আয়ে কোনওক্রমে দু' বেলা চলে যায়।
বাদশাহ বলেন, 'আমরা প্রায়শই ওই যুবককে খাবার দিয়ে যেতে দেখেছি। নিজের হাতে অসুস্থ মহিলাকে খাবারও খাইয়ে দেন ওই যুবক। এখন তিনি এতটাই অসুস্থ যে নিজের নাম ঠিকানা বলতে পারে না। তবে একসময় তিনি বলেছিলেন যে তাঁর বাড়ি নাকি বিহারের আমরাপাড়ায়। কিন্তু পরিবারের কেউ তাঁর খোঁজে আসেননি। ফলে এভাবেই মর্গের সামনে ছাউনিতে পড়ে রয়েছেন উনি। মাঝে মধ্যে আমরা খেতে দিই।'
অসুস্থ ওই মহিলা নিজে সেভাবে কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু সব হারিয়ে অচেনা স্বপনের মধ্যেই যেন পরম আত্মীয়কে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তাই পরিবারের কেউ নয়, পেশায় দিনমজুর ওই যুবকের অপেক্ষাতেই এখন রোজ পথ চেয়ে থাকেন তিনি।