ভেঙে গেল জাত-ধর্ম-লিঙ্গের সব বৈষম্য, বাংলায় সরস্বতী পূজা করবে আদিবাসী ছাত্রী

ফের পথ দেখালো বাংলা।

বৈষম্য ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার পথ।

এক আদিবাসী ছাত্রীকে দেওয়া হল সরস্বতী পূজার দায়িত্ব।

এই বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী।

 

ভারতে যখন বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্য বাড়ছে, তখন ফের পথ দেখালো বাংলা। সারা দেশে যখন সিএএ আইন বৈষম্যমূলক বলে দাবি করে 'সংবিধান রক্ষা'র ডাক দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্য়েই জাত, ধর্ম, লিঙ্গের বৈষম্য-কে ভেঙেচুড়ে একাদশ শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীর হাতে এই বছরের সরস্বতী পূজা করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল।

আদিবাসী ওই ছাত্রীর নাম রোহিলা হেমব্রম। তাঁর বাবা চন্দন হেমব্রম। আশ্রমপুরের বামনগোলা ব্লকের সহরাবাড়ি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। বাংলাদেশ সীমানা সেখান থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে। গ্রামে মূলত আদিবাসী, নমশুদ্র এবং অন্যান্য তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস। রোহিলা পড়ে দাল্লা চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যালয়-এ। সেই স্কুলেই এবার সরস্বতী পূজা করার দায়িত্ব পেয়েছে সে। তবে, রোহিলা-কে পুজোয় সহায়তা করবেন স্কুলেরই এক অব্রাহ্মণ শিক্ষক বিনয় বিশ্বাস। প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ীর নির্দেশেই এই কাজ  করা হচ্ছে।

Latest Videos

রোহিলা হেমব্রম এই সুয়োগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সে বলেছে, 'জয়দেব স্যার' তাঁকে এই বছর পূজা করার সুযোগ দেওয়ায় সে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছে। তবে পুজো করার নিয়ম-কানুন তার জানা নেই। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষকই তাকে সহায়তা করছেন বলে জানিয়েছেন রোহিলা। ইতিমধ্যেই তাকে প্রধানশিক্ষক 'নিজের পুজো নিজে করুন' নামে একটি বই কিনে দিয়েছেন। আর 'বিনয় স্যার' তার সঙ্গে থাকছে বলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত সে।

তবে প্রচলিত নিয়ম ভাঙাটা ডাল্লা চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ঐতিহ্য বানিয়ে ফেলেছে। এর আগেও অব্রাহ্মণ শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে সরস্বতী পূজা করেছেন। আর এর সবের পিছনে রয়েছে একটি মানুষের হাত, তিনি প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী। ২০১০ সালে তিনি দাল্লা হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে এসেছিলেন তিনি। জয়দেব জানিয়েছেন, সেই সময় এক ব্রাহ্মণ পুরোহিত পুজো করতেন। কিন্তু তাঁর চাহিদার শেষ ছিল না। তাই সেই সময় প্রধান শিক্ষক নিজেই ১ টাকার বিনিময়ে পুজো করা শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে, তিনি স্কুলের সমস্ত অব্রাহ্মণ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পুজোর দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করেছেন। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। গত বছর এক অব্রাহ্মণ শিক্ষক রতন শিকদার সরস্বতী পূজা করেছিলেন। এই বছর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গণ্ডি পেরিয়ে এক আদিবাসী ছাত্রীকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন।

শুধু পুজোর ক্ষেত্রে প্রচলিত বৈষম্যমূক ধ্যানধারণা ভাঙাই নয়, জয়দেব লাহিড়ীর নেতৃত্বে দাল্লা চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক দুর্দশা রোধ করার জন্য লড়াই করে চলেছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই-এর পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা'রা গ্রামে বাল্যবিবাহ নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। জয়দেব লাহিড়ীর দাবি, গত কয়েক বছরে তাঁদের বিদ্যালয়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বাল্যবিবাহের কোনও ঘটনা ঘটেনি। স্কুলের কমপক্ষে পাঁচ জন ছাত্রী, পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। জানিয়ে দিয়েছে তারা এখন পড়াশোনা করতে চায়।

নিজের স্কুল ও তার প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী-কে নিয়ে গর্বের সীমা নেই রোহিলা-রও। সে বলেছে, 'আমাদের স্কুল সামাজিক কাজকর্ম লেগেই থাকে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহ দেন'।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

'তৃণমূলের দুয়ারে সরকার এখন দুয়ারে জঙ্গি', তীব্র আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari: 'কত বড় জিহাদি, রামনবমীর মিছিলে ঢিল মেরে দেখাও', হুঙ্কার শুভেন্দুর
খাদান নিয়ে Dev কে বিশ্রী আক্রমণ রাজের, দেবের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা দিলেন Aritra Dutta Banik
'যেসব মুসলমানরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁদেরই পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ছিল' বিস্ফোরক অর্জুন
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh