মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের পরে এবার বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা। বিনপুরের বিধায়ক এবং ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদার বিরুদ্ধে এবার কাটমানি আদায়ের অভিযোগ উঠল। তবে সরাসরি সুকুমারবাবুর বাড়িতে বিক্ষোভ না হলেও মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ একাধিক তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও করলেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অভিযোগ, সরকারি বাড়ি তৈরির প্রকল্প-সহ অন্যান্য সুবিধা প্রাপকদের কাছ থেকে কাটমানি হিসেবে মোটা টাকা কমিশন নিয়েছেন ওই নেতা। তাঁর হাত ঘুরেই কাটমানির টাকা মন্ত্রীর কাছে পৌঁছত বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।
শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়্গ্রাম জেলার বিনপুর ১ নম্বর ব্লকের দহিজুড়ি এলাকায়। শনিবার সারা দিন ধরে দফায় দফায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। এক নেতার বাড়ির জানলাও খুলে নেওয়া হয়। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পে ঘর, শৌচালয়-সহ অন্যান্য প্রকল্পের জন্য সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিধায়ক, ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদার বিরুদ্ধেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন- 'মমতার ঘরেই সব কাট মানি আছে', মুখ্যমন্ত্রীকে বেনজির আক্রমণ মুকুলের, দেখুন ভিডিও
শনিবার গ্রামবাসীরা প্রথমে মিছিল করে দহিজুড়ি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি নন্দ ত্রিপাঠীর বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর সময় ওই তৃণমূল নেতার বাড়ির জানলা ভাঙা হয় বলে অভি়যোগ। টাকা ফেরতের দাবি তোলেন গ্রামবাসীরা। নন্দবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে উত্তজিত জনতার সামনে দাবি করেন, টাকা নেওয়ার প্রমাণ দিতে পারলে তিনি অবশ্যই ফেরত দেবেন। এর পর জনতা পরপর বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা এবং প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেক নাসিরউদ্দিন, স্থানীয় নেতা সত্যনারায়ণ কর এবং শ্যামল সিংয়ের বাড়িতে। এ ছাড়াও স্থানীয় নেতা হাগড়ু শিটের বাড়িতেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। দিও এই নেতাদের কেউই বাড়িতে ছিলেন না। এঁদের পাশাপাশি দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ফাল্গুনি দের বাড়িতেও বিক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ দেখায়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই সমস্ত নেতাই প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিনপুরের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার ঘনিষ্ঠ। এই নেতাদের আদায় করা কাটমানির ভাগ সুকুমারবাবুর কাছে পৌঁছেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সুকুমার হাঁসদা বর্তমানে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার।
স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত পাল-সহ অন্যন্য গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, 'বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা স্থানীয় নেতা শেক নাসিরউদ্দিন-সহ অন্যান্য নেতাদের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকার ভাগ মানুষের কাছ থেকে নিতেন। আমরা এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।' তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, বিক্ষোভের নেপথ্যে ছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা দাবি, বিজেপি নয়, এ দিন গ্রামবাসীরাই স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে সুকুমার হাঁসদাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে লালগড় এবং বিনপুর থানার আইসি এবং ডিএসপি রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস লোধাপাড়ায় যান। সেখানে তাঁরা বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন। আশ্বাস দেন, সমস্ত অভিযোগ প্রশাসনের উপরমহলে জানানো হবে। কয়েকদিন আগে হুগলিতে কৃষি মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের বাড়ির সামনে কাটমানি ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিজেপি।