আসন পুনরুদ্ধার বনাম এলাকায় অধিপত্যের বিস্তারের লড়াই শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই ৷ একদিকে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি এবং মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ, অন্যদিকে পরিবহণমন্ত্রী এবং তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুই নেতার সেই লড়াই ক্রমেই জমে উঠেছে ৷ দুই নেতার সমর্থকদেরও জোর টক্কর শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলে৷ পুজোর ময়দানেও সেই লড়াই সমান ভাবে চোখে হল পঞ্চমী থেকেই ৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দুই হেভিওয়েট নেতা পরের পর পুজোর উদ্বোধন সারলেন ৷ তবে দিনের শেষে পুজো উদ্বোধনের নিরিখে শুভেন্দুকে টেক্কা দিলেন দিলীপই ৷ এতেও অবশ্য গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে বিজেপি-র একচেটিয়া ফলেরই প্রভাব দেখছেন কেউ কেউ।
গত কয়েকদিন ধরে দুই দলের এই দুই শীর্ষ নেতার কাছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু দুর্গাপুজোর মণ্ডপ উদ্বোধনের আমন্ত্রণ গিয়েছিল ৷ মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপবাবুর কাছে না কি ৬০টিরও বেশি আবেদন গিয়েছিল। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দুর কাছে আবেদন গিয়েছিল চল্লিশটির বেশি। দুই নেতার কারও পক্ষেই এতগুলি পুজোর উদ্বোধনে যাওয়া সম্ভব না হলেও বেশ কিছু পুজোয় হাজির হয়েছিলেন তাঁরা ৷ পঞ্চমী এবং ষষ্ঠী, এই দু’ দিনে জেলার প্রায় ৩১টি পুজোর উদ্বোধন করার কথা দিলীপবাবুর। বৃহস্পতিবার সকালে গড়বেতা থেকে পুজোর উদ্বোধন শুরু করেছেন তিনি৷ সন্ধা পর্যন্ত ১৩টি পুজোর উদ্বোধনে দিলীপ ঘোষ হাজির ছিলেন৷ ষষ্ঠীতে তিনি আরও প্রায় ১৮টি পুজোর উদ্বোধন করার কথা তাঁর।
শুভেন্দু অধিকারী পঞ্চমীতে জেলার ৭টি পুজোর উদ্বোধন করেন। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে দু'টি পুজোর উদ্বোধন করেন পরিবহণমন্ত্রী। খড়্গপুর শহরে করেন পাঁচটি ৷ এর পর পূর্ব মেদিনীপুরের পুজোর উদ্বোধনে বেরিয়ে যান তিনি৷
পুজো কমিটির দখল ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। মেদিনীপুরে অবশ্য এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে টক্কর রয়েছে। এ বার পাড়ায় পাড়ায় ছোট পুজোগুলিকে হাতিয়ার করেও ‘পুজো রাজনীতি’- তে ঢুকে পড়েছে গেরুয়া- শিবির। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, 'পুজো নিয়ে তৃণমূলের রাজনীতি করার দিন শেষ। জোর করে মানুষের মন পাওয়ার চেষ্টা কতখানি খারাপ, তা নিজেরাই বুঝে গিয়েছে ৷'
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি পাল্টা বলেন,'পুজো নিয়েও ওরা নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। মানুষ পুজোটা অন্তত রাজনীতির কচকচানি ছাড়াই কাটাতে চান।'
লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলের সবকটি আসনেই জয়ী হয় বিজেপি। মেদিনীপুর কেন্দ্রে জেতেন দিলীপ ঘোষ। এর পরেই জঙ্গলমহল পুনরুদ্দারে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন তৃণমূলনেত্রী। তার পর থেকেই দুই নেতার গরমাগরম বাক্যবাণে জমজমাট মেদিনীপুর।