এক বছরে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কমার কোনও লক্ষণ নেই। মানুষের কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার কোনও লক্ষণ নেই। অথচ গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষার নামে রাজ্যে রাজ্যে মাসে-মাসে ভোট লেগেই রয়েছে। আর তার জেরেই দখলদারির মেজাজে রাজনৈতিক নেতারা। ফেল ভোট মানেই সেই চেনা ছবি। হয় অবরোধ না হয় ভাঙচুর।
বারবনিতে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল চৌধুরীর গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন। অবিলম্বে এই রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। আসানসোলের প্রতিটি বুথকেই স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। যার জন্য এখানে ১২১ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ৫১ শতাংশ বুথে ওয়েব কাস্টিং-এ নজরদারিও চলছে। রয়েছে কিউআরটি স্কোয়াড। সেখানে দাঁড়িয়ে কীভাবে একজন প্রার্থীর উপরে মারমুখি আক্রমণ হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বারাবনির একাধির বুথে বিজেপি এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া এবং ভোট রিগিং-এর অভিযোগ পেতে থাকেন। এরপরই তিনি বারাবনির বিভিন্ন বুথে তিনি নিজে পরিদর্শন করতে শুরু করেন। ১৭৬ নম্বর বুথের কাছে অগ্নিমিত্রা গাড়ি নিয়ে আসতেই দেখেন রাস্তার উপরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে রয়েছে। এদের অধিকাংশের হাতেই ভোটার আইডি ছিল। অগ্নিমিত্রা জিজ্ঞেস করতেই তাঁরা জানান যে তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক। এমনকী অগ্নিমিত্রাকে বুথের কাছে যেতেও বাধা দিতে থাকেন এই সব মানুষ। তারা অগ্নিমিত্রার গাড়ি এবং কনভয় ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।
অগ্নিমিত্রার গাড়ির বনেটের উপর সমানে চাপড় মারতে থাকেন একদল উত্তেজিত মানুষ। এরমধ্যে কিছু মানুষ বাঁশ এবং লাঠি নিয়ে অগ্নিমিত্রার গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এহেন পরিস্থিতিতে অগ্নিমিত্রা পালের নিরাপত্তারক্ষীরাও পাল্টা প্রত্যাঘাত করেন। উত্তেজিত তৃণমূল সমর্থকদের হাত থেকে বাঁশ কেড়ে নিয়ে পাল্টা তারা মারধর করেন। এরপরই তৃণমূল সমর্থকরা অগ্নিমিত্রার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ও পাথর বৃষ্টি করতে থাকে। এতে অগ্নিমিত্রার গাড়ির কাঁচ ভাঙে। এক নিরাপত্তারক্ষীর হাত কেটে যায় এই ঘটনায়।
উত্তেজিত-মারমুখি তৃণমূল সমর্থকদের রোষের সামনে থেকে গাড়ির কনভয় নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন অগ্নিমিত্রা। সামনে কিছুটা দূর এগিয়ে পুলিশকে দেখে থেমে পড়েন। বুথের সামনে কেন পুলিশ নেই সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ ব্যক্ত করতে থাকেন। হায়-হায় বলে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগানও দিতে দেখা যায় অগ্নিমিত্রাকে। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অগ্নিমিত্রা অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই পুলিশের সহযোগিতায় বারাবনির বুথে বুথে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে ওসি বারাবনির অপসারণ চেয়েছেন বলেও জানান। এমনকী, সকালে অন্য বুথেও পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তাঁর জমা পড়েছে বলেও জানান অগ্নিমিত্রা। রাতভর বিজেপি সমর্থক এবং বিজেপি মনোভাবাপন্নদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসানি এবং হুমকি তৃণমূল কংগ্রেস দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন অগ্নিমিত্রা। বহু স্থানে ভোটদাতাদের ভোটারকার্ডও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ অগ্নিমিত্রার।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, সকাল থেকেই নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বুথের ভিতরে ঢুকে নিয়ম ভাঙছেন অগ্নিমিত্রা। নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বুথে ঢুকে তিনি ভোটকর্মী এবং সকলকে ধমক ও শাসানি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। আসানসোলের বারাবনির যে ১৭৬ নম্বর বুথে অগ্নিমিত্রার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, সেখানকার তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের অভিয়োগ, এলাকার কুখ্যাত মাফিয়া এবং দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন অগ্নিমিত্রা। তিনি এলাকায় উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। এই সব মানুষদের আরও দাবি, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও আসলে তারা এলাকার সাধারণ মানুষ। তৃণমূল সমর্থক বা কর্মী বলে যে কথা বলা হচ্ছে সেটা তাঁরা নন।
মঙ্গলবার সকালে বারাবনির ২৪১ নম্বর বুথেও পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান অগ্নিমিত্রা। রীতিমতো আঙুল উচিয়ে পুলিশের দিকে তাঁকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। অগ্নিমিত্রার অভিযোগ, পুলিশ বুথের ভিতরে ছিল। অথচ, বুথে বিজেপি এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সেই নিয়ে পুলিশ কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। পুলিশ কীভাবে নির্বাচনের আদেশ না মেনে বুথে ঢুকল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অগ্নিমিত্রা।