বয়ে গেল একের পর এক ভয়াল ঢেউ, আট ঘন্টা আমফানের সঙ্গে লড়ে জিতলেন বৃদ্ধা

একেবারে ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন অঞ্জলি বৈদ্য

বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ঢেউ

আটঘন্টা লড়ে আমফান-কে হারালেন তিনি

জিতলেন, কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তো

 

কোভিড-১৯ মহামারি, তার উপর সাইক্লোন আমফান। তারপর অনেকেই ভাবছে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে তো? নিশ্চই যাবে, আলবাত যাবে। যাবে, কারণ মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে। ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডবের মুখে ৮ ঘন্টা ধরে যুদ্ধ করে অবিশ্বাস্যভাবে যেমন জিতে এলেন অঞ্জলি বৈদ্য।  

উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বাইনারা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বুধবার বিকেল থেকেই ঝড়ের গতি বাড়ছিল। রাত ৯ টার দিকে অঞ্জলি দেবী এবং তাঁর স্বামী নিরঞ্জন বৈদ্য আর তাঁদের মাটির বাড়ির উপর ভরসা রাখতে পারেননি। ঝুপড়িতে বিশ্বাস করতে পারেননি। প্রতি মুহূর্তে ঝড়ের গতি বাড়তে থাকায় তাঁরা সেইসময় নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাড়ি ছাড়ার সময়ে আতঙ্কিত গরু-ছাগলগুলিকেও ছেড়ে দিয়েছিলেন, যাতে তারাও নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।

Latest Videos

তাদের বাড়ির কাছেই দানসা নদী। অঞ্জলি এবং নিরঞ্জন বৈদ্য যখন তাঁদের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ এলাকার দিকে যাচ্ছেন তখন আচমকাই দারুণ শব্দে পিছনে দানসা নদীর বাঁধ ভেঙে যায় এবং হুড়মুড়িয়ে জলের স্রোত ঢুকতে শুরু করে। সেই স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন প্রবীন ওই দম্পতি। তবে স্রোতের টানে মদীর পাড় থেকে ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে তাঁরা নিরাপদই থাকতেন, কারণ সেদিকেই উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সবাই।  

অঞ্জলি বৈদ্যর ভাগ্য অবশ্য মোটেই সুপ্রসন্ন ছিল না। স্রোতে ভেসে যাওয়ার পথে একটি পেয়ারা গাছের ডালে তাঁর কাপড় আটকে যায়। বাঁচার অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি তাঁর উপস্থিতবুদ্ধি হারাননি। কাপড়টি গাছে আটকে যাওয়ার পর তিনি শরীরের সব শক্তি দিয়ে গাছটিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, গাছটা হাতছাড়া হলে আর বাঁচবেন না। কিন্তু, গাছ আঁকড়ে ধরে থাকাটাকি মুখের কথা না কি? দারুণ গতিতে একের পর এক জলের স্রোত ধেয়ে আসছিল তাঁর দিকে। জানিয়েছেন, ঢেউয়ের ধাক্কায় মাথাই ধর থেকে আলাদা হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল। আরও একবার উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তিনি একেকটা স্রোত এলেই মাতা নামিয়ে নিচ্ছিলেন। মাতার উপর দিয়েই জল চলে যাচ্ছিল।

তখনও তিনি জানতেন না যে তাঁর স্বামী কোথায় আছেন বা তিনি আদৌ জীবিত আছেন কিনা। সম্ভল বলতে হাতে একটা ছোট্ট টর্চ ছিল। ওই অবস্থায় ঝড়-দলের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেই তিনি ওই টর্চটা দুলিয়ে দুলিয়ে গ্রামের লোকেদের, পাড়া-প্রতিবেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তখন সকলেই ঘরের মধ্যে। ফলে তাঁর সেই আলোক-বার্তায় কেউই সাড়া দেননি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯ টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর প্রায় চারটে পর্যন্ত ওই পেয়ারা গাছে ঝুলে একের পর এক ঢেউ ও হাওয়ার ঝাপটার সঙ্গে লড়াই করেছেন অঞ্জলি দেবী। ভোরের দিকে ঝড়ের দাপট কমে যায়। আলোও ফোটে। গ্রামের লোকজন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। তারাই তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন তাঁর স্বামী নিরঞ্জন বৈদ্যও। নদীর স্রোতের ধাক্কায় তিনি গিয়ে আটকেছিলেন একটি বাঁশঝাড়ে। পরে গ্রামের স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আটঘন্টা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন অঞ্জলি দেবী। কিন্তু তাঁদের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু এবং অন্যান্য সমস্ত জিনিসপত্র আর কিছুই নেই। যেখানে তাঁদের বাড়ি ছিল, সেখানে এখন নদী বইছে। ঝড়কে জয় করা বীরাঙ্গনা বলছেন, 'নদী আমাকে ভিখারী বানিয়ে দিয়েছে। কীভাবে আমাদের চলবে বুঝতে পারছি না'। তিনি এবং তাঁর স্বামী এবং তাঁদের মতো বসিরহাটের ওই গ্রামের আরও অন্তত ১০০ জন বাসিন্দার আপাতত ঠাঁই, টিকে থাকা বাঁধের উপর তৈরি ত্রিপলের তাঁবু।

Share this article
click me!

Latest Videos

Hooghly-তে ফের কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ED-র বড়সড় অভিযান! এলাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে | Hooghly News Today
‘Bangladesh Pakistan-এর মতো অন্ধকারে নেমে যাবে’ ঝাঁঝালো মন্তব্য BJP নেতা Samir Mondal-এর
সনাতনীদের বিশাল মিছিল! Bangladesh-এ চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবীতে Kolkata উত্তাল |Chinmoy Krishna Das
এটিএম লুঠের ছক ভেস্তে দিলো পুলিশ! ভীন রাজ্যের যোগ, চাঞ্চল্য New Barrackpore-এ | North 24 Parganas
প্রস্তুত ভারতের হিন্দুরা! সোমবার বর্ডারে যা হবে, বলে দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | Bangla News