আচমকা একটা আওয়াজ। আর তার পরেই রাস্তার উপর চলন্ত বাসের জানালা থেকে ছিটকে এসে পড়ল এক মহিলার আস্ত একটা মুণ্ডু। ততক্ষণে রক্তে ভেসে গিয়েছে কালো পিচের রাস্তা। দ্রুত গতিতে চলা বাসের জানলা দিয়ে মাথা বের করে বমি করতে গিয়ে পাশের ইলেকট্রিক পোলের ধাক্কায় ধর থেকে মুণ্ডু ছিন্ন হয়ে এভাবেই মৃত্যূ হল এক ফল বিক্রেতা গৃহবধূর। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ থানার নকুরতলা মোড় এলাকায়। মৃতের নাম ভানু মণ্ডল (২৯)।
এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় গাড়ির চালক ও খালাসি। লালবাগ সদর হাসপাতলে গৃহবধূর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে মৃতার দেহ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা রবি মণ্ডল।
মুর্শিদাবাদ থানার আইসি শ্যামল বিশ্বাস বলেন,'ওই বাসটিকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। চালক ও খালাসির খোঁজ চলছে।' স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, জিয়াগঞ্জের বিলকান্দি কলোনির বাসিন্দা ওই গৃহবধূ তাঁর স্বামীর সঙ্গে সাংসারিক বিবাদের জেরে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন। উপার্জনের জন্য বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে লালবাগ সদর হাসপাতলের পাশে ফলের দোকান খুলে বসেন তিনি। প্রতিদিনের মতো এ দিনও দোকানে যাওয়ার জন্য জিয়াগঞ্জ থেকে লালবাগে আসার জন্য জিয়াগঞ্জ-আসানসোল রুটের একটি বেসরকারি বাসে ওঠেন ওই তরুণী।
বাসের সহযাত্রীরা জানান,লালবাগ ঢোকার মুখে ওই ফল বিক্রেতা গৃহবধূর আচমকা শরীর খারাপ করতে শুরু করে। তার পরেই বাসের জানলা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে বমি করতে থাকেন তিনি। তখনই বেপরোয়া গতিতে ওই বাসটি চলতে শুরু করলে পাশের একটি ইলেকট্রিক পোলের ধাক্কা লাগে ভানুর মাথায়। ঘটনাস্থলেই ধড় থেকে মুণ্ডু ছিন্ন হয়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠেন বাসের যাত্রীরা। চারদিক রক্তে ভেসে যায়।
উত্তেজিত জনতা বাসের চালককে ধরে মারধর শুরু করে। কোনও রকমে সে পালিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে। খবর পেয়ে সেখানে যায় মুর্শিদাবাদ থানার বিশাল পুলিশ। ভানুর ছিন্নভিন্ন দেহাংশ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় লালবাগ হাসপাতালে।এদিন সন্ধ্যায় মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে মৃতার বাবা রবি মণ্ডল বলেন, 'মেয়েটা যে এইভাবেই চলে যাবে, ভাবতেই পারছি না।' মৃতার স্বামীকে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়েছে বলেই পুলিশ জানায়।