সপ্তমীর সকাল থেকেই প্রমাদ গোনেন ছেলে-বুড়োরা। এই বুঝি এসে পড়ল সে। গায়ে কালো পোশাক, হাতে বন্দুক, লাল টকটকে চোখ, মাথায় ফেট্টি দিয়ে হানা দেবেন গৃহস্থ বাড়িতে। দুর্গাপুজো এলেই কুলটিতে হানা দেয় রঘু ডাকাত।
গ্রামগঞ্জে নয়,একেবারে শহর বাজারে সে আসে বার্তা দিয়ে। প্রতি বছর নিয়ম করে আসে সপ্তমীর ডাকাত। এটাই ফি বছরের রেওয়াজ কুলটির কোলিয়ারি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে। বহুরূপী কীর্তন বেইদ ফুল্লরা ডাকাত হয়ে হানা দেন পুজোর প্রথমদিনে। কিন্তু বিজয়ার পর নন্দঘোষ গোয়ালার সাজে ফিরে যান। আজও গ্রামগঞ্জে পুজোর বার্তা নিয়ে বহুরূপী সেজে আসেন কীর্তন বেইদ। এক সের চাল, দশ টাকা, আর বিজয়ার মিষ্টি নিয়ে পাড়ি দেয় সে। তাঁর দেখা মিলবে ফের পরের বছর। শিউলি, কাশ আর পদ্মের সুবাসে যেমন আগমনীর আবাহন, তেমনই কয়লা খনি অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু গ্রামগুলিতে কীর্তন বহুরূপী মানেই দুর্গোৎসবের সূচনা।
সারা বছর ট্রেনে, বাসে ভিন রাজ্যে বা ভিন জেলায় বহুরূপী সেজে রুজি রোজগার করেন। কিন্তু পুজোর পাঁচটে দিন কীর্তন চলে আসেন নিজের এলাকায়। কীর্তনের বাড়ি আসানসোলের জগৎডিহি গ্রাম। কোলিয়ারি অধ্যুষিত বর্ধিষ্ণু গ্রামগুলিতে কীর্তনকে দেখা যায় শুধুমাত্র পুজোর পাঁচটা দিন। শেষদিন পরবী নিয়ে আবার ফিরে যান তিনি। ষষ্ঠীতে মহিরাবন,সপ্তমীতে রঘু ডাকাত, অষ্টমীতে মা কালি, নবমীতে শিব, দশমীতে নন্দঘোষ গোয়ালা। প্রতি বছর এটাই তাঁর বাঁধা রুটিন। বড়তোড়িয়া, মিঠানি, আলডিহি,বেজডিহি, পাটমোহনা, রাধানগর গ্রামে কীর্তন বহুরূপীর দেখা মেলে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত। শেষদিন গৃহস্থ্য় বাড়িতে চাল , মিষ্টি ,কিছু নগদ টাকা ও পুরোনো জামা কাপড় নিয়ে বিদায় নেয় সে। কীর্তন জানান, বংশ পরম্পরায় সে বহুরূপী। আয় তেমন নেই কিন্তু ভালোবেসে পেশা ছাড়তে পারেন না।
গ্রামবাসীদের মতে, কীর্তন এলেই পুজো পুজো মনে হয়। বিজয়ার সকালে সদর দরজায় মিষ্টি করে ডাক পড়ে কইগো মা কাকিমারা , 'দই খেয়েছেন দামটা দিন।' আরশা মিঠাই পরবী নিয়ে নন্দঘোষ ফিরে চলে যায় ছোট ছেলের হাত ধরে। আর গ্রামবাসীরা অপেক্ষায় থাকেন পরের বছরের সেই ডাকাত কিংবা মহিরাবনে অট্টাহাসির আওয়াজ শোনার। ওই হাসিই বার্তা দেবে আগামী শারদপ্রাতের।